‘সুদ’ ও ‘বর্ষা’। ছোট দু’টি শব্দ। কিন্তু ভারতের প্রেক্ষিতে দু’টির গুরুত্বই যে কতটা গভীর তা বুঝছে অর্থনীতি।
গত বৃহস্পতিবার ঋণনীতিতে ফের রেপো রেট (যে সুদে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক স্বল্প মেয়াদে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিকে ঋণ দেয়) কমিয়েছে শীর্ষ ব্যাঙ্ক। এই নিয়ে পর পর তিন বার ২৫ বেসিস পয়েন্ট করে সুদ কমাল তারা। ফলে রেপো রেট নেমে এল ৫.৭৫ শতাংশে। রেপো রেট কমায় বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলি যেহেতু কম সুদে ঋণ পায়, ফলে আশা করা যায় তারাও বিভিন্ন ধরনের ঋণে সুদ কমাবে। সংস্থাগুলির পাশাপাশি তাতে সরাসরি উপকৃত হবে বিভিন্ন শ্রেণির ঋণগ্রহীতারা। বাড়ি, গাড়ির ঋণে সুদ কমলে সুবিধা হবে মানুষেরও।
কিন্তু গত দু’টি ঋণনীতিতে সুদ কমানো হলেও তার পুরো সুবিধা গ্রাহককে দেয়নি ব্যাঙ্কগুলি। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের হিসেব অনুযায়ী, ৫০ বেসিস পয়েন্টের মধ্যে গড়ে মোটামুটি ২১ বেসিস পয়েন্টের সুবিধা গ্রাহকদের দিয়েছে তারা। তবে অনেকে মনে করছে, এই দফায় ব্যাঙ্কগুলি বিভিন্ন ক্ষেত্রের ঋণের উপরে সুদ কমাবে।
এর কারণ মূলত দু’টি। প্রথমত, অনেকের অভিযোগ, রেপো রেট বাড়লে সুদ বাড়ানোর ব্যাপারে ব্যাঙ্কগুলি যতটা তৎপর হয়, রেপো রেট কমালে সুদ কমানোর ব্যাপারে ততটা তৎপরতা দেখা যায় না। দ্বিতীয়ত, গত অর্থবর্ষে আর্থিক বৃদ্ধি নেমেছে ৭ শতাংশের নীচে (৬.৮%)। আর শেষ ত্রৈমাসিকে তা হয়েছে ৫.৮%। সুতরাং অর্থনীতিতে গতি ফেরানোর দায়ও রয়েছে সরকারের কাঁধে। সে জন্য কম খরচে শিল্পকে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। আবার সুদ কমার ফলে মাসিক কিস্তি কমলে কিছুটা হলেও হাল ফিরবে বাড়ি, গাড়ির বাজারের। উপকৃত হবে সেই ক্ষেত্রগুলিও। যাদের গুরুত্ব অর্থনীতিতে কম নয়।
ক্ষুদ্র সঞ্চয় বনাম ব্যাঙ্কের জমা
প্রকল্প/মেয়াদ ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্প (%) স্টেট ব্যাঙ্কে সুদ (%) ১ বছর ৭.০০ ৭.০০ ২ বছর ৭.০০ ৬.৭৫ ৩ বছর ৭.০০ ৬.৭০ ৫ বছর ৭.৮০ ৬.৬০ জাতীয় সঞ্চয় পত্র (৫ বছর) ৮.০০ সিনিয়র সিটিজেন্স সেভিংস ৮.৭০ সুকন্যা সমৃদ্ধি ৮.৫০ ১০ বছর মেয়াদি বন্ড ইল্ড ৬.৯৭
ইতিমধ্যেই অবশ্য স্টেট ব্যাঙ্ক এমন গৃহঋণ প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেছে, যেখানে সুদ রেপো রেটের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হবে। সে ক্ষেত্রে অন্যান্য ব্যাঙ্কের উপরেও বাড়ির ঋণে সুদ কমানো বা একই ধরনের প্রকল্প চালু নিয়ে চাপ থাকবে বলে মত অনেকের।
তবে এটা ঠিক যে, সুদ কমলে জমার উপরেও সুদ কমাতে পারে ব্যাঙ্কগুলি। তা হলে সমস্যায় পড়বেন সুদ নির্ভর মানুষ। তবে অনেকের যুক্তি, এখন মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে। তাই সুদ কমানোর উপযুক্ত সময় এখনই। সে ক্ষেত্রে জমায় সুদ কমলেও ওই অংশের মানুষের সমস্যা হবে তুলনামূলক ভাবে কম। ঘটনাচক্রে, জমায় সুদ কমানোর পক্ষে সওয়াল করেছেন কোটাক মহীন্দ্রা ব্যাঙ্কের কর্ণধার উদয় কোটাক। তাঁর অভিযোগ, স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পগুলিতে সুদ বেশি থাকায় ব্যাঙ্কগুলি পাল্লা দিতে পারছে না। তাই ব্যাঙ্কে আমানত বৃদ্ধির হার কমছে। তাঁর দাবি, স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পগুলিতেও সরকারি ঋণপত্রের বদলে শীর্ষ ব্যাঙ্কের সুদের সঙ্গে তার সাযুজ্য থাকুক।
রেপো রেটের ওঠাপড়া
তারিখ সুদ (%)
৩০/০৭/২০০৮ ৯.০০
২১/০৪/২০০৯ ৪.৭৫
২৫/১০/২০১১ ৮.৫০
০৪/০৩/২০১৫ ৭.৫০
০৮/০৬/২০১৭ ৬.২৫
০২/০৮/২০১৭ ৬.০০
০৬/০৬/২০১৮ ৬.২৫
০১/০৮/২০১৮ ৬.৫০
০৭/০২/২০১৯ ৬.২৫
০৪/০৪/২০১৯ ৬.০০
০৬/০৬/২০১৯ ৫.৭৫
এই যুক্তি অবশ্য অনেকেই মানতে নারাজ। তাঁদের বক্তব্য, সে ক্ষেত্রে এক ধাক্কায় ওই প্রকল্পগুলির সুদ কমবে ১-১.৫% (স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্প ও ব্যাঙ্ক জমার সুদের তুলনা দেওয়া হল সারণিতে)। তাতে চাপে পড়তে পারে সরকার। অনেকের আবার মত, শুধু ডাকঘরে নয়। বহু তহবিল যাচ্ছে মিউচুয়াল ফান্ডেও। এপ্রিলের শেষে ফান্ডগুলির সম্পদ ছুঁয়েছে ২৪.৭৯ লক্ষ কোটি টাকা। যা স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পগুলির তুলনায় কয়েক গুণ বেশি।
রেপো কমলে সাধারণত খুশি হয় বাজার। এ বার কিন্তু দেখা গিয়েছে উল্টো ছবি। সেনসেক্স খুইয়েছে ৫৫৪ পয়েন্ট। নিফ্টি ১৭৮। বিশেষজ্ঞদের মতে, উৎপাদন বৃদ্ধি ও পণ্যের চাহিদা কমায় বেশি সুদ ছাঁটাইয়ের আশা করেছিল বাজার। আশা ছিল ব্যাঙ্ক নয় এমন আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির নগদের সমস্যা মেটানোয় পদক্ষেপ করা হবে।
সব শেষে আসা যাক বর্ষার কথায়। সাত দিন দেরিতে হলেও শনিবার বর্ষা ঢুকেছে কেরলে। এ রাজ্যে ঢুকতে আরও ১২-১৪ দিন। দেশে পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হলে এবং তার সুষম বণ্টন না হলে, তা অর্থনীতির পক্ষে বড় অসুখের কারণ হয়ে উঠতে পারে। সে ক্ষেত্রে ফসল মার খাবে। বাড়বে খাদ্যপণ্যের মূল্য। ঝিমিয়ে পড়তে পারে গ্রামীণ অর্থনীতি। কমবে চাহিদা। যা কেন্দ্র ও মানুষের পক্ষে ভাল নয়। তাই বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, পরিকাঠামোর বাজারেও দেশে বর্ষার গুরুত্ব অসীম।
(মতামত ব্যক্তিগত)
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy