সুরক্ষা এবং সঞ্চয়— দুই লক্ষ্যেই এখনও ভরসা করে জীবন বিমা নিগমে (এলআইসি) টাকা রাখেন আমজনতা। কিন্তু সরকারি সূত্রে খবর, এ বার সেই এলআইসিকে দিয়েই লোকসানে চলা আইডিবিআই ব্যাঙ্কের শেয়ার কেনাতে চাইছে নরেন্দ্র মোদী সরকার।
স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে, এলআইসিতে সাধারণ মানুষের সঞ্চয়ের টাকা লোকসানে ডুবে থাকা ব্যাঙ্কের শেয়ার কিনতে ঢালা হবে কেন? এমন নয় যে, এলআইসিকে এর আগেও এই একই কারণে ব্যবহার করা হয়নি। যেমন, কোল ইন্ডিয়ার বিলগ্নিকরণের সময়ে প্রায় অর্ধেক শেয়ার এলআইসি কিনেছে। রেলকে পাঁচ বছরের জন্য দেড় লক্ষ কোটি টাকা ঋণ দিতেও এগিয়ে আসতে হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত বিমা সংস্থাটিকে।
কিন্তু যে সরকার প্রতিদিন নিয়ম করে সংস্কারের কথা বলে, জোর দেয় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাকে পরিচালনায় স্বাধীনতা দেওয়ার উপরে, তারা এই পথে হাঁটায় আরও বেশি করে প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। বলছেন, এ ভাবে বিলগ্নিকরণের লক্ষ্যপূরণ করে আদৌ অর্থনীতির ভাল হয় কি? আর কেন্দ্র যদি বিমা সংস্থাটিকে লোকসানে ডুবে থাকা ব্যাঙ্কের শেয়ার কিনতে বাধ্য করে, তবে সংস্থাটি গ্রাহকদের ভাল বোনাস দেবে কোথা থেকে?
জানুয়ারি-মার্চে আইডিবিআই ব্যাঙ্ক ৫,৬৬২ কোটি টাকার বেশি লোকসান করেছে। মোট ঋণের প্রায় ২৮% অনাদায়ী। এ হেন ব্যাঙ্ক বিলগ্নিকরণ করতে গিয়ে কেন্দ্র বুঝছে, চট করে কোনও বেসরকারি সংস্থা এর শেয়ার কিনতে চাইবে না। অগত্যা রাষ্ট্রায়ত্ত বিমা সংস্থাই ভরসা।
আরও পড়ুন: বাজার উঁচুতে, তবু কাটছে না দুর্বলতা
অর্থ মন্ত্রক সূত্রের খবর, এলআইসির হাতে আইডিবিআই ব্যাঙ্কের অন্তত ৫১% শেয়ার যাবে। সংস্থার বিনিয়োগ পর্ষদ তাতে সায় দিয়েছে। বিমা নিয়ন্ত্রকের সায় পেতে আর্জি জানানো হয়েছে। মন্ত্রিসভায় চূড়ান্ত সিলমোহর দেওয়া হবে। এ জন্য এলআইসির সিন্দুক থেকে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে। তাতেও রেহাই নেই। এর পরেও নিতে হবে সিংহভাগ পুঁজি জোগানোর দায়।
কংগ্রেস নেতা অহমেদ পটেলের প্রশ্ন, ‘‘কোটি কোটি সাধারণ মানুষ এলআইসিতে টাকা রেখেছেন। আইডিবিআই ব্যাঙ্কের আর্থিক অবস্থা বেহাল। কেন্দ্রকে উদ্ধার করতে কেন এলআইসিকে কাজে লাগানো হবে?’’
অর্থ মন্ত্রকের কর্তারাও মানছেন, এলআইসির প্রথম দায়বদ্ধতা তার পলিসিহোল্ডারদের কাছে। সংস্থাটিকে এমন সব জায়গায় লগ্নি করতে হবে, যেখান থেকে মুনাফা আসে। তবেই পলিসিহোল্ডারদের ভাল বোনাস দিতে পারবে তারা। কিন্তু সরকারের যাবতীয় দায় কাঁধে নিতে গেলে এলআইসির মুনাফার অঙ্ক কমবে।
তা হলে আইডিবিআই ব্যাঙ্কের দায় ঘাড়ে চাপানো কেন? মন্ত্রক সূত্রের ব্যাখ্যা, এ বছরের বিলগ্নিকরণের ৮০ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা ছুঁতে হলে এ ছাড়া উপায় নেই। কারণ এয়ার ইন্ডিয়া বিক্রি ধাক্কা খাওয়ায়, সেখান থেকে আয়ের সম্ভাবনা হিমঘরে।
অনেকে এ প্রসঙ্গে ওএনজিসির হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়ামের মালিকানা কেনার কথা তুলছেন। যেটিও এক রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাকে দিয়ে আর একটির শেয়ার কেনানো। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, এলআইসির ক্ষেত্রে তা আরও অনুচিত। কারণ তাদের টাকা আসে সরাসরি সঞ্চয়কারীদের পকেট থেকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy