বিয়ের গয়না থেকে বাড়ির দলিল— ব্যাঙ্কের লকারে রেখে নিশ্চিন্ত হওয়ার জো কি তবে নেই? যদি তা-ই হয়, তবে তার ভাড়া আর গুনব কেন? তথ্যের অধিকার বলে করা প্রশ্নে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের দেওয়া উত্তর রবিবার সামনে আসার পর থেকে এই প্রশ্ন ঘুরপাক খেয়েছে গ্রাহকদের মধ্যে। অনেকেই জানতে চান, লকার থেকে দামি বা জরুরি জিনিস খোয়া গেলে কেন ক্ষতিপূরণ দেবে না ব্যাঙ্ক?
উত্তরে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলির যুক্তি, প্রথমত এই শর্ত নতুন নয়। অনেক আগে থেকেই তা লেখা থাকে লকার ভাড়ার নথিতে। আর দ্বিতীয়ত, গ্রাহক লকারে কী রাখছেন, তা তো ব্যাঙ্কের জানা থাকে না। ফলে তার কিছু খোয়া যাওয়ার অভিযোগ উঠলে তারা ক্ষতিপূরণ দেবে কী ভাবে?
স্টেট ব্যাঙ্কের বেঙ্গল সার্কেলের সিজিএম পার্থ সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘আমাদের পক্ষে জানাই সম্ভব নয় যে, লকারে গ্রাহক কী রাখছেন। তাই পরে তিনি যদি বলেন যে, এত টাকার জিনিস খোয়া গিয়েছে, তা মেনে ক্ষতিপূরণ দেওয়া অসম্ভব।’’
পার্থবাবুর যুক্তি, লকারের দু’টি চাবি। একটি (মাস্টার কি) থাকে ব্যাঙ্কের কাছে। অন্যটি লকার ব্যবহারকারীর জিম্মায়। একসঙ্গে দু’টি চাবি ব্যবহার করে তবেই লকার খোলা যায়। কেউ লকার খুলতে এলে, ব্যাঙ্কের অফিসার প্রথমে ‘মাস্টার কি’ ঘুরিয়েই লকার রুম থেকে বেরিয়ে আসেন। এর পরে চাবি ঘোরান গ্রাহক। তাই লকারে কী আছে, তা ব্যাঙ্কের জানার কথা নয়। একই মতের শরিক আইডিবিআই ব্যাঙ্কের এগ্জিকিউটিভ ডিরেক্টর সৌম্য শঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়।
বন্ধন ব্যাঙ্কের কর্ণধার চন্দ্রশেখর ঘোষের মতে, ‘‘লকারে কত টাকার জিনিস আছে, তা নথিবদ্ধ হয় না। তাই কেউ মিথ্যে করে কয়েক লক্ষ টাকার গয়না খোয়া যাওয়ার কথা বললে কী হবে? এই দায় ব্যাঙ্কের পক্ষে নেওয়া অসম্ভব।’’ কিন্তু তা হলে গ্রাহক লকারের ভাড়া গুনবেন কেন? চন্দ্রশেখরবাবুর যুক্তি, ‘‘ব্যাঙ্ক লকার ও জমা টাকার জন্য যথাসম্ভব নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করে। কিন্তু তা সত্ত্বেও অঘটন ঘটতে পারে। তবে তা বিরল।’’
ইউবিআইয়ের প্রাক্তন সিএমডি ভাস্কর সেন বলেন, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নিয়ম মেনে লকার-সহ ব্যাঙ্কের স্ট্রং-রুম তৈরি করতে হয়। তা ছাড়া, ব্যাঙ্কের শাখার নিরাপত্তায় নিতে হয় ব্যবস্থা। সে বিষয়ে ত্রুটি থাকলে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ সমস্যায় পড়তে পারেন। তবে আগুন লেগে লকার নষ্ট হলেও দায় ব্যাঙ্কের নয় বলে জানান তিনি।
অল ইন্ডিয়া ব্যাঙ্ক এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রাজেন নাগরের দাবি, নিরাপত্তায় ঘাটতির দরুন চুরি বা অঘটন ঘটলে, তার দায় ব্যাঙ্কের উপর বর্তাতে পারে। তিনি জানান, ‘‘৩ বছর আগে উত্তর ভারতে পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কে লকারে ডাকাতি হয়। গ্রাহকরা ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করেন। যা এখনও চলছে।’’
গ্রাহকের চিন্তা
• লকারে রাখা সোনা-দানা, জরুরি কাগজ কিংবা দামি জিনিস খোয়া গেলে, তার দায় গ্রাহকেরই। সে জন্য কোনও ক্ষতিপূরণ দেবে না ব্যাঙ্ক
• অনেকের প্রশ্ন, তা হলে আর লকার-ভাড়া গুনব কেন?
ব্যাঙ্কের দাবি
• এ ক্ষেত্রে ব্যাঙ্ক-গ্রাহকের সম্পর্ক অনেকটা বাড়িওয়ালা-ভাড়াটিয়ার মতো। লকারের জিনিস সুরক্ষিত রাখতে ব্যাঙ্ক চেষ্টা করবে ঠিকই। কিন্তু তা বলে ক্ষতিপূরণ গুনবে না
• এ ভাবে দায় নেওয়া সম্ভবও নয়। কার লকারে কী আছে, তা ব্যাঙ্কের জানা নেই। কিছু খোয়া যাওয়ার অভিযোগ উঠলেই তাই ক্ষতিপূরণ কী ভাবে?
• গ্রাহককে লুকিয়ে এমন শর্ত চাপানো হয় না। তা লেখা থাকে লকার ভাড়ার চুক্তিপত্রের মধ্যেই
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy