ছবি: সংগৃহীত
ভারতে বিক্রি বন্ধ করলেও, ভবিষ্যতে ক্রেতাদের গাড়ি মেরামতির ব্যবস্থা চালু রাখার আশ্বাস দিয়েছে জেনারেল মোটরস (জিএম)। প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ডিলারদের পাশে থাকারও। কিন্তু কত দিন এই ব্যবস্থা চালু থাকবে, তার নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না ডিলাররাই। ফলে দোটানায় ক্রেতারা, যাঁদের গ্যারাজে রয়েছে সংস্থার গাড়ি। তাঁদের কেউ অন্য সংস্থার শো-রুমে ছুটছেন তা বদলে নিতে। কেউ বা ‘জলের দরে’ এখনই না বেচে জল মাপতে চাইছেন।
গত মে মাসে জিএম জানায়, এ বছরের শেষ থেকে ভারতে আর গাড়ি বেচবে না সংস্থা। যদিও তারা একই সঙ্গে জানিয়ে দিয়েছে, বহাল থাকবে গাড়ি তৈরি ও রফতানি। চালু থাকবে গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলিতে শেভ্রলে (ভারতে শেভ্রলে ব্র্যান্ডেই গাড়ি বেচত জিএম) গাড়ি সারাইয়ের পরিষেবা কেন্দ্র। মিলবে গাড়ির ‘ওয়্যার্যান্টি’, রাস্তার ধারের সহায়তা (রোড সাইড অ্যাসিস্ট্যান্স) ও যন্ত্রাংশের জোগানও। এ সবের জন্য ডিলারদের বিশেষ ‘প্যাকেজ’ দিতে কথা চলছে।
কিন্তু এরই মধ্যে কলকাতায় জিএমের ডিলার, ধূলিচাঁদ মোটরসের কর্ণধার রবি সানেই বলেন, ‘‘এখনও পরিষেবা দিচ্ছি। কিন্তু সংস্থা হঠাৎ বিক্রি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় কত দিন তা চালু থাকবে নিশ্চিত নয়।’’ তাঁর অভিযোগ, সংস্থার সঙ্গে তাঁদের ক্ষতিপূরণের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়নি। কথাবার্তা ফলপ্রসু না হলে আদালতে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা।
আর এখানেই জন্ম নিচ্ছে অনিশ্চয়তা। যাঁদের শেভ্রলে রয়েছে, তাঁরা অনেকেই ভয় পাচ্ছেন গাড়িটি রাখতে। যেমন, নিউটাউন-রাজারহাটের এক তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্মী রঞ্জন দে বছর সাতেকের ‘শেভ্রলে-বিট’ বদলাতে চান। তাঁর কথায়, ‘‘পুরনো হলেও গাড়িটির অবস্থা ভাল। কিন্তু অনিশ্চয়তার কথা ভেবে বদলে নেওয়ার কথা ভাবছি।’’ কাজের ফাঁকে এ নিয়ে খোঁজখবর করতে শুরুও করে দিয়েছেন তিনি।
• ১৯৯৬: ভারতে ফের পা জেনারেল মোটরসের
• ২০০৩: দেশে এল শেভ্রলে ব্র্যান্ডের গাড়ি
• ২০১৫: ১০০ কোটি ডলারের লগ্নি পরিকল্পনা ঘোষণা
• জানুয়ারি, ২০১৭: সংস্থা জানাল, স্থগিত থাকছে লগ্নি
• মে, ২০১৭: ডিসেম্বরের মধ্যে গাড়ি বিক্রি বন্ধের ঘোষণা। বহাল থাকবে গাড়ি তৈরি ও রফতানি
অস্টিন-হুন্ডাইয়ের কর্ণধার সঞ্জয় পতোদিয়া জানান, তাঁদের শো-রুমে গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে একটিও শেভ্রলে বদল হয়নি। পরের তিন মাসে একটি করে হয়। জুনে শেভ্রলে বদলে হুন্ডাইয়ের গাড়ি কেনেন ছ’জন। মোহন মোটরসের কর্ণধার গৌরব বজাজেরও দাবি, নিসান, হুন্ডাই, অডির শো-রুমে বহু শেভ্রলে-মালিকই আসছেন। তাঁর কথায়, ‘‘তবে অনেকেই কিছুটা বিভ্রান্ত। জিএসটি চালু হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন, নাকি এখনই গাড়ি বদলাবেন, তা নিয়ে দ্বিধায়।’’
দ্বিধায় থাকার আরও একটা কারণ রয়েছে। বিক্রি বন্ধের কথা ঘোষণার পরে এখন শেভ্রলে বদলানোর ক্ষেত্রে দাম আর ততটা উঠছে না। অর্থাৎ পুরনো গাড়ি বেচলে যতটা দাম পাওয়া উচিত, তার চেয়ে কম দিচ্ছেন অন্য সংস্থার ডিলাররা। পতোদিয়া বলেন, ‘‘এর কারণ শেভ্রলের দ্বিতীয় বার বিক্রির দামও তো কমে যাচ্ছে।’’
‘জলের দরে’ তাই মাত্র বছর কয়েকের পুরনো দু’টি শেভ্রলে এখনই বেচার পক্ষপাতী নন কলকাতার এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ কর্তা সৌমিত্র ভৌমিক। তাঁর বক্তব্য, একে এখন বদলালে দাম কম মিলবে। উপরন্তু নয়া গাড়ি কেনার অর্থ, বাড়তি লগ্নি। তাঁর আশা, বিক্রি বন্ধ করলেও ভারতে জিএম যেহেতু গাড়ি তৈরি চালু রাখবে, তাই যন্ত্রাংশ জোগানে আরও কিছু দিন সমস্যা হবে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy