বাজেটে দু’টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক এবং একটি বিমা সংস্থা বেসরকারিকরণের প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। তারও আগে বিভিন্ন ব্যাঙ্ককে মিশিয়ে দেওয়া ছাড়াও আইডিবিআই ব্যাঙ্কের কৌশলগত বিলগ্নিকরণের পথে হেঁটেছে কেন্দ্র। কিন্তু দেশের ব্যাঙ্কিং শিল্পের সব সমস্যা মেটানোর দাওয়াই বেসরকারিকরণ হতে পারে না বলে মনে করেন রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন ডেপুটি গভর্নর এস এস মুন্দ্রা। সম্প্রতি বেঙ্গল চেম্বার আয়োজিত দেশের আর্থিক বাজার নিয়ে এক ওয়েবিনারে তিনি বলেন, সব থেকে ভাল মডেল হবে যদি সরকার ব্যাঙ্কগুলির মালিকানা নিজেদের হাতে রেখে তার পরিচালনার দায়িত্ব পেশাদারদের হাতে তুলে দেয়। সরকারি মালিকানা থাকলে বাজার থেকে মূলধন সংগ্রহ থেকে শুরু করে অনেক সমস্যা মোকাবিলা করতে সুবিধা হবে। আবার পেশাদারিত্বের সঙ্গে তা চালানোও যাবে।
ব্যাঙ্কের অনুৎপাদক সম্পদের বা এনপিএ সমস্যা মোকাবিলা করতে বাজেটে নতুন ঋণ পুনর্গঠন সংস্থা (এআরসি) এবং সম্পদ পরিচালন সংস্থা (এএমসি) তৈরির কথাও বলেছেন অর্থমন্ত্রী। ওয়েবিনারে ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক এবং পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের দুই এমডি-সিইও রাজকিরণ রাই এবং এস এস মল্লিকার্জুন রাও বলেন, অনেক সময়েই একাধিক ব্যাঙ্কের যৌথ ভাবে মঞ্জুর করা ঋণ অনুৎপাদক সম্পদে পরিণত হলে তা একাধিক এআরসি-র কাছে বিক্রি করা হয়। সে ক্ষেত্রে পুরো প্রক্রিয়াটির মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে সমস্যা হয়। তাঁদের মতে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিই প্রস্তাবিত ওই এআরসি এবং এএমসি গঠন করবে বলে তাঁদের ধারণা। সে ক্ষেত্রে নতুন ব্যবস্থায় এনপিএ হয়ে যাওয়া একাধিক ব্যাঙ্কের যৌথ ভাবে দেওয়া ঋণ কিনবে ওই দুই সংস্থা। তাতে পরে তা বিক্রি বা পুনর্গঠন করা সহজ হবে।
কিন্তু ব্যাঙ্কিং বিশেষজ্ঞ তমাল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বর্তমানে নিলামে দেশের ২৮টি এআরসি-র মধ্যে যেটি সব থেকে বেশি দর হাঁকে, তার কাছেই ব্যাঙ্কগুলি অনুৎপাদক সম্পদ বিক্রি করে। বাজেটে প্রস্তাবিত সংস্থা বিনা প্রতিযোগিতায় এনপিএ কিনে নিতে পারবে, এমন আইন চালু হলে ব্যাঙ্কগুলি ওই সম্পদ বেচে ঠিক দাম পাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। সে ক্ষেত্রে বাকি ২৮টি এআরসি-র ব্যবসার হাল কী দাঁড়াবে, তা নিয়েও প্রশ্ন থাকছে বলে জানান তিনি।
এই সভায় গ্রামাঞ্চলে ব্যাঙ্কিং পরিষেবা ছড়িয়ে দিতে ডিজিটাল লেনদেন বাড়ানোর পক্ষে সওয়াল করেন বন্ধন ব্যাঙ্কের এমডি ও সিইও চন্দ্রশেখর ঘোষ।