আইএল অ্যান্ড এফএস নিয়ে পুরোদস্তুর তদন্তে নামল সিরিয়াস ফ্রড ইনভেস্টিগেশন অফিস (এসএফআইও)।
পরিকাঠামোয় ঋণদাতা সংস্থা আইএল অ্যান্ড এফএসকে ঘুরিয়ে দাঁড় করানোর লক্ষ্যে জাতীয় কোম্পানি আইন ট্রাইবুনালের (এনসিএলটি) সায় নিয়ে সরকার পর্ষদ ভেঙেছে সোমবার। সেখানে বসিয়েছে তাদের মনোনীত ছয় সদস্যকে। এ বার সংস্থার শীর্ষ স্তরে কোনও অনিয়ম হয়েছে কিনা, তা খুঁজে বার করতে পুরোদস্তুর তদন্তে নামল কেন্দ্রীয় কোম্পানি বিষয়ক মন্ত্রকের অধীন সিরিয়াস ফ্রড ইনভেস্টিগেশন অফিস (এসএফআইও)। তড়িঘড়ি সক্রিয় হল পদচ্যুত ডিরেক্টরদের দেশের বাইরে চলে যাওয়া আটকাতে। কারণ, ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে, সংস্থা প্রবল আর্থিক সঙ্কটের মধ্যে চলে যাচ্ছে দেখেও কেন ওই কর্তারা আগেভাগে সতর্ক হলেন না? কিংবা বার্তা দিলেন না সাবধান হওয়ার?
সংশ্লিষ্ট মহল অবশ্য বলছে, ভোটের মুখে দাঁড়িয়ে আর কোনও ঝুঁকি নেওয়া ঠিক হবে না বুঝেই আইএল অ্যান্ড এফএস নিয়ে আচমকা তৎপরতা বাড়াল মোদী সরকার। কারণ, ঋণ খেলাপি বিজয় মাল্য কিংবা পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কে প্রতারণার কাণ্ডে অভিযুক্ত নীরব মোদী, মেহুল চোক্সীদের দেশ ছাড়া নিয়ে বিরোধীদের তোপের মুখে পড়েছে তারা। ‘বন্ধুদের বাঁচানো’-র অভিযোগ তুলে তাদের নিয়ম করে বিঁধছে কংগ্রেস। ইতিমধ্যেই মদতের অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে আইএল অ্যান্ড এফএসের ক্ষেত্রেও।
অর্থ ও কোম্পানি বিষয়ক মন্ত্রকের সূত্র বলছে, সময় থাকতে কেন সাবধান করা হয়নি, তারই তদন্ত হবে। সে ক্ষেত্রে আইএল অ্যান্ড এফএসের প্রাক্তন এগ্জ়িকিউটিভ ডিরেক্টরদের (ইডি) বিরুদ্ধে কোম্পানি আইন ভাঙার অভিযোগে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়া পথ নেই। গোষ্ঠীর ১৬৯টি সংস্থাতেই তদন্ত চালানো হবে। কোম্পানি নিবন্ধকের প্রাথমিক রিপোর্টও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সরকারি সূত্রের খবর, মঙ্গলবার মুম্বইয়ে সংস্থার দফতরে হানা দিয়ে বেশ কিছু কম্পিউটার ও সার্ভার বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। আটক করা হয়েছে বহু নথি। নতুন পর্ষদকেও বার্তা দেওয়া হয়েছে, কী ভাবে সংস্থাটি সঙ্কটের মুখে পড়ল, তা খতিয়ে দেখার। চার প্রাক্তন শীর্ষ কর্তা বি পার্থসারথি, হরি শঙ্করন, রমেশ বাওয়া ও কে রামচাঁদের বিরুদ্ধে ‘লুকআউট নোটিস’ জারি হয়েছে। এ বার তাঁদের পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করার জন্যও আদালতের দ্বারস্থ হতে পারে সরকার।
আতসকাচে
• মুম্বইয়ে আইএল অ্যান্ড এফএসের দফতরে হানা এসএফআইও-র।
• বাজেয়াপ্ত কম্পিউটার, সার্ভার।
• প্রাক্তন ইডি-দের দেশ ছাড়া আটকাতে চায় কেন্দ্র।
• প্রাক্তন শীর্ষ কর্তা রমেশ বাওয়া, ও বি পার্থসারথি, হরি শঙ্করন, ও কে রামচাঁদের বিরুদ্ধে জারি ‘লুক-আউট নোটিস’।
• পাসপোর্ট বাজেয়াপ্তের জন্য আদালতে যেতে পারে কেন্দ্র।
• আইএল অ্যান্ড এফএস গোষ্ঠীর ১৬৯টি সংস্থাতেই তদন্ত চালাবে এসএফআইও।
• কোম্পানি নিবন্ধকের প্রাথমিক রিপোর্টও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
কেন্দ্রের অভিযোগ
সংস্থা, তার শাখা ও সহযোগীদের আর্থিক অবস্থা ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখানো হয়েছিল। প্রায় ২০,০০০ কোটি টাকার এমন সম্পদের কথা বলা হয়েছিল, যা সংস্থার ছিল না। তাদের দেখানো মোট আয়ের ৫০% সংস্থার ঝুলিতে আসেনি।
বিরোধীদের কটাক্ষ
সংস্থাটির নতুন পরিচালন পর্ষদেও এমন কিছু ডিরেক্টর রয়েছেন, যারা কিংফিশার এয়ারলাইন্সের পর্ষদেও ছিলেন। দেশে কি এই ছ’জনই রয়েছেন?
গৌরব বল্লভ, কংগ্রেস মুখপাত্র
অর্থ মন্ত্রকের এক কর্তার দাবি, সংস্থাটি বহু পরিকাঠামো প্রকল্প তৈরির সঙ্গে যুক্ত ছিল। ফলে তারা ডুবলে অনেক প্রকল্পের কাজ আটকে যেত। ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটের আগে প্রচুর শ্রমিক রোজগার হারাতেন। সরকারি পদক্ষেপের আগে সেই দিকটিও ভাবা হয়েছে। সম্প্রতি দেশের দীর্ঘতম সুড়ঙ্গ চেন্নাই-নাশরির কাজ করেছে আইএল অ্যান্ড এফএস। জম্মু-কাশ্মীরে লাদাখের সঙ্গে সংযোগকারী প্রায় ৬,৮০০ কোটি টাকার জোজিলা সুড়ঙ্গ তৈরির দায়িত্বেও ছিল তারা।
কোম্পানি বিষয়ক মন্ত্রকের বক্তব্য, সংস্থার দাবি আর তাদের প্রকৃত আর্থিক অবস্থা, আয়, সম্পদের হিসেবে অসামঞ্জস্য ধরা পড়েছে। সামঞ্জস্য ছিল না শেয়ার মূলধনের সঙ্গে ঋণেরও। শেয়ার মূলধনের তুলনায় ঋণের অনুপাত যা হওয়া উচিত, বাস্তবে ছিল তার থেকে অনেক বেশি। ফলে সংস্থাটি ঋণের জালে জড়িয়েছে। কিন্তু সংস্থার ম্যানেজমেন্ট পুরো বিষয়টিকে ধামাচাপা
দিয়ে রেখেছিলেন।
এ দিকে, আইএল অ্যান্ড এফএসের পুরনো স্বাধীন ডিরেক্টরেরা নতুন বোর্ডকে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সদ্য পদ হারানো চেয়ারম্যান এস বি মাথুর-সহ পাঁচ পুরনো স্বাধীন ডিরেক্টর নতুন নন-এগ্জ়িকিউটিভ চেয়ারম্যান উদয় কোটাককে চিঠি দিয়ে এই ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy