ভুঁইফোড় অর্থলগ্নি সংস্থা হানিম্যান হাউসিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টকে গোটানোর (লিকুইডেশন) নির্দেশ দিল ট্রাইবুনাল।
দেউলিয়া আইনে সাধারণত ঋণ খেলাপি সংস্থার বিচারই করে জাতীয় কোম্পানি আইন ট্রাইবুনাল (এনসিএলটি)। সেগুলিকে বেচে বা গুটিয়ে যাতে ধারের টাকা ফেরতের ব্যবস্থা করা হয়, সে জন্য সংস্থাগুলিকে সেখানে টেনে নিয়ে যায় ঋণদাতারা। এ বার সেই আইনেই ভুঁইফোড় অর্থলগ্নি সংস্থা হানিম্যান হাউসিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টকে গোটানোর (লিকুইডেশন) নির্দেশ দিল ট্রাইবুনাল। অনেকের মতে, এনসিএলটির এই সিদ্ধান্ত কার্যত লগ্নিকারীদের পাওনাদারের স্বীকৃতি।
সংস্থাটির বিরুদ্ধে অভিযোগ, জমি দেওয়ার নামে প্রায় ১,৫০০ লগ্নিকারীর কাছ থেকে টাকা তুলেছে তারা। প্রতিটি প্লটের দাম নিয়েছে গড়ে প্রায় ৭ লক্ষ টাকা। মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, দুর্গাপুর, আসানসোল-সহ রাজ্যের প্রায় ২৫টি অঞ্চলে এজেন্টরা ওই টাকা তোলেন। তার বদলে সংস্থা যে চুক্তি করে, তাতে শর্ত ছিল, জমির টাকা তিন বছর ধরে কিস্তিতে মেটাতে হবে লগ্নিকারীকে। টাকা মেটানোর পরে লগ্নিকারী চাইলে জমি বা বছরে ১২% সুদ (চুক্তি অনুযায়ী যা জমির মূল্যবৃদ্ধি বাবদ অতিরিক্ত টাকা)-সহ পুরো টাকা ফেরত পাবেন। অথচ অভিযোগ, অনেকেই জমি বা টাকা, কোনওটাই পাননি। যে ক’জন জমি পেয়েছেন, তাঁদের অনেকে আবার সেটি মিউটেশন করাতে পারছেন না। এর পরেই প্রতারিত লগ্নিকারীদের ১৬ জন দেউলিয়া আইনে মামলা করেন ট্রাইবুনালের কলকাতা বেঞ্চে।
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সূত্র বলছে, যে প্রকল্পে একাধিক লগ্নিকারীর থেকে তহবিল সংগ্রহ হয়, তাকে বলে কালেক্টিভ ইনভেস্টমেন্ট স্কিম। সেটি চালুর জন্য শীর্ষ ব্যাঙ্কের অনুমোদন জরুরি। এক সময়ে রোজ ভ্যালি-সহ বেশ কিছু অর্থলগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে অনুমতি ছাড়াই ওই ধরনের প্রকল্প চালুর অভিযোগ উঠেছিল। সেই সব প্রকল্পে লগ্নি করে প্রতারিতও হয়েছেন অনেকে। অভিযোগ উঠেছে, হানিম্যান হাউসিংও জমি দেওয়ার নাম করে বাজার থেকে টাকা তোলার জন্য এমন একটি প্রকল্প চালু করে।
হানিম্যান হাউসিংয়ের বিরুদ্ধে মামলাকারীদের অন্যতম সুপ্রিয় রাণার অভিযোগ, ‘‘২০১২ সালে মেদিনীপুরে ৪ কাঠা জমি কিনব বলে সংস্থাটির সঙ্গে চুক্তি করি। অথচ চুক্তি মাফিক তিন বছরের মধ্যে পুরো ৭ লক্ষ টাকা মেটানোর পরেও টাকা বা জমি কোনওটাই পাইনি। বাধ্য হয়ে দেউলিয়া আইনে মামলা করেছি। আমরা ১৬ জন মামলা করলেও বহু লগ্নিকারীই প্রতারিত হয়েছেন।’’
সংস্থার এক ডিরেক্টর কবুল করেন, ২০১৩ সালের পর থেকে তাঁরা টাকা বা জমি, কোনওটাই দিতে পারেননি। ফলে প্রায় ৪৫০ জন এখনও টাকা বা জমি পাননি। যদিও তাঁর দাবি, প্রায় ১৬ হাজার লগ্নিকারীকে হয় জমি, না হয় টাকা ফিরিয়েছে সংস্থা।
কেন টাকা ফেরানো যায়নি, তার জবাবে ওই ডিরেক্টেরের দাবি, সারদা-রোজ ভ্যালির সমস্যা শুরুর পরে একসঙ্গে বহু লোক তাঁদের কাছে টাকা ফেরত চাওয়াতেই তা দেওয়া যায়নি। তবে একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘এনসিএলটির কাছে প্রায় ১,০০০ বিঘা জমি ‘সারেন্ডার’ করেছি। দুর্গাপুরে আমাদের যে লজ আছে সেটিও সারেন্ডার করা হয়েছে।’’ অবশ্য এই মামলায় নিয়োজিত রিজলিউশন প্রফেশনাল এনসিএলটি-কে জানিয়েছেন যে, সেই জমি বা লজের আসল নথি জমা দেয়নি হানিম্যান হাউজিং।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy