প্রতীকী ছবি।
মাঠ থেকে তোলার মুখে প্রাকৃতিক দুর্যোগে গত বছর উৎপাদন কমেছিল আমন ও বোরো ধানের। এ বার এখনও পর্যন্ত বৃষ্টির দেখা কম। আমনের কেমন ফলন মিলবে, সে নিয়ে আশঙ্কায় মজুত করে রাখা ধান বাজারে পাঠাতে অনীহা দেখা যাচ্ছে চাষি ও ব্যবসায়ীদের একাংশের। এই দুইয়ের জাঁতাকলে, কমেছে চালের জোগান। দোসর হয়েছে জিএসটি চালু এবং রফতানি বৃদ্ধি। ফলশ্রুতিতে, রাজ্যের বাজারে ঊর্ধ্বমুখী চালের দাম।
মাসখানেকের মধ্যে নানা চালের দাম প্রতি কেজিতে ৫-১০ টাকা বেড়ে গিয়েছে বলে জানাচ্ছেন বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা। তাঁরা জানান, ২৫ কেজির স্বর্ণধানের চালের যে প্যাকেটের দাম ছিল ৬৫০-৬৮০ টাকা, গত কয়েক দিনে তা দাঁড়িয়েছে ৮০০-৮২৫ টাকা। মিনিকিট চালের ২৫ কেজির প্যাকেটের দাম ১১০০-১১৫০ টাকা থেকে হয়েছে ১২৫০-১৩০০ টাকা। মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়ার চাল বিক্রেতা জিয়াউল হকের কথায়, ‘‘গত কয়েক দিনে নানা চালের ২৫ কেজি প্যাকেটের দাম ১৫০-২০০ টাকা করে বেড়েছে।’’ পুরুলিয়ার চকবাজারে এক ক্রেতা বলেন, “গত মাসে যে চালের প্যাকেট কিনেছিলাম ৬২০ টাকায়, এখন তার দাম বলছে ৮১৫ টাকা!’’
চাষিরা জানাচ্ছেন, গত বছর খারাপ আবহাওয়ার জন্য আমন ধানের ফলন কম হয়েছিল। দুর্যোগের মধ্যে পড়েছিল বোরো ধানও। সার্বিক ভাবে উৎপাদন কমেছে। ফলে, চালের জোগান কম। এর মধ্যে, রাজ্য সরকার জেলায়-জেলায় বিভিন্ন চালকলের কাছে চাল কিনছে। সে জন্য চালকল মালিকেরা কিছু চাল মজুত রাখছেন। এ বছর বিদেশে চাল রফতানিও বেড়েছে বলে ব্যবসায়ীদের দাবি। কলকাতা, বর্ধমান থেকে নদিয়ার চাল ব্যবসায়ীদের অনেকের কথায়, ‘‘উৎপাদন কম হলেও, বিশ্ববাজারে পশ্চিমবঙ্গের চালের ভাল চাহিদা থাকায়, রফতানি হয়েছে ভালই। নানা রাজ্যে বন্যার কারণে ধান নষ্ট হওয়ায়, সেখানেও প্রচুর চাল পাঠানো হচ্ছে। তার জেরে স্থানীয় বাজারে জোগান কমছে।’’ কোচবিহার, জলপাইগুড়ির ব্যবসায়ীদের অনেকের আবার দাবি, কম দামি চাল বাংলাদেশে ভাল পরিমাণে রফতানি হয়েছে। তাই এখানে সে সব চালের দাম বৃদ্ধির প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
পূর্ব বর্ধমানের ‘রাইস ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সভাপতি কাঞ্চন সোমের দাবি, ‘‘গত বছর আমনে প্রায় ৩০ শতাংশ উৎপাদন কম হয়েছে। তার উপরে, মোটা চাল (আতপ) ভাল পরিমাণে বিদেশে রফতানি হয়ে গিয়েছে।’’ সংগঠন সূত্রে জানা যায়, পূর্ব বর্ধমানে প্রতিদিন ৩০ হাজার টন চাল উৎপাদন হত। তা এখন দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার টনে। জেলা থেকে দৈনিক বিভিন্ন বাজারে ১০ হাজার টন চাল পাঠানো হত। এখন হচ্ছে আড়াই হাজার টন। ব্যবসায়ীদের অনেকের দাবি, সমস্যা বাড়িয়েছে এই মরসুমে আমন চাষ নিয়ে আশঙ্কাও। এখনও তেমন ভারী বৃষ্টি না হওয়ায় কেমন ফলন মিলবে, চিন্তায় আছেন বহু চাষি। এই পরিস্থিতিতে, গোলায় মজুত ধান বিক্রি করতে চাইছেন না অনেকে। ‘পশ্চিমবঙ্গ ধান্য ব্যবসায়ী সমিতি’র রাজ্যের মুখপাত্র বিশ্বজিৎ মল্লিকের দাবি, ‘‘অনাবৃষ্টির কারণে চাষিরা ধান বিক্রি করতে ভয় পাচ্ছেন।’’ আরও দাম বৃদ্ধির আশায় অনেক ব্যবসায়ী গুদাম থেকে চাল বার করতে চাইছেন না বলেও অভিযোগ।
ব্যবসায়ীদের একাংশ আবার দুষছেন জিএসটি এবং পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিকেও। তাঁরা জানান, ২৫ কেজির প্যাকেট পর্যন্ত চালে জিএসটি চালু হয়েছে। মুর্শিদাবাদের এক চালকল মালিকের দাবি, ‘‘জিএসটি-সহ আনুষঙ্গিক খরচ বাড়ার প্রভাব চালের দামে পড়ছেই।’’ ঝাড়গ্রামের এক ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘ফেব্রুয়ারিতে মুড়ি তৈরির ৫০ কেজি চালের দাম ছিল ১২০০ টাকা। এখন তা ২৪০০ টাকা! শুনছি, জিএসটি-র জন্য এই অবস্থা।’’ উত্তরবঙ্গের অনেক ব্যবসায়ীর দাবি, এখানে প্যাকেটের চাল আসে মূলত দক্ষিণবঙ্গ থেকে। পেট্রোপণ্যের দাম বৃদ্ধিতে পরিবহণ খরচ বাড়ছে। চালের দামও বাড়ছে।
চালকল মালিক সমিতির রাজ্যের কার্যকরী সভাপতি আব্দুল মালেকের বক্তব্য, ‘‘একাধিক কারণে চাহিদা-জোগানের পার্থক্য হওয়ায়, চালের দাম বাড়ছে।’’ তবে বৃষ্টির পূর্বাভাস মিললে দাম কিছুটা কমবে, মনে করছেন তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy