কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। —ফাইল চিত্র
নাগাড়ে যাত্রী গাড়ির বিক্রি কমার দায় মঙ্গলবার নতুন প্রজন্মের ঘাড়ে চাপিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। বলেছিলেন, ইএমআই দিয়ে গাড়ি কেনার বদলে তাঁরা ওলা-উব্র বা মেট্রোয় চাপতেই বেশি আগ্রহী। বুধবার সেই দাবি ওড়াল শিল্প। জানাল, আসল কারণ ঝিমিয়ে থাকা অর্থনীতিতে রোজগারের নিশ্চয়তা উধাও হওয়াই। তাদের প্রশ্ন, লোকে এখন দুর্দিনের কথা ভেবে টাকা জমাবে না গাড়ি কিনবে?
মারুতি-সুজুকির কর্তা শশাঙ্ক শ্রীবাস্তবের স্পষ্ট জবাব, গাড়ি শিল্পে সঙ্কটের জন্য শুধু ওলা-উব্রের মতো অ্যাপ নির্ভর ট্যাক্সি পরিষেবা দায়ী নয়। মার্কিন মুলুকেও উব্র চুটিয়ে ব্যবসা করে। তার পরেও গাড়ি বিক্রি গত কয়েক বছরে বিপুল বেড়েছে সে দেশে। বরং তাঁর দাবি, ‘‘ভারতে রোজকার কাজে যেতে হয়তো অনেকেই ওলা-উব্র বা বাসে চাপেন। কিন্তু সপ্তাহ শেষে পরিবার নিয়ে বেড়াতে যেতে এখনও বহু মানুষ গাড়িই কিনতে চান।’’ হোন্ডা মোটরসাইকেলের প্রেসিডেন্ট মিনোরু কাটোর মতে, বিমার চড়া খরচ-সহ অন্যান্য সমস্যা এখন কিছুটা থিতিয়ে গিয়েছে। দেশে অর্থনীতি বেহাল বলেই সঙ্কটে গাড়ি শিল্প। তাই দু’চাকার বিক্রি মার খাচ্ছে। তাঁর মতে, বিএস-৬ বিধি এলে গাড়ির দাম আরও বাড়বে। সেটাও বড় চ্যালেঞ্জ। আর কংগ্রেসের তোপ, নির্মলার এই মন্তব্য বিজেপি সরকারের অদক্ষ, অপরিণত ও অনভিজ্ঞ দৃষ্টিভঙ্গিরই প্রতিফলন। অর্থনীতির করুণ অবস্থা নিয়ে তাঁর নির্মম পরিহাস।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ওলা উব্রের বৃত্ত এত সীমিত যে, কিছু লোক তাতে চড়লে ব্যক্তিগত গাড়ির বিপুল বাজার ধাক্কা খাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। ডিলারদের একাংশেরও দাবি, অনেকেই গাড়ির খোঁজখবর করছেন। কিন্তু স্থগিত রাখছেন কেনার সিদ্ধান্ত। তবে যাঁরা কিনছেন, তাঁদের বড় অংশ নবীন প্রজন্মের।
হাওড়ার বছর পঁয়ত্রিশের জয়ন্ত রাহা যেমন। বেসরকারি সংস্থার ওই ম্যানেজার এই প্রথম গাড়ি কেনার কথা ভেবেছিলেন। এখন বলছেন, ‘‘সম্প্রতি সংস্থায় কিছু কর্মী ছাঁটাই হয়েছে। তাই ওই ভাবনা আপাতত শিকেয় তুলেছি।’’ আবার নির্মাণ কাজে যুক্ত ছোট ব্যবসায়ী সন্দীপন চক্রবর্তীর শখ ৫ বছর অন্তর পুরনো গাড়ি বদলে নতুন কেনার। কিন্তু এ বার তা করেননি। তাঁর বক্তব্য, ‘‘ব্যবসার হাল ভাল নয়। হাতে কিছু টাকা রাখা দরকার। গাড়ি কিনে এখনই পকেট হালকা করতে চাই না।’’
শিল্পের যুক্তি
• সার্বিক যাত্রী গাড়ির ২-৩ শতাংশ ট্যাক্সি (হলুদ রঙের নম্বর প্লেট যুক্ত) পরিবহণ পরিষেবায় চলে।
• তার আবার অল্প অংশ অ্যাপ-ক্যাব পরিষেবায়।
• অ্যাপ-ক্যাব পরিষেবায় চলা গাড়ির তুলনায় সব মিলিয়ে যাত্রী গাড়ির বিক্রি কমেছে অনেক বেশি।
• মেট্রো বা বড় শহর ছাড়াও ছোট শহর, মফস্সল, গ্রামাঞ্চলে যেখানে অ্যাপ-ক্যাব নেই, সেখানেও কমছে যাত্রী গাড়ি বিক্রি।
• সার্বিক ভাবে অর্থনীতিতে চাহিদা ঝিমিয়ে পড়েছে।
• অর্থনীতির এই সঙ্কটে সরকারি-বেসরকারি দুই ক্ষেত্রেই চাকরির সুরক্ষা নিয়ে মাথা তুলেছে অনিশ্চয়তা। ফলে জমানোয় জোর দিচ্ছেন প্রায় সবাই।
• সর্বত্র বর্ষা ভাল না হওয়ায় চাষিদের আয়েও টান। ফলে দু’চাকার বাজার হারিয়েছে গ্রামেও।
• পুরনো গাড়ি বদলে নতুন কেনার সিদ্ধান্ত পিছোচ্ছেন অনেকেই।
• বেহাল অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের জেরে ধাক্কা বাণিজ্যিক গাড়ি বিক্রিতেও।
ঋণ কোথায়?
• গত এপ্রিল থেকে অগস্টে স্টেট ব্যাঙ্কে (বেঙ্গল সার্কল) গাড়ি ঋণের মঞ্জুরি কমেছে ৫০০টি।
• কিছু এনবিএফসির গাড়ি ঋণ কমেছে প্রায় ২০%।
*সব হিসেব শতাংশে
**গত এপ্রিল-জুনে বিক্রি কমার হিসেব তার আগের বছরের তুলনায়
***সূত্র ফাডা
ভাটা গাড়ির ঋণ বণ্টনেও। স্টেট ব্যাঙ্কের (বেঙ্গল সার্কেল) হিসেব, গত এপ্রিল-অগস্টে ঋণ মঞ্জুর আগের বছরের থেকে কমেছে। ব্যাঙ্ক নয় এমন আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিও (এনবিএফসি) নগদের অভাবে ধার দিতে পারছে না। এতেও ধাক্কা খেয়েছে গাড়ির বিক্রি।
এই অবস্থায় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রী নিতিন গডকড়ীর দাবি, চাহিদা চাঙ্গা করতে গাড়িতে জিএসটি কমানো নিয়ে তিনি কথা বলেছেন নির্মলার সঙ্গে। বল এখন অর্থমন্ত্রী, রাজ্য সরকার ও জিএসটি পরিষদের কোর্টে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy