ভোট প্রচারে আগাগোড়া হিলারি ক্লিন্টনকে ‘ডাইনি’ বলে গাল পাড়তেন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে আমেরিকার ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পরে মার্কিন গণতান্ত্রিক প্রথা মেনে সেই হিলারিকেই তিনি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন দেশসেবার জন্য। এ বার হোয়াইট হাউসে পা রাখার পরে আউটসোর্সিং (কাজ বাইরে পাঠানো) এবং এইচ-১বি ভিসা নিয়েও ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গি এই একই ভাবে ‘বদলাবে’ কি না, এখন সে দিকেই তাকিয়ে ভারতের শিল্পমহল। বিশেষত তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প। পরিস্থিতি কোন দিকে গড়াচ্ছে, সে দিকে সতর্ক চোখ রাখছে মার্কিন মুলুকে তথ্যপ্রযুক্তির মক্কা সিলিকন ভ্যালিও।
হোয়াইট হাউস দখলের লড়াইয়ে রিপাবলিকান প্রার্থী হিসেবে বার বার আউটসোর্সিংয়ের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন ট্রাম্প। আমেরিকায় চাকরি ছেঁটে সেই কাজ ভারতে পাঠানোর জন্য তুলোধোনা করেছেন আইবিএম-এর মতো সংস্থাকে। প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন আমেরিকার বাইরে মার্কিন সংস্থার তৈরি পণ্যে চড়া কর বসানোর। তিনি ক্ষমতায় এলে এইচ-১বি ভিসার সংখ্যা ক্রমশ শুকিয়ে আসতে পারে বলে শঙ্কিত বোধ করেছে এ দেশের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প। কারণ, মূলত ওই ভিসায় ভর করেই আমেরিকায় কর্মী পাঠায় তারা।
মেরুদণ্ডে আশঙ্কার এই ঠান্ডাস্রোত এখনও বহাল। তবু এ দেশের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের একটা বড় অংশের আশা, প্রার্থী হিসেবে প্রচারে যতটা গর্জেছিলেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রশাসনে ততটা বর্ষাবেন না ট্রাম্প। একে তো মার্কিন অর্থনীতির ভাল-মন্দ ভাবার দায় তাঁর ওপর বর্তাবে। সেই সঙ্গে তিনি ধনকুবের ব্যবসায়ী। ফলে ব্যবসায় ব্যয়-সঙ্কোচ কেন জরুরি, তুলনায় কম খরচে পাওয়া ভারতীয় কর্মী মার্কিন সংস্থাগুলির পক্ষে কতটা উপযোগী, তা ট্রাম্প বুঝবেন বলে তাঁদের আশা। সঙ্গে মার্কিন কর্পোরেট দুনিয়ার শক্তিশালী লবির প্রবল চাপ তো রয়েইছে। ভারতে তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলির সংগঠন ন্যাসকমের পূর্বাঞ্চলীয় কাউন্সিলের চেয়ারম্যান কমল অগ্রবাল ইতিমধ্যেই বলেছেন, ‘‘সম্প্রতি ট্রাম্প জানিয়েছেন, পরস্পরের সেরা বন্ধু হবে ভারত ও আমেরিকা।’’ তাঁর দাবি, আউটসোর্সিং নিয়ে ট্রাম্প নন, মূলত মুখর ছিলেন তাঁর পরামর্শদাতারা।
প্রকাশ্যে হবু মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে যে এ দেশের কোনও তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা চট করে মুখ খুলবে না, সেটাই প্রত্যাশিত। কিন্তু অনিশ্চয়তা আর আশঙ্কার ফল্গুস্রোত যে-বইছে, তা স্পষ্ট বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্তাদের সঙ্গে কথা বললেই। তাঁদের অনেকে বলছেন, এমনিতে ডেমোক্র্যাটদের তুলনায় রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টরা বরাবরই বেশি ‘ভারত বন্ধু’। ঐতিহাসিক পরমাণু-চুক্তিও হয়েছে জর্জ বুশের আমলে। প্রশ্ন হল, সেই ‘বাঁধা গত’ ট্রাম্প মানবেন তো?
তা ছাড়া, আউটসোর্সিং আটকে মার্কিন ভূমিপুত্রদের আরও বেশি কাজের বন্দোবস্তের প্রতিশ্রুতিই ক্ষমতায় এনেছে ট্রাম্পকে। ওই একই কারণে বাইরে থেকে কম বেতনের কর্মী আসার সংখ্যায় তিনি কোপ বসাবেন বলে আশাবাদী তাঁর সমর্থকরা। তাই অনেকের আশঙ্কা,যে-প্রতিশ্রুতি ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্টের তখ্তে বসাচ্ছে, তাকে কি একেবারে অগ্রাহ্য করা সম্ভব হবে তাঁর পক্ষে?
কথায় বলে, দক্ষ রাজনীতিক নির্বাচনী প্রচারে কবিতার ভাষায় কথা বলেন। কারণ, তখন ভোটারদের মনজয়ের পালা। কিন্তু তাঁকে প্রশাসন সামলাতে হয় গদ্যের ভাষায়। রূঢ় বাস্তব মাথায় রেখে। প্রেসিডেন্টের কুর্সিতে বসে ট্রাম্পও তেমনটাই করবেন বলে আশা করছে এ দেশের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প। কিন্তু খটকা হল, তিনি তো প্রথাগত রাজনীতির লোকই নন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy