মূল্যবৃদ্ধি ফের মাত্রাছাড়া হওয়ার সম্ভাবনার সঙ্গে আপোস করে সুদ কমানোয় তাড়াহুড়ো করতে রাজি নন রঘুরাম রাজন। শুক্রবার এ কথা ফের স্পষ্ট করে দিয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক গভর্নর বলেন, তাঁর প্রধান কাজ মূল্যবৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা। এখন, ভবিষ্যতেও।
একই সঙ্গে শীর্ষ ব্যাঙ্কের কর্ণধারের সতর্কবার্তা, বৃদ্ধির হার ত্বরান্বিত করার চেষ্টা ভাল। কিন্তু শুধু তার পিছনেই একবগ্গা দৌড় দীর্ঘ মেয়াদে ভাল না-ও হতে পারে। কারণ, কম সুদের অস্ত্র প্রয়োগে হাসিল করা বৃদ্ধির হার অনেক সময়ই ক্ষণস্থায়ী হয়। বরং দীর্ঘ মেয়াদে সেই হারকে উঁচু তারে বেঁধে রাখতে পারে সংস্কার।
অনেকে মনে করছেন, এর মাধ্যমে সুদ কমাতে শীর্ষ ব্যাঙ্কের উপর তৈরি হওয়া প্রবল চাপ কাটানোর চেষ্টা করেছেন রাজন। ইঙ্গিত দিয়েছেন, ২৯ সেপ্টেম্বরের ঋণনীতিতে সুদ ফের অপরিবর্তিত রাখতে পারেন তিনি। কিন্তু তেমনই আবার অনেকের মতে, সুদ হয়তো রাজন কমাবেন। কিন্তু তার আগে তা ঘিরে তৈরি হওয়া প্রত্যাশা কিছুটা কমিয়ে রাখতে চাইলেন তিনি।
সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, খুচরো ও পাইকারি বাজারে মূল্যবৃদ্ধির হার তলানিতে। তার উপর গত কাল রাতেই আপাতত সুদ না-বাড়ানোর কথা ঘোষণা করেছে মার্কিন শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফেডারেল রিজার্ভ। এই পরিস্থিতিতে বৃদ্ধির চাকায় গতি ফেরাতে সুদ কমানোর কথা রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে বারবার বলছে কেন্দ্র ও শিল্পমহল। এমনকী এ দিনও ঘুরিয়ে ফের সে কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। সুদ কমানোর সুযোগ রিজার্ভ ব্যাঙ্কের রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন স্টেট ব্যাঙ্কের কর্ণধার অরুন্ধতী ভট্টাচার্য। এ মাসেই ৫০ বেসিস পয়েন্ট সুদ কমানোর সুযোগ আছে বলে দাবি করেছেন নীতি আয়োগের ভাইস চেয়ারম্যান অরবিন্দ পানগড়িয়াও। অনেকেরই ধারণা, কেন্দ্র-সহ বিভিন্ন মহলের এই প্রবল চাপের মুখে হয়তো কিছুটা হলেও সুদ কমাবেন রাজন।
যেমন, এ দিনই কলকাতায় সিআইআই আয়োজিত ব্যাঙ্কিং কলোকিয়ামে ওই শিল্পের অনেকে বলেন, আসন্ন ঋণনীতিতে ২৫ বেসিস পয়েন্ট সুদ ছাঁটাই করতে পারে শীর্ষ ব্যাঙ্ক। কারণ হিসেবে ইয়েস ব্যাঙ্কের মুখ্য অর্থনীতিবিদ শুভদা রাওয়ের যুক্তি, ‘‘মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে। বৃষ্টি কিছুটা কম হলেও সম্ভবত সে ভাবে মাথাচাড়া দেবে না খাদ্যপণ্যের দামও।’’ একই মতের শরিক ব্যাঙ্ক অব বরোদার এমডি-সিইও রঞ্জন ধাওয়ান। তবে শুধু ২৫ বেসিস পয়েন্ট সুদ ছাঁটাইয়ে অর্থনীতির ছবি সে ভাবে বদলাবে না বলেই তাঁর মত।
অবশ্য স্রেফ চাপের মুখে সুদ কমানোর পক্ষপাতী যে তিনি নন, তা স্পষ্ট রাজনের কথাতেই। ব্রাজিলের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ২০১০ সালেও যে দেশে বৃদ্ধির হার ছিল ৭.৬%, এ বছর তার অর্থনীতি সঙ্কুচিত হয়েছে ৩%। কারণ, ২০০৮ সালের বিশ্বজোড়া মন্দার পরে অর্থনীতিকে তড়িঘড়ি চাঙ্গা করতে ত্রাণ প্রকল্পে বিপুল অঙ্ক ঢেলেছে ব্রাজিল সরকার। একই সঙ্গে সুদ কমাতে প্রবল চাপ তৈরি করা হয়েছিল সে দেশের শীর্ষ ব্যাঙ্কের উপর। ফলে মাত্রা ছাড়িয়েছে মূল্যবৃদ্ধি। ক্ষমতার বাইরে ধার নিয়ে ফেলে এখন তা শোধ দিতে খাবি খাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। সুদ কমিয়ে বৃদ্ধির চড়া হার তাড়া করার মাসুল গুনছে লাতিন আমেরিকার দেশটি।
সেই কারণে দীর্ঘ মেয়াদে বৃদ্ধির জন্য সংস্কারে জোর দিচ্ছেন রাজন। স্বাগত জানিয়েছেন দেউলিয়া বিধি বদলে কেন্দ্রের উদ্যোগকে। তাঁর মতে, টালমাটাল বিশ্ব অর্থনীতির সমুদ্রে ভারত যেন শান্ত দ্বীপ। সুদ কমানোর তাড়ায় সেই শান্তি নষ্ট করতে রাজি নন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy