গত কয়েক বছর ধরেই সাধারণ রিটেল বা খুচরো বাজারের ক্রেতারা ভিড় জমাচ্ছেন নেট বাজারে। যানজট, ভিড় ঠেলে দোকানে দোকানে না-ঘুরে ল্যাপটপ বা মোবাইলের পর্দায় জিনিসের দাম যাচাই করে কেনাকাটা সারছেন অনেকেই। বিশেষত নয়া প্রজন্ম এই ‘হাই-টেক’ বাজারেই স্বচ্ছন্দ। আর এই কেনাকাটার মধ্যে ঢুকে পড়ছে উপহারের তালিকাও। প্রায় ৫০০ শতাংশ হারে বাড়ছে ‘গিফট্ কার্ড’ দেওয়ার চল।
যে-ভাবে বদলে যাচ্ছে কেনাকাটার ধরন, সেই তালেই পাল্টাচ্ছে উপহার দেওয়ার রীতি। উপহার দিতে হবে বলেই উপহার দেওয়া নয়। এখন যাঁকে উপহার দেওয়া হচ্ছে, উপহার বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁকেই স্বাধীনতা দেওয়া হচ্ছে। আর এই বেছে নেওয়ার সুযোগ দিচ্ছে ‘গিফট্ কার্ড’। নির্দিষ্ট দামের গিফট কার্ড ব্যবহার করে উপহার প্রাপক অনায়াসে প্রয়োজন মতো পছন্দের জিনিস কিনে নিতে পারেন। নিজের সুবিধা মতো দিন ও সময়ে কেনার স্বাধীনতাও থাকে।
আর এই পরিবর্তনের হাত ধরেই ভারতের ৩০০০ কোটি ডলার মূল্যের উপহারের বাজারে দখল বাড়াচ্ছে নেট দুনিয়া। আপাতত অনলাইন উপহারের বাজারের পরিমাণ ৪০ কোটি ডলার। এর মধ্যে উৎসবের উপহার বিক্রির পরিমাণ সাড়ে সাত কোটি ডলার। পারস্পরিক উপহার দেওয়ার পরিমাণ ২০ কোটি ডলার। কর্পোরেট উপহার আড়াই কোটি ডলার।
বাজার ও ব্যবসার টানে অনলাইন উপহারের দুনিয়ায় ভিড় জমাচ্ছে স্টার্ট-আপ বা সদ্য তৈরি সংস্থাগুলি। গিফট্ কার্ডের ব্যবহার যে-প্রযুক্তির দৌলতে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে, সেই প্রযুক্তির মঞ্চ তৈরি করেছে ‘কুইকসিলভার’ নামে একটি স্টার্ট-আপ সংস্থা। আপাতত গিফট ভাউচার ও কার্ডের সংগঠিত বাজারের মাপ ৩০০০ কোটি টাকা। এই বাজারে প্রযুক্তি জোগান দেওয়ার ক্ষেত্রে কুইকসিলভার শীর্ষে রয়েছে। সংস্থার ব্যবসায়িক সম্ভাবনা আঁচ করে বিনিয়োগ করেছে অ্যামাজনের মতো প্রথম সারির ই-কমার্স সংস্থা। একই ভাবে ব্যবসার টানে তৈরি হয়েছে ফাইভ টু সেভেন নামে আর একটি সংস্থা। এই সংস্থা মূলত কর্পোরেট উপহারের বাজারে কাজ করে। ইতিমধ্যেই তাদের উপহার সামগ্রীর সংখ্যা ৫০০০ ছুঁয়ে ফেলেছে।
অনলাইন উপহার বাজারে ব্রাত্য নয় অফলাইন বা ইট-কাঠ-পাথরের দোকানপাট। ব্যবসার টানে গিফট কার্ড বা ভাউচার বেশ কিছুদিন ধরেই চালু করেছে বিভিন্ন বিপণি। কুইকসিলভারের প্রযুক্তির হাত ধরতে পিছপা হয়নি শপার্স স্টপ, টাইটান, লাইফস্টাইল-এর মতো ব্র্যান্ড। রহেজা গোষ্ঠীর সংস্থা শপার্স স্টপের অন্যতম কর্তা মনোহর কামাথের মতে কেনাকাটার ধরন বদলাচ্ছে। তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে অনলাইন বাজারে কেনাকাটার যাবতীয় সুবিধা দিতেই হবে দোকানিদের। এবং শুধু উপহার কেনার নতুন উপায়ই নয়। ব্যবসা বাড়াতেও উপহারের উপর নির্ভর করে রিটেল বা খুচরো বিপণন। রিটেলার্স অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়ার প্রধান কুমার রাজাগোপালন জানান, অধিকাংশ ব্র্যান্ডের ক্ষেত্রেই ১০% ব্যবসা জোগান দেয় উপহারের বাজার। সেই বাজারের দিকে চোখ রেখে নতুন প্রযুক্তির হাত ধরছে বিভিন্ন বিপণি।
সব দোকানের পক্ষে প্রযুক্তি খাতে মোটা পুঁজি ঢালা সহজ নয়। সে ক্ষেত্রে অ্যাপের ব্যবহার লাভজনক বলে দাবি কুপন দুনিয়ার সিওও অঙ্কিতা টন্ডনের। তিনি বলেন, ‘‘উৎসবের সময়ে কুপন দুনিয়ার ওয়েবসাইটে ১৫% বেশি ক্রেতা ভিড় জমান। তথ্য বলছে এঁদের অধিকাংশই সেই সব দোকান বা রেস্তোরাঁয় গিয়েছেন, যাদের সঙ্গে কুপন দুনিয়া গাঁটছড়া বেঁধেছে।’’ অ্যাপির নির্মাতা সংস্থা অ্যাপি মোবিকিউটি-র কার্তিক সাঙ্গভির দাবি, অনলাইন বাজারের ক্রেতাকে অফলাইন বাজারের দোকানে টেনে আনাই তাঁদের তৈরি অ্যাপের বিশেষত্ব।
আগে নেট বাজারের রমরমা বই, সিডি, ট্রেন-প্লেনের টিকিট বিক্রির মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। এখন বাড়ি-গাড়ি কিনতেও নেট বাজারে ঢুকে পড়ছেন ক্রেতা। রিটেল উপদেষ্টা সংস্থা টেকনোপ্যাকের দাবি, ২০২০ সালে ভারতে অনলাইন বিক্রির পরিমাণ ৩২০০ মার্কিন ডলার ছুঁয়ে ফেলবে। শুধুই বিক্রি বৃদ্ধি নয়। নেট বাজারের বিক্রির টাকার পরিমাণও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। বিশেষজ্ঞ সংস্থা ফরেস্টারের সমীক্ষা অনুযায়ী ২০১২ সালের তুলনায় ২০১৫ সালে ৪৫০ শতাংশ বিক্রি বাড়িয়েছে নেট বাজার। তারই অন্যতম শরিক উপহারের বাজারও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy