দো-আঁশলা: স্বস্তি, সঙ্গে সঙ্গী উদ্বেগও। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।
এক যুগেরও বেশি সময় পরে ভারতের রেটিং এক ধাপ বাড়াল আন্তর্জাতিক মূল্যায়ন সংস্থা মুডি’জ। Baa3 থেকে এক ধাপ উঠে হল Baa2। সেই অটল বিহারী বাজপেয়ীর জমানার পরে প্রথম।
এই সাফল্য প্রচারে এ দিন থেকেই কোমর বেঁধে নেমে পড়েছে মোদী সরকার। কিন্তু তার মধ্যেই প্রশ্ন উঠছে, এ বার বাকি দুই আন্তর্জাতিক সংস্থাও (এসঅ্যান্ডপি এবং ফিচ) এই একই পথে হাঁটবে তো? সেই সঙ্গে অনেকের ধারণা, রেটিংয়ে এই এক ধাপ ওঠার দৌলতে এখন রাজকোষ ঘাটতির লক্ষ্যচ্যুতি মেনে নেওয়া অনেক বেশি কঠিন হবে সরকারের পক্ষে। তাই যে কোনও মূল্যে ওই ঘাটতিকে লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে বেঁধে রাখা নিয়ে আগামী দিনে আরও চাপ বাড়বে কেন্দ্রের উপর। বিশেষত ২০১৯ সালের লোকসভা ভোট মাথায় রেখে যেখানে তারা বিভিন্ন জনমোহিনী ঘোষণার পথে হাঁটতে পারে বলে মনে করছিলেন অনেকে।
পরীক্ষায় একটু ভাল করলে প্রশংসার চোটে যেমন ছাত্রের উপর আরও ভাল করার চাপ তৈরি হয়, অনেকের মতে এখন মোদী সরকারের হালও তেমনই। কারণ, মুডি’জ-এর মূল্যায়ন ভাল হওয়ার কারণ, তারা আশা করছে, সরকার সংস্কারের পথেই থাকবে। জমি অধিগ্রহণ, শ্রম আইনের সংস্কার হবে। সর্বোপরি, রাজকোষ ঘাটতিতে যেমন লাগাম পড়ানো রয়েছে, সেই পথ থেকে কোনও ভাবেই সরে আসবে না তারা। বরং সরকারের ঋণের বোঝা আরও কমিয়ে আনবে।
ক্ষমতার অলিন্দেরই অনেকে বলছেন, এখানেই চাপে পড়ে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। জিএসটি চালুর পরে সরকারের রাজস্ব আয় কমতে শুরু করেছে। অন্য দিকে, অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে পরিকাঠামোয় বিপুল লগ্নি দরকার। ব্যাঙ্কের পুঁজির জোগানে আরও অর্থ ঢালতে হবে। ২০১৯-এর ভোট মাথায় রেখেও কিছুটা দরাজহস্ত হওয়া প্রয়োজন।
এই অবস্থায় ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রা কিছুটা অন্তত আলগা করা নিয়ে একটা ভাবনাচিন্তা চলছিল অর্থ মন্ত্রকের অন্দরে। কিন্তু মুডি’জ-এর মতে, কেন্দ্র ও রাজ্য মিলিয়ে এ দেশে ঋণের বোঝা এমনিতেই বেশি। তাদের বিশ্বাস, কেন্দ্র যে সংস্কার করছে, তাতে এই ঋণের বোঝা বাড়ার আশঙ্কা কমেছে।
ভাল ফল করার দিনেই মুডি’জ-এর এই বিশ্বাস জেটলি ভাঙেন কী করে? তাই এ নিয়ে প্রশ্নে তাঁর জবাব, ‘‘আর্থিক শৃঙ্খলা নিয়ে ট্র্যাক-রেকর্ডই আমাদের হয়ে কথা বলছে। আমরা সেই পথেই এগিয়ে যাব।’’ যার অর্থ, ঘাটতি আলগা করার কোনও ইঙ্গিত দিতে চাইছেন না তিনি।
অথচ অর্থ মন্ত্রক সূত্রের খবর, তার কর্তাদের এতদিন পরিকল্পনা ছিল, ঘাটতির লাগাম আলগা করা হবে কি হবে না, তা ডিসেম্বরেই আয়-ব্যয়ের পরিস্থিতি দেখে নিয়ে ঠিক করার। কিন্তু এখন তা নিয়ে উল্টো কথা ভাবতে হচ্ছে জেটলিকে।
তার আরও কারণ অবশ্য রয়েছে। কারণ মুডি’জের মূল্যায়নের পাশাপাশি অন্য দুই রেটিং সংস্থার খাতাতেও ভাল নম্বর পাওয়া জরুরি। অথচ সেই এসঅ্যান্ডপি এ দিনও বলেছে, ভারতের রাজকোষের হাল ভাল নয়। তাই ঘাটতিতে ঢিল দেওয়া অন্তত এই মুহূর্তে শক্ত।
কেন্দ্র অবশ্য এই রেটিং উন্নতিকে নিজেদের সাফল্য হিসেবেই দেখছে। তাদের দাবি, যে নোট বাতিল ও জিএসটি নিয়ে বিরোধীদের এত সমালোচনা, তাকেই সংস্কারের স্বীকৃতি দিয়েছে মুডি’জ। রিপোর্ট বলছে, আগামী অর্থবর্ষে বৃদ্ধি ৭.৫ শতাংশে পৌঁছবে। সরকার ছোট-মাঝারি শিল্প ও রফতানিকারীদের সাহায্যে একগুচ্ছ ব্যবস্থা নিয়েছে। হেঁটেছে একগুচ্ছ সংস্কারের পথে। যেমন, সুদ নীতি কমিটি, দেউলিয়া আইন, ব্যাঙ্কের অনুৎপাদক সম্পদ কমানোর চেষ্টা ইত্যাদি।
কিন্তু এই উন্নতিকে কোনও নম্বর দিতে নারাজ কংগ্রেস। আর সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরির প্রশ্ন, ‘‘কাজ হারানো শ্রমিক, ক্ষুব্ধ চাষি, ক্ষুধার্ত মানুষ কি এই রেটিং চিবিয়ে খাবেন?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy