প্রতীকী ছবি।
দেশ জোড়া বিক্ষোভের মুখে এখন মোদী সরকারকে ঢোঁক গিলতে হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু আদপে তাদের বুক ঠুকে করা জাতীয় নাগরিক পঞ্জির (এনআরসি) ঘোষণা ঘুম কেড়েছে বহু সাধারণ মানুষের। আর তাঁদের সেই প্রতিবাদের মিছিলে পা-মেলানো বিদ্বজ্জন থেকে অর্থনীতির অধ্যাপক— অনেকেরই যুক্তির বুনোটে ক্রমশ দানা বাঁধছে পাল্টা প্রশ্ন। তা হল, যে সরকার দেশ-দশের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে নাগরিক পঞ্জি তৈরিতে এত আগ্রহী, সকলের হাতে কাজ জোগানোর প্রতিজ্ঞায় তারা কর্মহীনদের তালিকা তৈরিতে উৎসাহী নয় কেন? যেখানে দেশে বেকারত্বের হার সাড়ে চার দশকে সর্বোচ্চ বলে মেনে নিয়েছে সরকারি সমীক্ষাই!
ভোটার তালিকা, রেশন কার্ড, আধার, জনগণনা— বিভিন্ন সূত্রে আমজনতার তথ্য সরকারের ঘরে আছে ঠিকই। কিন্তু দেশে কাজের বাজারের ছবি ঠিক কেমন, তার স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায় না এর কোনটি থেকেই। সমাজকর্মী যোগেন্দ্র যাদবের পরামর্শ, ‘‘সবার আগে জনগণনার প্রশ্ন পাল্টাক কেন্দ্র। ঘরে-ঘরে জিজ্ঞাসা করা হোক, কাজ আছে কি না। থাকলেও তাঁরা অন্য কাজের চেষ্টা করছেন কি? করলে, কেন? এখনকার কাজে কি হেঁশেল চলে না? তার ভিত্তিতে তৈরি হোক প্রাথমিক তালিকা।’’ এনআরসি নয়, এনআরইউ (ন্যাশনাল রেজিস্ট্রার অব আনএমপ্লয়মেন্ট বা জাতীয় বেকারত্ব পঞ্জি) তৈরিই এখন দিল্লির পাখির চোখ হওয়া উচিত, মত তাঁর।
জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক জয়তী ঘোষের কথায়, ‘‘যাঁদের হাতে আদৌ কাজ নেই ও যাঁরা ন্যূনতম আয়ের লক্ষ্যে অন্য কাজ খুঁজছেন, তাঁরা সকলেই কিন্তু আদপে কর্মহীন। দেশে বেকারত্বের সমস্যা সমাধানে সবার আগে এঁদের চিহ্নিত করা জরুরি।’’ দিল্লি স্কুল অব ইকনমিক্সের অর্থনীতির অধ্যাপক দিব্যেন্দু মাইতির প্রশ্ন, ‘‘নোটবন্দি থেকে জিএসটি চালু— সব ক্ষেত্রেই কেন্দ্র বিভিন্ন সময়ে দাবি করেছে যে, অসংগঠিত ক্ষেত্রের কর্মকাণ্ডকে আতসকাচের নীচে আনতে ওই সব পদক্ষেপ। তা হলে কাজের বাজারের ক্ষেত্রে সেই যুক্তি খাটবে না কেন?’’
আরও পড়ুন: হলমার্কিং ব্যবস্থায় কমবে সোনার গ্রেড
জেএনইউয়ের প্রতিবাদ মিছিল থেকে জামিয়ার সমাবেশ— প্রায় সর্বত্র কলেজ পেরিয়ে কাজ না-পাওয়ার আশঙ্কা উঠে এসেছে পড়ুয়াদের স্লোগানে। এই অবস্থায় জয়তীর যুক্তি, কর্মহীনদের তালিকা ঠিক ভাবে তৈরি হলে, তার ভিত্তিতে গ্রামে কাজের অধিকারের প্রকল্প প্রসারিত করতে পারবে কেন্দ্র। শহরে বেকারত্বের চড়া হারের কথা মাথায় রেখে তা চালু করতে পারবে সেখানে। দিব্যেন্দুর দাবি, উন্নত দুনিয়ায় যে ভাবে বেকার-ভাতা দেওয়া হয়, কেন্দ্র সেই ধরনের সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প চালুর ইঙ্গিত দীর্ঘ দিন ধরেই দিচ্ছে। কিন্তু বেকারের তালিকা হাতে না-পেলে তা করা শক্ত। অসম্ভব ওই খাতে কত টাকা তুলে রাখতে হবে, সেই হিসেব কষাই।
বিবর্ণ ছবি
• জাতীয় নমুনা সমীক্ষা দফতরের (এনএসএসও) পরিসংখ্যানেও নোটবন্দির ঠিক পরে ২০১৭ সালে বেকারত্বের হার সাড়ে চার দশকে সর্বোচ্চ (৬.১%)।
• গ্রামে প্রকৃত (মূল্যবৃদ্ধি বাদে) আয় বাড়ছে না বললেই চলে।
• কম বেতনের সরকারি চাকরিতেও উপচে পড়ছে পিএইচডি, এমবিএ, ইঞ্জিনিয়ার, স্নাতকোত্তরদের আবেদন।
• নতুন কাজের সুযোগ তৈরি তো দূর, গাড়ি শিল্প-সহ বেশ কিছু ক্ষেত্রে কাজ গিয়েছে কয়েক লক্ষ মানুষের।
• সিএমআইই-র পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই মুহূর্তে দেশে কর্মহীন প্রায় ৯ কোটি। কিন্তু যোগ্যতার তুলনায় কম দক্ষতার কাজ করতে বাধ্য হওয়ার সমস্যার কবলে অন্তত ২০-২২ কোটি মানুষ বলে বিশেষজ্ঞদের অনুমান।
যোগেন্দ্রর দাবি, এনআরসি-র ‘জেদ’ ছেড়ে ওই তালিকা তৈরিতে মন দিলে, বেকারত্বের সমস্যা সমাধানে তা বড় অস্ত্র হতে পারে। কারণ, ওই তালিকা তৈরির পরে তার মধ্যে কে, কোন বয়সের ও কোন ধরনের কর্মহীন (পূর্ণ সময়ের না আংশিক, স্বেচ্ছায় না কি কাজ না-পেয়ে ইত্যাদি), তাঁদের কার কী দক্ষতা রয়েছে, এই সব কিছুর হদিশ পাওয়া সম্ভব। তার ভিত্তিতে কর্মহীনদের জন্য কাজের সুযোগ তৈরি করা হোক। কারও জন্য তা না-পারলে, ভাবা হোক বেকার-ভাতার কথা।
আরও পড়ুন: আশঙ্কায় বণিকসভা, দাবি অমিত মিত্রের
দেশে ‘এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জ’ থাকলেও, নাম লেখাতে যান না অনেকে। জনগণনার সময়েও সরাসরি কাজ না-থাকার কথা কবুল করতে বাধে বহু জনেরই। তাই সবার আগে প্রশ্নে বদল এনে পূর্ণাঙ্গ বেকারত্ব-পঞ্জি তৈরি এবং নিয়মিত তাতে নতুন পরিসংখ্যান যোগ করার পক্ষেই সওয়াল করছেন বিশেষজ্ঞেরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy