শিকড় কলকাতায়। কিন্তু নজর ন্যাসডাকে। সাইবার নিরাপত্তার আন্তর্জাতিক বাজারে প্রথম সারির প্রতিষ্ঠান হিসেবে জায়গা করে নিতে চাইছে সেক্টর ফাইভের অফিস থেকে প্রায় সকলের অলক্ষ্যে ব্যবসা করা সংস্থা ভিহিয়ার।
দুই প্রতিষ্ঠাতা নবীন ও প্রবীণ জয়সওয়ালের দাবি, ফি বছর তাঁদের ব্যবসা বাড়ছে ২৩০ শতাংশ হারে। এই ক্ষেত্রে সারা দুনিয়ায় শীর্ষে থাকা ইজরায়েলি সংস্থাগুলির সঙ্গে জোর টক্কর দিতে শুরু করেছে সংস্থা। এমনকী ইতিমধ্যেই সারা মার্কিন শেয়ার বাজার ন্যাসডাকে নথিভুক্ত হওয়ার জন্য উপদেষ্টা সংস্থা নিয়োগের কাজও। কিন্তু এত কিছুর পরেও এমন ‘গোপনে বেড়ে ওঠা’র কারণ ভিহিয়ারের ব্যবসার ধরনই।
সংস্থাটির মূল কাজ— সাইবার নিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রযুক্তি জোগানো এবং উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য (যেমন টেলি পরিষেবা) সফটওয়্যার তৈরি ও তথ্য বিশ্লেষণ। প্রধান ক্রেতা কেন্দ্রীয় ও বিভিন্ন রাজ্য সরকার। এখন অবশ্য কর্পোরেট সংস্থার জন্য কাজ করতেও পা বাড়াচ্ছে তারা। ব্যবসা ছড়াচ্ছে আমেরিকা ও ইউরোপে। দুই জয়সওয়ালের দাবি, এই তথ্যপ্রযুক্তি পরিষেবা এতটাই উঁচু মানের যে, ভারতে তাদের সেই অর্থে কোনও প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। লড়াই উন্নত দুনিয়ার সেরা সংস্থাগুলির সঙ্গে।
• সাইবার নিরাপত্তায় ভারতের অগ্রণী সংস্থা। দক্ষতা তথ্য বিশ্লেষণেও
• কাজ জাতীয় নিরাপত্তার মতো স্পর্শকাতর বিষয়ের তথ্য নিয়ে
• টক্কর উন্নত দুনিয়ার প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে
• প্রধান গ্রাহক কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার। এ বার লক্ষ্য কর্পোরেট দুনিয়াও
• ন্যাসডাকে নথিভুক্তির উদ্যোগ শুরু
নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে মনে করা হয়েছিল, এ রাজ্যকে শিল্পে ঘুরিয়ে দাঁড় করানোর ক্ষেত্রে অন্যতম বাজি হবে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প। পর্যাপ্ত মেধা, কম খরচে দক্ষ কর্মীর আকর্ষণ বিনিয়োগ টেনে আনবে এখানে। বিশেষত যেখানে সারা দেশে বাঙালি সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারের ছড়াছড়ি। কিন্তু আদপে তা হয়নি। টিসিএস, কগনিজ্যান্ট, উইপ্রো এসেছে বটে, কিন্তু ওই শিল্পের ক্ষীর নিয়ে গিয়েছে বেঙ্গালুরু, পুণে, দিল্লি এমনকী ইনদওর। তার উপর অনেকে বলেন, এ দেশে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে উঁচুদরের কাজ যেটুকু হয় (যেমন, গবেষেণা ও উদ্ভাবন), তারও সিংহভাগ নিয়ে গিয়েছে অন্য রাজ্যগুলি। উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাব, একই ধরনের কাজ করা তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার অনুপস্থিতি ইত্যাদি বিনিয়োগকে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছে ভিন্ রাজ্যে। ফলে সে দিক থেকে দেখতে গেলে, ভিহিয়ার মূর্তিমান ব্যতিক্রম।
চুলের শ্যাম্পু থেকে পায়ের নেলপালিশ। দেশের প্রতিরক্ষা থেকে আস্ত ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা। আজকের ডিজিটাল দুনিয়ায় সমস্ত কিছু নিয়েই রাশি রাশি তথ্য প্রতি মুহূর্তে জমা হচ্ছে সমস্ত দেশে। নবীন জয়সওয়ালের কথায়, ‘‘এখন প্রতিটি দেশ প্রতিনিয়ত যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। ইলেকট্রনিক যুদ্ধ। রাশি রাশি তথ্য নিরাপদ ও সুরক্ষিত রাখার লড়াই। আমরা তারই শরিক।’’
হ্যাকার যাতে তথ্যের সিন্দুকে সিঁদকাঠি দিয়ে চুরি করতে না-পারে, তা নিশ্চিত করাই সাইবার নিরাপত্তার উদ্দেশ্য। বিষয়টি যেহেতু একান্ত গোপন এবং ভীষণ ভাবে স্পর্শকাতর, তাই এ নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ ভিহিয়ার কর্তৃপক্ষ। তাঁরা জানাচ্ছেন, এর সঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তার মতো স্পর্শকাতর বিষয় জড়িত। আর সেই জন্য গোপনীয়তা রক্ষা করা এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, নিজেদের তৈরি সফটওয়্যারের পেটেন্ট নেওয়াও সম্ভব হয় না। নবীনের কথায়, ‘‘পেটেন্ট নিতে গেলে কিছু তথ্য খোলা বাজারে পৌঁছেই যায়। যা দেশের পক্ষে নিরাপদ নয়।’’ বিকল্প হিসেবে তাই তিন মাস অন্তর ‘রিসার্চ পেপার’ প্রকাশ করে সংস্থাটি। উদ্ভাবনের অত বিস্তারিত বিবরণ সেখানে লাগে না।
ভিহিয়ার জানাচ্ছে, এখনও পর্যন্ত সরকারি বরাত ছাড়া এই ব্যবসায় টিকে থাকা প্রায় অসম্ভব। তাই যাবতীয় গবেষণা ও প্রযুক্তির লক্ষ্য মূলত সরকারের প্রয়োজন মেটানোই। তবে আঁটোসাঁটো নিরাপত্তা সত্ত্বেও আমেরিকার মতো উন্নত দেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এ বার ছায়া পড়েছে হ্যাকিংয়ের। চুরি গিয়েছে বাংলাদেশের শীর্ষ ব্যাঙ্কের টাকা। এই অবস্থায় ভারত যখন ডিজিটাল অর্থনীতির দিকে পা বাড়াতে চাইছে, তখন এখানে আগামী দিনে সাইবার নিরাপত্তার বিপুল বাজার তৈরি হবে বলে আশা করছে ভিহিয়ার।
লাতিন ভাষায় ‘ভিহিয়ার’ শব্দটির অর্থ তুলনামূলক অবস্থান। প্রথমে জিআইএস এবং জিপিএস প্রযুক্তি সংক্রান্ত ব্যবসা করার পরিকল্পনা থাকায় ওই নাম রেখেছিলেন জয়সওয়ালরা। কিন্তু যাবতীয় পরিকল্পনা প্রায় এক ঝটকায় পাল্টে গিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থার একটি ফোনে। বদলে গিয়েছিল ব্যবসার অভিমুখ। দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত ওই কেন্দ্রীয় সংস্থার একটি সমস্যা সমাধান করার জন্য ডাক পেয়েছিলেন জয়সওয়ালরা। নবীন জানান, সেই সমাধানসূত্র বার করতে তাঁদের এক বছর লেগে গিয়েছিল। কিন্তু নতুন দরজা খোলার সেটাই শুরু।
এক দশক সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করার পরে এ বার ব্যবসা আরও ছড়িয়ে দিতে চাইছে ভিহিয়ার। প্রবীণ জানিয়েছেন, এ বার কর্পোরেট দুনিয়ার জন্যও কাজ করবেন তাঁরা। নিজেদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে তাদেরও তথ্য বিশ্লেষণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করায় মন দিচ্ছে কলকাতার সংস্থাটি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy