Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

বাণিজ্যে হাত ধরতে নতুন পথে মোদী-শি

ইউপিএ জমানা থেকেই কিছু অনুপ্রবেশের ঘটনা বাদে ভারত-চিন সম্পর্কে সীমান্ত খুব বড় সমস্যা হয়নি।

খোলা মনে: শনিবার মমল্লপুরমে শি চিনফিং এবং নরেন্দ্র মোদী। এপি

খোলা মনে: শনিবার মমল্লপুরমে শি চিনফিং এবং নরেন্দ্র মোদী। এপি

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৯ ০২:০৫
Share: Save:

দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে চিনের সঙ্গে ভারতের ঘাটতি মেটাতে নতুন ‘মেকানিজম’ তৈরির সিদ্ধান্ত হল মমল্লপুরমে। আজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও চিনের প্রেসিডেন্ট শি চিনফিংয়ের বৈঠকের পরে বিদেশ সচিব বিজয় গোখলে এ কথা জানিয়ে বলেছেন, ‘‘বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ে আমাদের উদ্বেগের কথা প্রধানমন্ত্রী শি-কে জানিয়েছেন। স্থির হয়েছে একটি মেকানিজম তৈরি হবে।’’ তিনি জানান, চিনের উপ-প্রধানমন্ত্রী হু চুনহুয়া আর ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন এটির নেতৃত্বে দেবেন।

ইউপিএ জমানা থেকেই কিছু অনুপ্রবেশের ঘটনা বাদে ভারত-চিন সম্পর্কে সীমান্ত খুব বড় সমস্যা হয়নি। তবে পড়শি মুলুকের সঙ্গে বাণিজ্যে এ দেশের ঘাটতি কয়েক দশকে বেড়েছে বহু গুণ। যার উত্তাপ ছড়িয়েছে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কেও। শনিবার সেই বাণিজ্য সম্পর্ক মেরামতেই তৎপর হতে দেখা গেল মোদী ও শি-কে। যার হাত ধরে কখনও শোনা গেল চিনের অনুকূলে ভারতের বাড়তে থাকা ঘাটতিতে লাগাম পড়ানোর প্রতিশ্রুতি, কখনও এল ব্যবসায়িক লেনদেনে ভারসাম্য আনার বার্তা, কখনও বা পারস্পরিক লগ্নিকে উৎসাহ দিতে জোট বেঁধে নতুন পথ খোঁজার প্রস্তাবে হাতে হাত মেলালেন দু’জনে।

সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, দু’দেশের বাণিজ্য, লগ্নি ও পরিষেবার সমস্যাগুলি মেটানোর লক্ষ্যেই এ দিন যৌথ ‘মেকানিজম’ তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শি ও মোদী। তাঁদের বার্তা, বাণিজ্যে ভারসাম্য রক্ষার দায়িত্ব সামলাতেই এই ব্যবস্থা। যা বাস্তবায়িত হবে এক বছরের মধ্যে, ফের তাঁদের ঘরোয়া সংলাপের আগে। আরও পোক্ত বাণিজ্য সম্পর্ক গড়তে চলবে উঁচু পর্যায়ের আলাপ-আলোচনাও।

শি-মোদীর আলোচনায় এ দিন উঠে এসেছে আঞ্চলিক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (আরসিইপি) কথাও। চিন সমেত ১৪টি দেশের সঙ্গে যে চুক্তি সই করা নিয়ে দর কষাকষি করছে ভারত। এ দিন ভারত সওয়াল করে, পণ্য, পরিষেবা ও লগ্নির ভারসাম্য বজায় রেখেই বাস্তবায়িত হোক আরসিইপি। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে সেই প্রশ্নে মোদীকে আশ্বস্ত করেছেন শি। বলেছেন, ভবিষ্যতে ওই চুক্তি নিয়ে কথা বলার সময় মাথায় রাখবেন বিষয়গুলি। এ দিন শি রাজি হয়েছেন, চিনের সঙ্গে বাণিজ্যে ভারতের বিপুল ঘাটতি কমানোর লক্ষ্যে পদক্ষেপ করতেও। সেই সঙ্গে ডাক দিয়েছেন তথ্যপ্রযুক্তি ও ওষুধের মতো ক্ষেত্রে চিনের মাটিতে লগ্নির জন্য।

বস্তুত, চিনের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ার অন্যতম কারণ পড়শি মুলুকের প্রায় পাঁচ গুণ বড় অর্থনীতি। যে কারণে বাণিজ্যে ছড়ি ঘুরাতে দেখা যায় মূলত তাদেরই। ২০১৮ সালে নরেশ গুজরালের নেতৃত্বাধীন বাণিজ্য সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির রিপোর্ট জানিয়েছিল, ২০০৭-০৮ থেকে ২০১৭-১৮ সালের মধ্যে ভারতে চিনা পণ্যের আমদানি বেড়ে গিয়েছে প্রায় ৫,০০০ কোটি ডলার। অথচ ওই দেশে ভারতীয় পণ্যের রফতানি বেড়েছে মাত্র ২৫০ কোটি ডলার। বিপুল মাথা তুলেছে বাণিজ্য ঘাটতি। যে কারণে এর আগে উহানে শি-র সঙ্গে বৈঠকে মোদী তাঁকে বলেছিলেন চিনের বাজার ভারতের চাল, চিনি, সয়াবিনের মতো কিছু পণ্যের জন্য অন্তত পক্ষে আরও একটু বেশি করে খুলে দিতে। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে দাবি, তার কিছুটা হয়েওছে। কিন্তু এখনও অনেক পথ বাকি।

সেই জায়গা থেকে আজকের আলোচনাকে আরও বেশি গঠনমূলক বলে দাবি করছেন অনেকে। একই সঙ্গে অন্য অংশের অভিমত, গোটাটাই কথার কথা কি না, তা সময়ই বলবে। এ দিন গোখলে জানান, ভারতে তৈরি ওষুধকে চিনের বাজারে ঢুকতে দেওয়ার জন্য আর্জি জানিয়েছেন তাঁরা। চিন জানিয়েছে বিষয়টি ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে গোখলের দাবি, ‘‘দু’পক্ষই মেনেছেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ব্যবস্থা ও নীতি নিয়ে যখন প্রশ্ন উঠছে, তখন নিয়ম নির্ভর বহুমুখী বাণিজ্য বন্দোবস্ত পোক্ত করা ও তার দিকে হাত বাড়িয়ে দেওয়া জরুরি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Narendra Modi Xi Jinping China Trade
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy