গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
আমরা এখন বাজেট বলয়ে। আর মাত্র চার দিন পরে সংসদে ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষের বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। এর গুরুত্ব দেশের অর্থনীতি এবং সাধারণ মানুষের কাছে প্রতিবারই থাকে। তবে সঙ্কটে থাকা অর্থনীতির কতটা মোকাবিলা এ বারের বাজেট দিয়ে করা যায়, তা দেখার জন্য মুখিয়েথাকবেন ছোট-বড় লগ্নিকারী এবং শিল্প-বাণিজ্য মহল।
কয়েক মাস হল বিভিন্ন পণ্যের চাহিদায় ভাটা পড়েছে। ফলে মাথা নামিয়েছে দেশের জিডিপি বৃদ্ধির হার। এর প্রতিফলন পড়েছে বিভিন্ন সংস্থার আর্থিক ফলে। যা দেখে ভারতের শেয়ার বাজার ছাড়ছে বিদেশি লগ্নিকারীরা। পড়ছে সূচক। হুহু করে ডলার বেরিয়ে যাওয়ায় পতনের নজির গড়ছে টাকার দাম। আমদানি খরচ বাড়ায় প্রতি সপ্তাহেই কমছে বিদেশি মুদ্রার ভান্ডার। শেয়ারের দাম এবং মিউচুয়াল ফান্ডের ন্যাভ অনেকটা কমায় প্রমাদ গুনছেন নিশ্চিত আয়ের দুনিয়া ছেড়ে ঝুঁকির জগতে পা বাড়ানো লগ্নিকারীরা। অন্য দিকে মূল্যবৃদ্ধিকে বাগে আনা যাচ্ছে না। সব মিলিয়ে দিশেহারা গরিব, নিম্ন মধ্যবিত্ত।
অথচ উপরের দিকের ছবিটা কিন্তু বিপরীত। বাড়ছে দামি গাড়ি এবং ফ্ল্যাটের চাহিদা। ধনীদের আগ্রহ মেটাতে বহু সংস্থা দামি ও বিলাসবহুল পণ্যের উৎপাদন বাড়াচ্ছে। এই সব তথ্য আর্থিক বৈষম্যকেই তুলে ধরে। উপদেষ্টা অক্সফ্যামের সমীক্ষাও বলছে, দেশের ১% মানুষের হাতে আছে ৪০ শতাংশেরও বেশি সম্পদ। অন্য দিকে, অপর এক তথ্য অনুযায়ী ভারতে এখনও প্রায় ২৭.৫% মানুষ দারিদ্র সীমার নীচে। এই বৈষম্য কমাতে না পারলে ও সাধারণ মানুষের আয় বাড়াতে না পারলে চাহিদা ঠেলে তোলা শক্ত। আবার এই সমস্যা রাতারাতি সমাধান হওয়ার নয়।
সমস্যা আরও আছে। বিশ্বের ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা ভাবাচ্ছে কেন্দ্রকে। বিশেষত চিন ও পাকিস্তান তো বটেই, বাংলাদেশের সঙ্গে সীমান্ত নিয়েও নয়াদিল্লিকে অতিরিক্ত সতর্ক থাকতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে আত্মনির্ভর হতে চাইছে ভারত। এর সুফল বর্তাবে এই শিল্পে নিযুক্ত বিভিন্ন সংস্থাগুলির উপরে। এ দিকে বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেল ফের মাথা তুলেছে। শুল্ক নিয়ে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হুমকি রয়েছে। দেখা যাচ্ছে ভারতের নির্বাচন বাজারকে যতটা নাড়া দিয়েছে, আমেরিকার ভোট তা থেকে খুব একটা পিছিয়ে নেই। সব মিলিয়ে মিউচুয়াল ফান্ডের মতো দেশীয় আর্থিকসংস্থাগুলির হাত ধরে শেয়ারে টাকা ঢুকলেও, বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলির শেয়ার বিক্রির জেরে বাজার পড়ছে। জানুয়ারিতে এখন পর্যন্ত তারা বেচেছে প্রায় ৬৪,০০০ কোটি টাকার শেয়ার।
এত সব সঙ্কটের কথা মাথায় রেখে এ বারের বাজেট বানাতে হবে সীতারামনকে। কর্মসংস্থান বাড়াতে ও নীচুতলার মানুষের হাতে টাকা পৌঁছতে ব্যয় বাড়াতে হবে। পরিকাঠামো শিল্পে মূলধনী খাতে অনেক বেশি টাকা ঢালতে হবে। এতে যেমন শ্রমদিবস বাড়বে, তেমনই সিমেন্ট, ইস্পাত ইত্যাদি শিল্প চাঙ্গা হবে। সাধারণ মানুষের হাতে টাকার জোগান বাড়াতে কর কমানোর সুপারিশ আসছে নানা মহল থেকে। অধিকাংশই বলছে, করমুক্ত আয় ৩ লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ লক্ষ পর্যন্ত করা হোক। ১৫ লক্ষ পর্যন্ত আয়ে কমানো হোক করের হার। ব্যাঙ্ক শিল্পের দাবি, মেয়াদি আমানতে কর ছাড় দেওয়ার কথা ভাবুক কেন্দ্র। পুরনো বিকল্পে ব্যাঙ্ক সুদে যে করছাড় মেলে, তা আসুক নতুনেও। পাশাপাশি, শেয়ার বাজারকে চাঙ্গা করতেও কেন্দ্র কিছু পদক্ষেপ করবে বলে আশা লগ্নিকারীদের।
তবে সকলেই বলছেন, সমস্যা অনেক এবং তাদের কয়েকটি বেশ গুরুতর। কোনও ক্ষেত্রে কাঠামোগত পরিবর্তনও দরকার। বাজেট সে ব্যাপারে কী কী পদক্ষেপ করে, তা জানতে আপাতত অপেক্ষা করতে হবে শনিবার, ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
(মতামত ব্যক্তিগত)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy