Advertisement
২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪
আদালতে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন ইডি-র

চার সপ্তাহের জন্য বাজেয়াপ্ত মাল্যের কূটনৈতিক পাসপোর্ট

জোড়া ধাক্কা। একই দিনে প্রথমে কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত (আপাতত চার সপ্তাহের জন্য)। তার উপর আবার তাঁর বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির জন্য আদালতে আবেদন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:৫৬
Share: Save:

জোড়া ধাক্কা।

একই দিনে প্রথমে কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত (আপাতত চার সপ্তাহের জন্য)। তার উপর আবার তাঁর বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির জন্য আদালতে আবেদন। শুক্রবার সাঁড়াশি চাপের মুখে আজ প্রায় দেড় মাস ব্রিটেনের মাটিতে বসে থাকা ঋণখেলাপে অভিযুক্ত বিজয় মাল্য।

ব্যাঙ্কের কাছে ধার না-মেটানো নিয়ে বসে যাওয়া বিমান পরিবহণ সংস্থা কিংগ্‌ফিশার এয়ারলাইন্সের প্রাক্তন কর্ণধারের বিরুদ্ধে তদন্তে নেমেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। সেই তদন্তের জাল গোটাতে মাল্যের পাসপোর্ট বাতিলের জন্য দু’দিন আগেই বিদেশ মন্ত্রককে অনুরোধ জানিয়েছিল তারা। যাতে দেশে ফিরতে বাধ্য হন তিনি। এ দিন বিদেশ মন্ত্রক জানাল, সাময়িক ভাবে বাজেয়াপ্ত (সাসপেন্ড) করা হচ্ছে মাল্যের কূটনৈতিক পাসপোর্ট। আপাতত চার সপ্তাহের জন্য। এর পরে তাঁর পক্ষে এ ভাবে ইডি-র একের পর এক সমন অগ্রাহ্য করে বিদেশে বসে থাকা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করছে তদন্তকারী সংস্থাটি।

শুধু তা-ই নয়। একই সঙ্গে এ বিষয়ে কারণ দর্শানোর (শো-কজ) নোটিসও পাঠানো হয়েছে মাল্যকে। জানতে চাওয়া হয়েছে, কেন তাঁর পাসপোর্ট বাতিল করা হবে না। জবাব পাঠানোর সময় দেওয়া হয়েছে এক সপ্তাহ। সময়ে জবাব ঠিকমতো না-এলে বাতিল হবে পাসপোর্ট।

পাসপোর্ট নিয়ে চাপ তৈরির পাশাপাশি মাল্যের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আর্জি জানিয়ে মুম্বইয়ের বিশেষ আদালতে গিয়েছে ইডি। শনিবার শুনানি। ইডি-র অভিযোগ, তিন বার সমন পাঠানো সত্ত্বেও তদন্তকারীদের সামনে হাজির হচ্ছেন না মাল্য। সেই কারণেই এই সিদ্ধান্ত।

ন’হাজার কোটি টাকারও বেশি ধার না-মিটিয়ে মাল্যের ভারত ছাড়া রুখতে গত ৮ মার্চ সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল ১৭টি ঋণদাতা ব্যাঙ্কের কনসোর্টিয়াম। কিন্তু ঠিক তার পরের দিনই, ৯ মার্চ, কেন্দ্র সুপ্রিম কোর্টকে জানায় যে, ২ মার্চ কূটনৈতিক পাসপোর্ট নিয়ে দেশ ছেড়েছেন মাল্য।

এই মুহূর্তে ইচ্ছাকৃত ভাবে বিপুল অঙ্কের ঋণ শোধ না-করা এবং আইডিবিআই ব্যাঙ্কের ধারের ৯৫০ কোটি টাকা বিদেশি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাচার করার অভিযোগে মামলা ঝুলছে মাল্যের বিরুদ্ধে। তাঁকে তিন-তিন বার সমন পাঠিয়েছে ইডি। কিন্তু তিনি হাজির হননি। বরং টুইটে দাবি করেছেন তিনি দেশ ছেড়ে পালাননি।

ইডি-কর্তারা মনে করছেন, কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত হওয়ার পরে বিদেশে থাকা কঠিন হবে রাজ্যসভার সাংসদ মাল্যের পক্ষে। সে ক্ষেত্রে তাঁকে সরকারের দ্বারস্থ হতে হবে। তা ছাড়া, কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল হওয়ার সূত্রে সাধারণ পাসপোর্টও বাতিল হয়ে যাবে। তখন ব্রিটেনের কাছে মাল্যকে প্রত্যর্পণের দাবি জানানো হতে পারে। গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলে, মাল্যর বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে রেড কর্নার নোটিস জারি করার দিকেও হাঁটতে পারে ইডি।

মাল্যকে ঋণ দেওয়া রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির আইনজীবী এস এস নাগানন্দ বলেন, ‘‘বল মাল্যের কোর্টে। দেশে ফিরে তদন্তের মুখোমুখি হওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।’’ কিন্তু অনেকে মনে করছেন, ললিত মোদীর মতো ব্রিটেনে আশ্রয়ের জন্য এ বার আবেদন জানাতে পারেন মাল্যও। কংগ্রেস মুখপাত্র মণীশ তিওয়ারির দাবি, ‘‘ললিত মোদীর পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করা সত্ত্বেও তাঁকে ব্রিটেন যাওয়ার ছাড়পত্র জোগাড় করে দেওয়া হয়েছিল। দেশে থাকতেই মাল্যকে গ্রেফতার করা যেত।’’ কংগ্রেসের অভিযোগ, সরকারই মাল্যকে বিদেশ যাওয়ার সুযোগ দিয়েছে। বিজেপি মুখপাত্র সম্বিৎ পাত্রের দাবি, প্রধানমন্ত্রী ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন। এই পদক্ষেপ তার প্রমাণ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE