Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

উত্তর-পূর্বের বাজার পাখির চোখ আইডিবিআই ব্যাঙ্কের

নিয়ন্ত্রণ-রাজের বেখেয়ালি নিয়মের শিকার আইডিবিআই ব্যাঙ্ক পশ্চিমবঙ্গ ও উত্তর পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিকেই মাথা ভাসানোর খড়কুটো হিসেবে দেখতে চাইছে। টিসিএসের প্রযুক্তি এবং উত্তর পূর্বাঞ্চল আর্থিক উন্নয়ন সংস্থার সঙ্গে হাত মিলিয়ে এই রাজ্যগুলির প্রত্যন্ত অ়ঞ্চলে পা রাখতে চাইছে সংস্থাটি।

পরিস্থিতি ব্যাখ্যায় খরাট। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

পরিস্থিতি ব্যাখ্যায় খরাট। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

সুপর্ণ পাঠক
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০১৬ ০২:১৫
Share: Save:

নিয়ন্ত্রণ-রাজের বেখেয়ালি নিয়মের শিকার আইডিবিআই ব্যাঙ্ক পশ্চিমবঙ্গ ও উত্তর পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিকেই মাথা ভাসানোর খড়কুটো হিসেবে দেখতে চাইছে। টিসিএসের প্রযুক্তি এবং উত্তর পূর্বাঞ্চল আর্থিক উন্নয়ন সংস্থার সঙ্গে হাত মিলিয়ে এই রাজ্যগুলির প্রত্যন্ত অ়ঞ্চলে পা রাখতে চাইছে সংস্থাটি। উদ্দেশ্য, শাখা খোলার খরচ কমিয়ে অগ্রাধিকার ক্ষেত্রে ব্যবসা বাড়ানো।

৫২ বছর আগে শিল্পোন্নয়ন ব্যাঙ্ক হিসেবে তৈরি হয়েছিল আইডিবিআই ব্যাঙ্ক। এখন তা স্বীকৃত বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ক হিসেবে। গত অর্থবর্ষে তারা ৩,৬৬৪ কোটি টাকার ক্ষতি দেখিয়েছে।

ব্যাঙ্কের ম্যানেজিং ডিরেক্টর কিশোর খরাটের দাবি, ঘুরে দাঁড়ানোর রসদ মজুত। তার আগের বছর লাভের অঙ্ক ছিল ৮০০ কোটি টাকার বেশি। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নতুন নিয়ম মেনে সম্পদের বিন্যাস করাতেই এই ক্ষতি দেখাতে হয়েছে। তবে আবার সেই জায়গায় পৌঁছতে ঘর গোছানোর কাজ শেষ বলে দাবি খরাটের।

১২ বছর আগে শিল্পোন্নয়নের জন্য তৈরি আর্থিক সংস্থাটি সরকারি নির্দেশে রাতারাতি বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। মাত্র ১২টি শাখা নিয়ে অগ্রাধিকার ক্ষেত্রে ঋণ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা কখনই মেটাতে পারেনি তারা। কারণ শিল্পকে ঋণ দেওয়ার জন্য তৈরি এই সংস্থার সাধারণ বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কে রূপান্তরিত হওয়ার আগে প্রত্যন্ত অঞ্চলে শাখার প্রয়োজন ছিল না। বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ক হিসেবে রূপান্তরের দিন থেকেই অগ্রাধিকার ক্ষেত্রে ঋণ তহবিলের ৪০ শতাংশ টাকা খরচের দায় বর্তায় আইডিবিআইয়ের উপর।

এর শাস্তি হিসেবে ঋণ তহবিলের ৪০% টাকা গ্রামীণ পরিকাঠামো উন্নয়ন তহবিলে জমা রাখতে হয়েছে গত ১২ বছর ধরেই। সঞ্চয়কারীদের ৯ শতাংশের উপর সুদ দিয়ে, তার ৪০ শতাংশ টাকায় ২% সুদ ঘরে তোলা মানে স়ঞ্চয়কারীদের সুদ মেটাতে হয়েছে ব্যাঙ্কের নিজের টাকা থেকেই। সেই কারণেই ব্যাঙ্কটি জন্মলগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত কখনও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারেনি।

কৃষির মতো অগ্রাধিকার ক্ষেত্রে ঋণ দেওয়ার পরিকাঠামো গড়তে ২০০৬ সালে ইউনাইটেড ওয়েস্টার্ন ব্যাঙ্ককে অধিগ্রহণ করে আইডিবিআই। কিন্তু অগ্রাধিকার ঋণের চাহিদা মেটাতে ২৩০টি শাখার এই ব্যাঙ্ক যথেষ্ট ছিল না। শিল্পোন্নয়ন ব্যাঙ্ক হিসাবে আইডিবিআই ছিল শিল্প ঋণের অন্যতম সূত্র। ঋণ তহবিলও ছিল মোটা। ব্যাঙ্ক হিসেবে রূপান্তরিত হওয়ার সেই তহবিলই গলার কাঁটা হয়ে যায় আইডিবিআইয়ের গ্রামীণ শাখার অভাবে।

খরাট কলকাতায় আনন্দবাজারকে বলেন, এই সমস্যা মেটাতে গত তিন বছরে ১৮০০ টি নতুন শাখা খুলেছে ব্যাঙ্কটি। এই কারণে খরচ ও আয়ের অনুপাতও বেড়ে ৪৫ শতাংশে দাঁড়ায়। প্রথাগত শাখা খোলার ও তার পরিচালনার খরচ আর একই সঙ্গে অগ্রাধিকার ক্ষেত্রে ঋণ দেওয়ার যথাযথ পরিকাঠামো না থাকায় ব্যাঙ্কের ব্যালান্সশিটের উপর তার প্রভাব পড়েছে।

খরাটের দাবি, শিল্পের কাছে ঋণের জন্য আইডিবিআই-ই প্রথম গন্তব্য। কিন্তু অগ্রাধিকার ক্ষেত্রে ঋণের দায় মেটানোর অক্ষমতার জন্যই সংস্থাটি বেশি লাভজনক শিল্পঋণের পথে হাঁটতে অপারগ ছিল এত দিন।

পরিস্থিতি ঘুরেছে। এ বার তাঁরা জোর দেবেন পড়ে থাকা ঋণের টাকা ফিরিয়ে আনা, নতুন ঋণ এবং জমার পরিমাণ বাড়ানোর উপর।

অগ্রাধিকার ক্ষেত্রে ঋণের দাবিও তাঁরা মিটিয়ে দেওয়ায় আরআইডিএফ-এ শাস্তিমূলক জমার পরিমাণ ৭০ হাজার কোটি টাকা থেকে কমে ২৪ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। এই মুহূর্তে ব্যবসার যা অবস্থা তাতে এই দায়ও ব্যাঙ্কের ঘাড়ে বর্তাবে না বলেই মনে করছেন তিনি।

আর এখানেই আসছে সবার জন্য ব্যাঙ্ক প্রকল্পে পূর্ব এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের বাজারের প্রয়োজনীয়তা। এই অঞ্চলে প্রত্যন্ত এলাকায় ‘কিয়স্ক’ ব্যাঙ্ক চালু করবে আইডিবিআই। যার মাধ্যমে জমা ও ঋণের কাজ চলবে প্রথাগত শাখার মতোই। কিন্তু তার ১০% খরচে। এবং এখানকার কিছু ক্ষেত্রে আইডিবিআইয়ের ব্যবসা বৃদ্ধির হার প্রায় ৫০%। তাই এই অঞ্চলকেই তাঁদের অগ্রাধিকার ভিত্তিক ব্যবসা বাড়ানোর জন্য পাখির চোখ হিসাবে দেখছে ব্যাঙ্কটি।

খরাটের দাবি, তাঁদের অনুৎপাদক সম্পদ (মোট সম্পদের ১১%) আপাতদৃষ্টিতে বেশি মনে হলেও তা সমস্যার নয়। কারণ ঋণ তহবিল বাড়লেই এই অনুপাত কমে আসত। কিন্তু তা করা যায়নি পরিকাঠামোর অভাবে। যা চলতি অর্থবর্ষ থেকেই ইতিহাস হয়ে গিয়েছে। এ বার জোর ২০১৯ সালের মধ্যে মোট শাখার সংখ্যা ৪,০০০-এ নিয়ে গিয়ে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কের তকমাকে সার্থক করায়।

অন্য বিষয়গুলি:

IDBI Bank North-east market
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE