গত আট মাসের মধ্যে বাজার এখন সব থেকে নীচে। নিফটি আর ৮০০০ ধরে রাখতে পারেনি। সেনসেক্স এখন ২৫ হাজারে নামার পথে। এই পরিস্থিতিতে লগ্নিকারীদের অনেকেই বেশ অসহায় বোধ করছেন। বিশেষ করে ছোট মেয়াদের লগ্নিকারীদের জন্য সময়টা আদৌ অনুকূল নয়।
আশার কথা, নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও বাজার গত সপ্তাহে কিছু ভাল খবর পেয়েছে। একবার সেগুলি দেখে নেওয়া যাক:
• এপ্রিল মাসে আশার তুলনায় বেশি হারে বেড়েছে শিল্পোৎপাদন। গত বছর এপ্রিল মাসের ৩.৭ শতাংশের জায়গায় এ বার ৪.১ শতাংশ। ভালই বলতে হবে।
• এপ্রিল এবং মে মাসে পরোক্ষ কর বাবদ কেন্দ্রের আয় বেড়েছে ৩৯ শতাংশ। এই তথ্য স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় শিল্পে প্রাণ ফিরছে। উৎপাদন শুল্ক বাবদ আয় বেড়েছে ৮৪.২ শতাংশ, আমদানি শুল্ক বেড়েছে ১৬ শতাংশ এবং পরিষেবা কর বাবদ সংগ্রহ বেড়েছে ১৩.২ শতাংশ।
• রফতানির বাজারে মন্দা চলা সত্ত্বেও জানুয়ারি থেকে মার্চ এই তিন মাসে ভারতের চলতি খাতে বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন ঘাটতি ৮৩০ কোটি ডলার থেকে এক ধাক্কায় নেমে এসেছে মাত্র ১৩০ কোটি ডলারে। অর্থাৎ এই ঘাটতি জাতীয় আয়ের ১.৬ শতাংশ থেকে কমে এসেছে মাত্র ০.২ শতাংশে। অশোধিত তেলের দামে বড় পতনকেই এর মূল কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।
• এ বছরের বড় আতঙ্ক ঘাটতি বর্ষার সম্ভাবনা। সুখের কথা, কয়েক দিন দেরিতে হলেও বর্ষা নেমেছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। এমনকী উত্তর-পূর্বে তৈরি হয়েছে বন্যা পরিস্থিতি। বৃষ্টি পেয়েছে পশ্চিম ও উত্তর ভারতও। উত্তরবঙ্গে চলছে ভারী বর্ষা। দক্ষিণবঙ্গে অবশ্য এখনও ঘাটতি আছে। পরিস্থিতি কোন দিকে যায়, তা বোঝা যাবে আগামী দু’সপ্তাহে।
• মে মাসে গাড়ি বিক্রি বেড়েছে ৭.৭ শতাংশ। এই নিয়ে পরপর দু’মাস গাড়ি বিক্রি বাড়ল। মে মাসে বিভিন্ন গাড়ি নির্মাতা বিক্রি করেছে মোট ১,৬০,০৬৭টি গাড়ি। গাড়ি বিক্রি বৃদ্ধি অর্থনীতির এগিয়ে চলার লক্ষণ। গাড়ি উৎপাদন বাড়লে চাহিদা বাড়বে গাড়ি তৈরির বিভিন্ন কাঁচামালের।
• রিজার্ভ ব্যাঙ্ক রেপো রেট ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমানোর পরে ঋণে সুদ কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বেশ কয়েকটি ব্যাঙ্ক। শিল্পঋণ ছাড়াও সুদ কমানো হচ্ছে বাড়ি ও গাড়িঋণে। স্টেট ব্যাঙ্কের গৃহঋণে সুদ এখন সব থেকে কম। মহিলাদের ক্ষেত্রে ৯.৭০ শতাংশ এবং পুরুষদের ৯.৭৫ শতাংশ। অন্যান্য ব্যাঙ্কের ক্ষেত্রে এই হার ৯.৮৫ থেকে ৯.৯০ শতাংশ। সুদ কমায় বাড়ির চাহিদা বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
সব মিলিয়ে অবস্থার যে বেশ খানিকটা উন্নতি হয়েছে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। এখন চিন্তার কারণ দু’টি। এক, বৃষ্টি কম হলে সব ভাল কিন্তু মুছে যাবে। দুই, খুচরো বাজারে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির হার আবার ৫ শতাংশ ছাড়িয়েছে। বৃষ্টি কম হলে এই দাম আরও বাড়ার আশঙ্কা। সে ক্ষেত্রে আর সুদ কমার সম্ভাবনা থাকবে না। অর্থাৎ বরুণদেবের হাতেই এখন ভারতীয় অর্থনীতির অগ্রগতির চাবিকাঠি।
বাজারের অভিমুখ এখনই পাকাপাকি ভাবে ঘুরবে বলে মনে হচ্ছে না। তবে নিফটি ৭,৮০০ অঙ্কে পৌঁছলে আরও পতনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে বাজার সাময়িক উঠলে তাকে বিক্রির সুযোগ হিসেবে ভাবা যেতে পারে। পতনে ভাল শেয়ার অবশ্যই কেনা যেতে পারে একটু বড় মেয়াদের জন্য।
জমার উপর সুদ অনেকটাই কমেছে। আরও কমার সম্ভাবনা হয়তো এখনই নেই। শিল্পে ঋণের চাহিদা বাড়লে ব্যাঙ্কগুলিকেও বাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করতে হবে। প্রবীণ নাগরিকরা মেয়াদি জমার উপর সর্বাধিক সুদ পাচ্ছেন ৯.১৫ শতাংশ। কোনও কোনও ব্যাঙ্কে এর থেকে কম। বর্তমান অবস্থায় ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্পের অন্তর্গত সিনিয়র সিটিজেন সেভিংস স্কিম (সুদ ৯.৩ শতাংশ) বেশ ভাল। জীবন বিমা নিগমের বরিষ্ঠ পেনশন যোজনাও মন্দ নয়। প্রকল্পটি খোলা আছে ১৪ অগস্ট পর্যন্ত। টাকা রাখার কথা ভাবা যেতে পারে নামী গৃহঋণ সংস্থার জমা প্রকল্পে। এখানে সুদের হার ব্যাঙ্ক সুদের তুলনায় সাধারণত একটু বেশি হয়। পিপিএফ অ্যাকাউন্টে এই বাজারে করমুক্ত ৮.৭ শতাংশ সুদ যথেষ্ট ভাল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy