মে মাসের প্রথম সপ্তাহে লগ্নিকারীরা বাজারে এলআইসি-র প্রথম শেয়ার বিক্রির (আইপিও) যজ্ঞ নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন, এমনটাই ভাবা হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ সকলের নজর ঘুরল অন্য দিকে, যখন বিনা নোটিসে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক রেপো রেট এক লাফে ৪০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে বসল। এলআইসি-র আইপিও খুলল এবং রেপো রেট বাড়ল একই দিনে। মূল্যবৃদ্ধিতে দ্রুত লাগাম পরানোর তাগিদে সুদের পাশাপাশি নগদ জমার অনুপাত (সিআরআর)-ও সটান ৪% বাড়িয়ে ৪.৫০% করল আরবিআই। সুদের হার যে বাড়ানো হতে পারে, জানত শেয়ার বাজার। তবে এপ্রিলে যখন তা বাড়ানো হয়নি, তখন ধরে নেওয়া হয়েছিল শীর্ষ ব্যাঙ্ক হয়তো জুনের ঋণনীতি বৈঠকে সেই সিদ্ধান্ত নেবে। কিন্তু জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির বহর দেখে আরও এক মাস অপেক্ষা করতে পারল না তারা। আচমকা এই পদক্ষেপ, তা-ও একলপ্তে ৪০ বেসিস পয়েন্ট, নিতে পারেননি লগ্নিকারীরা। তাঁরা প্রস্তুত ছিলেন না।
এখানেই শেষ নয়। একই লক্ষ্যে, একই দিনে (বুধবার) আমেরিকার শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফেডারাল রিজ়ার্ভ ৫০ বেসিস পয়েন্ট সুদ বাড়ায়। পরের দিন ব্রিটেনে ব্যাঙ্ক অব ইংল্যান্ড বাড়ায় ২৫ বেসিস পয়েন্ট। আর্থিক মন্দা নিয়ে আশঙ্কার বার্তাও দেয়। এত কিছু একসঙ্গে সামলাতে না পেরে অস্থির শেয়ার বাজারে ধস নামে। গত সপ্তাহে সেনসেক্স খুইয়েছে ২৫১৬ পয়েন্ট। গত বছরের সর্বোচ্চ ৬১,৭৬৬ অঙ্ক (১৮ অক্টোবর) থেকে নেমেছে ৫৪,৮৩৬-এ। পতন প্রায় ৭০০০ পয়েন্ট।
পতনের অন্যতম কারণ রাষ্ট্রায়ত্ত জীবন বিমা সংস্থা এলআইসি-র আইপিও-ও। সরকার এর মাধ্যমে প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা তুলতে চাইছে। এত বড় আইপিও-তে শেয়ার কেনার জন্য তিন গুণ আবেদন জমা পড়লে কম-বেশি ৬০ হাজার কোটি টাকা আটকে থাকবে ১৬ মে পর্যন্ত। এই পরিমাণ টাকা হঠাৎ বাজার থেকে সরে গেলে কিছুটা দুর্বলতা দেখা দেবেই।
পণ্যের দাম যে হারে বাড়ছে, তাতে আশঙ্কা এপ্রিলে খুচরো মূল্যবৃদ্ধি হয়তো ৮% ছুঁয়েছে। সম্ভবত তাই জুন পর্যন্ত অপেক্ষা করেনি আরবিআই। করোনার আগে রেপো রেট ছিল ৫.১৫%। সেখানে পৌঁছতে গেলে সুদের হার বাড়াতে হবে আরও ৭৫ বেসিস পয়েন্ট। ফলে জুন এবং তার পরেও তা বাড়ানো হতে পারে।
দেখে নেওয়া যাক, অর্থনীতিতে রেপো রেট এবং সিআরআর বাড়ানোর প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে—
* সিআরআর বা নগদ জমার অনুপাত ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়ানোয় বাজার থেকে ৮৭ হাজার কোটি টাকা চলে যাবে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে। এতে বাজারে নগদ কমবে।
* রেপো রেট বাড়ায় বাড়ি-গাড়ি-সহ বিভিন্ন ঋণে ৪০ বেসিস পয়েন্ট পর্যন্ত সুদ বাড়বে। ক্ষতিগ্রস্ত হবে সেই সব শিল্প এবং ঋণগ্রহীতারা।
* নগদ টাকার জোগান কমলে দুর্বল হবে শেয়ার বাজার।
* সুদ বাড়ায় শিল্পে উৎপাদিত পণ্যের দাম বাড়বে। ফলে কমবে চাহিদা।
* বন্ড ইল্ড বাড়বে, যা এরই মধ্যে ছুঁয়েছে ৭.৪৫%।
* সুদ বাড়বে ব্যাঙ্ক এবং অন্যান্য আর্থিক সংস্থার জমা প্রকল্পে।
* বন্ড ইল্ড বাড়লে সরকার বাজার থেকে যে বিপুল ঋণ করবে, তার সুদ বাবদ খরচ অনেকখানি বেড়ে যাবে।
* সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থা বন্ড ইসু করে তহবিল তুলতে চাইলে সুদ খাতে বেশি টাকা গুনতে হবে।
* ছোট থেকে বড়, বিভিন্ন লগ্নিকারীর কাছে বন্ডে অথবা বন্ড ফান্ডে বিনিয়োগ আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে।
* করোনাকালে মানুষকে সুবিধা দিতে সরকার যে আর্থিক ত্রাণ ঘোষণা করেছিল, তার সিংহভাগই ছিল সহজ শর্তে ঋণ পাওয়ার সুবিধা। যারা এই প্রকল্পে ধার নিয়েছিলেন, তাঁদের উপরে চাপবে বাড়তি সুদের বোঝা।
* ভারত, আমেরিকা এবং ব্রিটেনে সুদ বাড়ায় ডলারের দাম-ও বাড়বে। ভারত অনেক বিদেশি লগ্নি হারাতে পারে।
* শেয়ার বাজার টানা দুর্বল থাকলে কমতে পারে ফান্ডে লগ্নিও। বিশেষত ব্যাঙ্ক-ডাকঘরের জমায় সুদ বাড়লে।
* জুনে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক রেপো আরও বাড়ালে জুলাই থেকে বাড়ানো হতে পারে স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পের সুদ-ও।
* ব্যাঙ্ক, ডাকঘর বা স্বল্প সঞ্চয়ে সুদ বাড়লে দীর্ঘ দিন বাদে একটু হাঁফ ছাড়বেন ওই আয়ের উপরে নির্ভর অসংখ্য মানুষ। বিশেষত প্রবীণরা।
(মতামত ব্যক্তিগত)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy