রাজ্যের লক্ষ্য ছিল, ২০২০ সাল নাগাদ তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে দেশে প্রথম তিনের মধ্যে জায়গা করে নেওয়া। ব্যবসা ও কর্মী সংখ্যা, দুইয়ের নিরিখেই। অথচ সেই লক্ষ্য ছোঁয়া দূর অস্ত্, তা চলে গিয়েছে আরও দূরে। কারণ, এই শিল্পে লগ্নির ক্ষেত্রে যে ‘ইনসেন্টিভের’ (লগ্নির করলে পাওয়া আর্থিক সুবিধা প্রকল্প) সুবিধা দেয় রাজ্য, এই মুহূর্তে কার্যত তা ভোঁতা হয়ে পড়ে রয়েছে। পুরনো প্রকল্পের মেয়াদ শেষ। নতুন প্রকল্প এখনও ফাইলবন্দি। শিল্প মহলের আক্ষেপ, আর্থিক প্রকল্পের সুবিধা না দেখাতে পারলে তথ্যপ্রযুক্তিতে আগ্রহী লগ্নিকারীরা এ রাজ্যে পা রাখবেন কেন? বিশেষত পুঁজি টানার প্রতিযোগিতায় অন্য রাজ্যগুলির বাজি যেখানে এই ইনসেন্টিভই!
সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, মাস দুয়েক আগে পশ্চিমবঙ্গকে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের গন্তব্য হিসেবে তুলে ধরতে পুণে গিয়েছিল এক প্রতিনিধিদল। রাজ্যের মেধা সম্পদ, সামাজিক ও অন্যান্য পরিকাঠামোগত সুবিধা-সহ সার্বিক শিল্পমুখী পরিবেশের ছবি লগ্নিকারীদের সামনে তুলে ধরেছিল তারা। কিন্তু সেই সময় অবধারিত ভাবে প্রশ্ন ওঠে, পুঁজি ঢাললে কী ধরনের আর্থিক সুবিধা পাবে সংস্থাগুলি, তা নিয়েও। যার কোনও উত্তর ছিল না ওই প্রতিনিধিদের কাছে। তার পরেই রাজ্যে এই শিল্পে লগ্নি আসা নিয়ে তৈরি হয়েছে উদ্বেগ ও অনিশ্চয়তা। তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলির সংগঠন ন্যাসকমের পূর্বাঞ্চলীয় কর্তা নিরুপম চৌধুরীর মতে, সব রাজ্যই লগ্নি টানতে ইনসেন্টিভ দিচ্ছে। বিনিয়োগকারীরা সেগুলির তুলনামূলক বিচার করে তার পরে সিদ্ধান্ত নেবেন। বিশেষত ছোট-মাঝারি সংস্থাগুলির জন্য এই সমস্ত আর্থিক সুবিধা যেহেতু খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
অথচ এ রাজ্যে ছোট-মাঝারি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কথা ভেবেই তৈরি হয়েছে নীতি। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে প্রথমবার শিল্প মহলের সঙ্গে মুখোমুখি হয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছিলেন কর্মসংস্থান বাড়াতে জেলায় জেলায় তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প গড়ে তোলার কথা। সেই পথে হেঁটে তৈরি হয়েছিল তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পনীতি ও মূলধনী লগ্নি, সুদ, লিজ ভাড়ায় ভর্তুকির সুবিধা-সহ ইনসেন্টিভ প্রকল্প। বিশেষত ছোট-মাঝারি সংস্থার বিনিয়োগ মজবুত করতে যে প্রকল্পকে কাজে লাগানোর কৌশল নিয়েছিল সরকার। তার আওতায় জঙ্গলমহল ও পিছিয়ে পড়া জেলার জন্য বাড়তি সুবিধা ছিল। কলকাতা ও সংলগ্ন জেলার সংস্থাগুলির জন্য ছিল ১০ শতাংশ মূলধনী লগ্নি ভর্তুকি। একই ভাবে বাঁকুড়া, বীরভূম, পুরুলিয়া, কোচবিহার ও দার্জিলিং জেলার সংস্থাগুলির জন্য ছিল ১৫ শতাংশ মূলধনী লগ্নি ভর্তুকি। এ ছাড়াও স্ট্যাম্প ডিউটি, বিদ্যুতের মাশুলের মতো নানা ক্ষেত্রে টাকা ফেরতের সুবিধা ছিল।
সমস্যা কোথায়
• রাজ্যে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে লগ্নির ক্ষেত্রে ২০১২
সালের আর্থিক সুবিধা প্রকল্প ফুরিয়েছে ২০১৭-র জুলাই। যেখানে সুদ, লিজে ভর্তুকি ছিল। স্ট্যাম্প ডিউটি, বিদ্যুৎ মাসুলের টাকা ফেরত মিলত। জঙ্গলমহল ও পিছিয়ে পড়া জেলার জন্য ছিল বাড়তি সুবিধা। কলকাতা ও বিভিন্ন জেলার সংস্থাগুলির জন্য ছিল মূলধনী লগ্নি ভর্তুকি।
• নতুন আর্থিক সুবিধা প্রকল্প দু’বছর ধরে ফাইলবন্দি।
• ২০১৮-র শিল্প সম্মেলনের মঞ্চ থেকে নতুন প্রকল্পের আশ্বাস দেওয়া হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি।
প্রশ্ন যেখানে
• সব রাজ্যই তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে লগ্নি টানার জন্য আর্থিক সুযোগ-সুবিধা দেয়। রাজ্যের সামনে এখন সেই রাস্তা কই?
• ২০২০ সালের মধ্যে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে রাজ্য প্রথম তিনে জায়গা নেওয়ার বার্তা দিয়েছিল। সেই লক্ষ্য পূরণ হবে কি? বরং এতে তো লগ্নি হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কা! বিশেষত, দেশে এখন এই শিল্পের মোট আয়ের ৫ শতাংশও যেখানে দখলে নেই এ রাজ্যের।
সেই প্রকল্পই ফুরিয়েছে গত ২০১৭ সালে। সূত্রের খবর, ফাইলবন্দি নয়া প্রকল্পে পুরনোটির আর্থিক সুযোগ-সুবিধাই রেখে দেওয়া হয়েছে। বাড়তি কিছু যোগ হয়েছে নতুন সংস্থাগুলির (স্টার্ট-আপ) জন্য। তবে সেই প্রকল্প কবে দিনের আলো দেখবে, তার উত্তর তথ্যপ্রযুক্তি দফতরের কাছে নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy