রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বাড়তি ভাঁড়ারের ভাগ কেন্দ্রকে দেওয়া নিয়ে চলছিল টানাপড়েন। অবশেষে তাতে দাঁড়ি টেনে সোমবার আরবিআই বিবৃতিতে জানাল, ১.৭৬ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি সরকারকে দিতে রাজি তারা। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে জালান কমিটির সুপারিশ মেনে। বিশেষজ্ঞদের দাবি, আরবিআইয়ের ঘর থেকে এত বড় তহবিল কখনও ঢোকেনি রাজকোষে। তবে এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন। তাঁর সতর্ক বার্তা এর বিরূপ প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতে।
সংশ্লিষ্ট মহলে জল্পনা, অর্থনীতি চাঙ্গা করতে যে সব পদক্ষেপের কথা বলছেন অর্থমন্ত্রী, সেই খরচের উৎস কি আসলে হতে চলেছে এই ভাঁড়ারই! ঘুরে দাঁড়াতে শিল্প বার বার ত্রাণের আর্জি জানাচ্ছে কেন্দ্রের কাছে। অথচ রাজকোষ ঘাটতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য খরচ সামলাতে গিয়ে সরকারের টানাটানি অবস্থা। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বাড়তি ভাঁড়ার সেই সমস্যারই সুরাহা করবে বলে মনে করছেন অনেকে।
• যা নিয়ে এত বিতর্ক, দড়ি টানাটানি, শেষমেশ সেই ভাঁড়ারের ভাগ কেন্দ্রকে দিতে রাজি হল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। এ নিয়ে বিমল জালান কমিটির সুপারিশ মেনে নিল শীর্ষ ব্যাঙ্কের কেন্দ্রীয় বোর্ড। যার দরুন কেন্দ্রের প্রাপ্তি ১,৭৬,০৫১ কোটি টাকা! রিজার্ভ ব্যাঙ্কের দাবি, এতে আদৌ টোল খাবে না তাদের ঝুঁকি সামাল দেওয়ার ক্ষমতা। কিন্তু তার পরেও প্রশ্ন উঠছেই।
রাজি শীর্ষ ব্যাঙ্ক
• ভাঁড়ার ভাগে প্রাক্তন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর বিমল জালানের নেতৃত্বাধীন কমিটির সুপারিশ মানল শীর্ষ ব্যাঙ্ক।
• ঠিক হল, আপাতত কেন্দ্রকে ১,৭৬,০৫১ কোটি টাকা দেবে তারা।
• এর মধ্যে ২০১৮-১৯ সালের জন্য ১,২৩,৪১৪ কোটি টাকা যাবে ব্যাঙ্কের উদ্বৃত্ত (সারপ্লাস) থেকে। অবশ্য এর মধ্যে ২৮,০০০ কোটি টাকা অগ্রিম ডিভিডেন্ড হিসেবে দিয়ে দেওয়া হয়েছে ইতিমধ্যেই। হিসেব রয়েছে বাজেটে।
• বাকি ৫২,৬৩৭ কোটির উৎস ঝুঁকি সামলাতে তুলে রাখা টাকা (ইকনমিক ক্যাপিটাল ফ্রেমওয়ার্কের আওতায়)।
কেন্দ্রের ঘরে কোন যুক্তিতে
কমিটির সুপারিশ
• শীর্ষ ব্যাঙ্কের হিসেবের খাতায় থাকা মোট অঙ্কের অন্তত ৫.৫% থেকে ৬.৫% পর্যন্ত রিয়েলাইজ়ড ইকুইটি হিসেবে থাকা জরুরি। অর্থাৎ, ওই টাকার সংস্থান থাকতে হবে বাস্তবে। কী বেচলে কত আসতে পারে, শুধু সেই হিসেবে নয়।
বোর্ডের সিদ্ধান্ত
• এখন শীর্ষ ব্যাঙ্কের ঘরে ওই খাতে রয়েছে ৬.৮%। এ বার তা ৫.৫ শতাংশে নামিয়ে এনেই ৫২,৬৩৭ কোটি টাকা যাচ্ছে কেন্দ্রের ঘরে।
কমিটির সুপারিশ
• তত্ত্বগত ভাবে ২০১৯ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সমস্ত ঝুঁকি মেপে করা হিসেব অনুযায়ী, হিসেবের খাতার অন্তত ২০% থেকে ২৪.৫% থাকতে হবে ঝুঁকি সামাল দিতে তুলে রাখা টাকার কুঠুরিতে (অর্থাৎ, ইকনমিক ক্যাপিটাল লেভেলস)।
বোর্ডের সিদ্ধান্ত
• এখন শীর্ষ ব্যাঙ্কের ঘরে ‘ওই সিন্দুকে’ রয়েছে ২৩.৩%। এই মুহূর্তে ঝুঁকি সামাল দেওয়া পুরোপুরি আয়ত্তের মধ্যে থাকায় ওই খাতে তুলে রাখা পুরো উদ্বৃত্তই (কার্যত ২০ শতাংশের উপরের পুরোটা) তুলে দেওয়া হবে কেন্দ্রের হাতে। যার পরিমাণই ১,২৩,৪১৪ কোটি টাকা।
গোড়ার তর্ক কেন্দ্রের যুক্তি
• ডিভিডেন্ড হিসেবে মুনাফার ভাগ তো রিজার্ভ ব্যাঙ্ক দেয়ই। তার সঙ্গে নিজেদের ভাঁড়ারে থাকা ‘বিপুল টাকাকড়ি’র একটি অংশও আসা উচিত কেন্দ্রের কোষাগারে।
• ডলার, সোনা ইত্যাদি মিলিয়ে তার মোট অঙ্ক শীর্ষ ব্যাঙ্কের প্রায় ২৫%-২৭%। অথচ বাকি দুনিয়া মনে করে যে তা ১৬%-১৭% থাকাই যথেষ্ট। ফলে ওই বাড়তি সম্পত্তির কতটা কেন্দ্র ও রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মধ্যে কার কাছে থাকবে, সেই সংক্রান্ত নিয়ম সংশোধন হওয়া জরুরি বলে জানিয়েছিল তারা।
শুরুতে ব্যাঙ্কের আপত্তি
• গোড়ায় এই প্রস্তাবে আপত্তি ছিল শীর্ষ ব্যাঙ্কের। যুক্তি, তাদের ওই সম্পত্তিতে হাত না দেওয়াই ভাল। কারণ, অর্থনীতিতে আসা ঝড়ঝাপ্টা সামাল দিতে আর্থিক ভাবে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের শক্তপোক্ত থাকা একান্ত জরুরি।
• তা ছাড়া, সম্পদের যে অংশ শীর্ষ ব্যাঙ্ক লেনদেন করেছে, শুধু তার টাকাই সত্যি তাদের খাতায় রয়েছে (রিয়েলাইজ়ড ইকুইটি)। কিন্তু বাকি সম্পদের (তা সে সোনা হোক বা বন্ড) দাম ওঠা-নামা করতে পারে যে কোনও সময়ে। ফলে এখনকার দরের ভিত্তিতে উদ্বৃত্তের অঙ্ক কষে ভাঁড়ারের ভাগ কেন্দ্রকে দেওয়া যায় কি?
সুতরাং কমিটি
• এই পরিস্থিতিতে পথ খুঁজতেই গত বছর রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর বিমল জালানের নেতৃত্বে তৈরি হয় ছয় সদস্যের কমিটি।
• সম্প্রতি তাদের পেশ করা রিপোর্টই গৃহীত হওয়ার কথা জানাল শীর্ষ ব্যাঙ্কের বোর্ড।
কিন্তু এখনও প্রশ্ন
• চাহিদা তলানিতে। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে অর্থনীতির। অথচ তাকে চাঙ্গা করতে সরকারি ব্যয় বাড়াতে গেলেই রাজকোষ ঘাটতি মাত্রাছাড়া হওয়ার আশঙ্কা। এই সঙ্কট সামাল দিতে কি শীর্ষ ব্যাঙ্কের ভাঁড়ারের ভাগ ব্যবহার করবে কেন্দ্র?
• গাড়ি শিল্প সমেত প্রায় সব শিল্পই বেহাল। কাজ খোয়াচ্ছেন বহু মানুষ। শিল্প মহল দাবি তুলেছে ১ লক্ষ কোটি টাকার ত্রাণ প্রকল্পের। এই টাকাতেই কি তা দেওয়ার কথা ভাববে সরকার?
• প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন-সহ অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, একমাত্র বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ককে পুঁজি জোগানো ছাড়া হাত দেওয়া উচিত নয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ভাঁড়ারের টাকায়। কেন্দ্র তা মাথায় রাখবে কি?
• বিশ্বজোড়া ভয়াল মন্দার মতো সঙ্কট যদি আছড়ে পড়ে, তা সামাল দিতে যথেষ্ট টাকা শীর্ষ ব্যাঙ্কের থাকবে তো?
• এতে ‘হ্যাঁ’ বলবেন না বলেই কি গভর্নর ও ডেপুটি গভর্নর পদ থেকে সরলেন উর্জিত পটেল ও বিরল আচার্য? এর পরে শীর্ষ ব্যাঙ্কের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের প্রশ্ন আরও জোরালো হবে কি?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy