২০১২ সালের ২৬ নভেম্বর। সোনার দর ছিল তুঙ্গে। প্রতি ১০ গ্রাম ২৪ ক্যারাট সোনা ৩৩ হাজার টাকা। আজ ২০১৫ সালের ২৬ নভেম্বর। ঠিক তিন বছরের মাথায় ওই দাম কমেছে ৭ হাজার টাকা। এ দিন কলকাতার সোনাপট্টিতে বেলা ২.৩০ মিনিটে প্রতি ১০ গ্রাম ২৪ ক্যারাট সোনা বিক্রি হয়েছে ২৫,৬০০ টাকা দরে।
তা হলে সোনার দাম কি তলানিতে এসে ঠেকেছে? এটাই কি গয়না কেনা বা সোনায় লগ্নি করার উপযুক্ত সময়? এই প্রশ্নগুলিই এখন গয়না ব্যবসায়ী থেকে ক্রেতা, সকলের মনে উঁকি দিচ্ছে।
উত্তরে সোনার বাজার বিশেষজ্ঞরা কিন্তু এক জায়গায় আসতে পারছেন না। কেউ কেউ মনে করছেন, এটাই সোনা কেনার প্রকৃষ্ট সময়। কেননা এর পর দাম বাড়তে থাকবে। অন্য এক শ্রেণির বিশেষজ্ঞ অবশ্য মনে করেন, সোনার দাম যে-আরও নীচে যাবে না, তা এখনই হলফ করে বলা যায় না।
গয়না ব্যবসায়ীরা একবাক্যে বলছেন, দাম যা কমার তা কমে গিয়েছে। কিছু দিন পর থেকেই তা ফের বাড়তে থাকবে। সেই সম্ভাবনা অবশ্য কেউই উড়িয়ে দিচ্ছেন না। কারণ, জানুয়ারি মাস থেকেই শুরু হচ্ছে বিয়ের মরসুম। তখন স্বাভাবিক ভাবেই বাড়বে গয়নার চাহিদা। যার হাত ধরে বাড়বে সোনার দামও। স্বর্ণশিল্প বাঁচাও কমিটির কার্যকরী সভাপতি বাবলু দে বলেন, ‘‘বিয়ের গয়না কেনা ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে। এখন সোনার চাহিদা বাড়বে। তাই তার দামও বাড়বে বলে আমার ধারণা।’’
তবে বাবলুবাবু মনে করেন, ‘‘সম্প্রতি কেন্দ্র গোল্ড বন্ড এবং গোল্ড মানিটাইজেশন প্রকল্প চালু করেছে। ওই সব প্রকল্প যদি সফল হয় এবং গোল্ড মানিটাইজেশন প্রকল্পের মাধ্যমে বিভিন্ন ট্রাস্ট এবং দেবস্থান থেকে যদি সোনা সরকারের ঘরে আসে, তা হলে সোনার দাম আরও কমতে পারে। তবে এ পর্যন্ত যা খবর পাওয়া গিয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে, ওই সব প্রকল্পে এখনও তেমন কোনও সাড়াই পাওয়া যায়নি।’’
গয়না ব্যবসায়ীদের সঙ্গে অনেকটাই একমত ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অব হলমার্কিং সেন্টারের সভাপতি হর্ষদ অজমেরা। তিনি মনে করেন, এটাই সোনায় লগ্নি করার উপযুক্ত সময়। অজমেরা বলেন, ‘‘দাম যা-কমার ছিল, তার প্রায় ৯০ শতাংশই কমে গিয়েছে। মার্কিন শীর্ষ ব্যাঙ্ক সুদ বাড়াবে বলে খবর রয়েছে। তা হলে দাম আরও কিছুটা কমতে পারে। কিন্তু সে ক্ষেত্রেও প্রতি ১০ গ্রামে ৪০০ বা ৫০০ টাকার বেশি দর কমবে বলে মনে হয় না। তবে দাম যে-তলানিতে এসেছে, সেখান থেকে যদি বাড়তে শুরু করে, তা হলে প্রতি ১০ গ্রামে ১ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত বাড়লেও অবাক হওয়ার কিছু নেই।’’
তবে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে অনেকেই কিন্তু মনে করেন, সোনার দামে এখনও স্থিতিশীলতা আসেনি। সোনায় আমদানি শুল্ক ২% থেকে ১০ শতাংশে বাড়ানোর ফলে ভারত থেকে সোনার গয়নার রফতানি কমেছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে অতি সম্প্রতি কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রক ওই শুল্কের হার কমানোর বিষয়টি বিবেচনা করার আর্জি জানিয়েছে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের কাছে। ওই সব বিশেষজ্ঞদের ধারণা, আমদানি শুল্ক কমলে স্বাভাবিক ভাবেই তার প্রভাব পড়তে পারে সোনার দামের উপরও। কমতে পারে দাম।
অবশ্য এ ক্ষেত্রেও অল ইন্ডিয়া জেম অ্যান্ড জুয়েলারি এক্সপোর্ট প্রমোশন কাউন্সিলের প্রাক্তন ভাইস চেয়ারম্যান পঙ্কজ পারেখ বলেন, ‘‘আমরা দীর্ঘ দিন ধরেই কেন্দ্রের কাছে সোনার আমদানি শুল্ক কমানোর আর্জি জানিয়ে আসছি। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। অবশ্য এ বার বাণিজ্য মন্ত্রক থেকে ওই আর্জি পেশ করা হয়েছে। ফলে দেখা যাক কী হয়।’’
ডলারের সাপেক্ষে টাকার দর কমাও সোনার দামের উপর প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। পঙ্কজবাবু বলেন, ‘‘আন্তর্জাতিক বাজারে এই মুহূর্তে সোনার যে-দাম চলছে, তাতে ভারতে প্রতি ১০ গ্রাম ২৪ ক্যারাট সোনার দাম দাঁড়ায় ২৩ হাজার টাকা। এর সঙ্গে আমদানি শুল্ক এবং যুক্তমূল্য কর বা ভ্যাট যোগ করে দাম দাঁড়াচ্ছে ২৫,৭০০ মতো। এ বার আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম এবং ভারতে তার আমদানি শুল্ক কমলেও টাকা যদি অনেকটা পড়ে যায়, তা হলে সোনার দাম কমার সম্ভাবনা থাকবে বলে আমার মনে হয় না। কারণ, ভারতে যে-সোনা ব্যবহৃত হয়, তার প্রায় পুরোটাই আমদানি করা। আর আন্তর্জাতিক বাজারে সোনা কিনতে হয় ডলারে। তাই টাকার দাম কমে ডলারের দাম বেড়ে গেলে, বিশ্ব বাজারে সোনার দাম কমলেও টাকার অঙ্কে ভারতে তার দাম কমবে, এমনটা হলফ করে বলা যায় না।’’
এমনকী চোরাচালানও প্রভাব ফেলতে পারে সোনার দামে। ওয়েস্ট বেঙ্গল বুলিয়ন মার্চেন্টস অ্যান্ড জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সম্পাদক অনিল আঢ্য বলেন, ‘‘এখন বাংলাদেশ সীমান্তে কড়াকড়ির জন্য সোনার চোরাপথে আমদানি কিছুটা কমেছে। পরে তা বাড়তে পারে। তা হলে সোনার জোগান বাড়বে। ফলে দাম কিছুটা কমতে পারে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy