Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
National News

ধারেই ধাক্কা, ইয়েস ব্যাঙ্কের ত্রাতা এসবিআই

বৃহস্পতিবারই ইয়েস ব্যাঙ্কের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে তুলে নিয়েছিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।

ছবি: পিটিআই।

ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০২০ ০৪:৩৯
Share: Save:

প্রথমে আইএল অ্যান্ড এফএস, ডিএইচএফএল-এর মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠান। তার পরে পিএমসি ব্যাঙ্ক। এ বার ইয়েস ব্যাঙ্ক। নরেন্দ্র মোদী জমানায় একের পর এক ব্যাঙ্ক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ভেঙে পড়ার ধারা অব্যহত। ফলে আর্থিক ব্যবস্থার ভিতই নড়বড়ে হয়ে গিয়েছে কি না, তা নিয়ে আরও এক বার প্রশ্ন উঠল।

ইয়েস ব্যাঙ্ককে ভরাডুবি থেকে উদ্ধার করতে স্টেট ব্যাঙ্ককে মাঠে নামানোর সিদ্ধান্ত আজ পাকা হয়ে গিয়েছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পরিকল্পনার খসড়া অনুযায়ী, বেসরকারি ইয়েস ব্যাঙ্কের ৪৯ শতাংশ মালিকানা কিনে নেবে রাষ্ট্রায়ত্ত স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া (এসবিআই)। সে জন্য তাদের প্রায় ১১,৭৬০ কোটি টাকা ঢালতে হবে।

বৃহস্পতিবারই ইয়েস ব্যাঙ্কের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে তুলে নিয়েছিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। গ্রাহকদের টাকা তোলা ও ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রেও শর্ত আরোপ হয়। আজ সকাল থেকেই টাকা তুলতে গিয়ে নাস্তানাবুদ হন ইয়েস ব্যাঙ্কের গ্রাহকরা। তাঁদের আশ্বস্ত করতে আজ অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বলেন, ‘‘সমস্ত আমানতকারীর টাকা সুরক্ষিত রয়েছে। আমি নিজে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সঙ্গে পরিস্থিতির উপর নজর রাখছি।’’

আরও পড়ুন: নতুন করে শুরু চান রিড

শুধু গ্রাহক নয়, আতঙ্কিত ইয়েস ব্যাঙ্কের ১৮ হাজারের বেশি কর্মীও। পরিস্থিতি সামলাতে সকাল থেকে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কর্তাদের সঙ্গে দফায় দফায় কথা বলেন অর্থমন্ত্রী। বৈঠক করেন স্টেট ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান রজনীশ কুমার, সেবির চেয়ারম্যান অজয় ত্যাগীর সঙ্গেও। এর পরেই বিকেলে পুনরুদ্ধার পরিকল্পনার খসড়া ঘোষিত হয়।

একই সঙ্গে ইয়েস ব্যাঙ্কের শীর্ষকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত ও আইনি ব্যবস্থার স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমি রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে বলেছি, এই পরিস্থিতি কী ভাবে তৈরি হল, তা খতিয়ে দেখতে। বিভিন্ন ব্যক্তির কী ভূমিকা ছিল, তা-ও দেখা হবে। নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারি ব্যবস্থা যথেষ্ট রয়েছে কি না, তা-ও দেখতে বলেছি। জানিয়ে

দিয়েছি, জরুরি ভিত্তিতে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে।’’ যাঁকে কেন্দ্র করে এত কাণ্ড, সেই ইয়েস ব্যাঙ্কের প্রতিষ্ঠাতা রাণা কপূরের বাড়িতে আজ তল্লাশি চালায় ইডি। রাণার অবশ্য দাবি, গত ১৩ মাস ধরে ব্যাঙ্কে কী চলছে, তিনি তার কিছুই জানেন না। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের চাপেই তাঁকে সিইও পদ থেকে সরতে হয়েছিল। এর পর নিজের শেয়ারও বেচে দেন তিনি।

অর্থ মন্ত্রক ও রিজার্ভ ব্যাঙ্কের লক্ষ্য, যে পর্যন্ত টাকা তোলার উপর কড়াকড়ি ও ঋণের উপর বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে, সেই ৩ এপ্রিলের মধ্যেই পুনরুজ্জীবনের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করে ফেলা। কিন্তু কীসের ভিত্তিতে এক মাসের মধ্যে ইয়েস ব্যাঙ্ককে চাঙ্গা করার আত্মবিশ্বাস মিলছে, তার কোনও ব্যাখ্যা অর্থমন্ত্রী দেননি। স্টেট ব্যাঙ্ক টাকা ঢাললে তার আর্থিক স্বাস্থ্য কেমন হবে, সে প্রশ্নেরও উত্তর দিতে চাননি তিনি। স্টেট ব্যাঙ্কের সঙ্গে এলআইসি বা কোনও বেসরকারি লগ্নি সংস্থাকে নামানো হবে কি না, তারও জবাব দিতে চাননি তিনি। প্রশ্ন উঠেছে, এখানেই শেষ, না কি ভবিষ্যতে আরও ব্যাঙ্ক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ভেঙে পড়তে চলেছে? নির্মলার জবাব, ‘‘আমি আগেই বলেছি, কোনও প্রতিষ্ঠানকেই খাদে পড়তে দেব না।’’

আর্থিক বিশ্লেষকদের মতে, অনিল অম্বানী গোষ্ঠী, এসেল গোষ্ঠীর মতো মোদী সরকারের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত সংস্থাকে ঋণ দিতেই ইয়েস ব্যাঙ্ক ভেঙে পড়েছে। ঋণের টাকা ফেরায়নি সংস্থাগুলি। বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছেন, ইয়েস ব্যাঙ্ক যে ডুবতে বসেছে, তা কি অর্থ মন্ত্রক ও রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এত দিন টের পায়নি? পেলেও চোখ বুজে বসেছিল কেন? প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম একে ‘নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার ব্যর্থতা’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।

এই প্রশ্নের মুখে আজ নির্মলা নিজেই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের হয়ে ব্যাট ধরেন। ফিরিস্তি দেন, ২০১৭ থেকেই রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ও অর্থ মন্ত্রক মিলে ইয়েস ব্যাঙ্কে নজরদারি চালাচ্ছে, বেনিয়ম দেখা গেলে কী ভাবে জরিমানা করা হয়েছে, প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও রাণা কপূরকে কী ভাবে সিইও-র পদ থেকে সরতে বাধ্য করা হয়েছে। একই সুরে মুম্বইতে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর শক্তিকান্ত দাসের দাবি, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সঠিক সময়েই হস্তক্ষেপ করেছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Yes Bank Crisis SBI Yes Bank
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy