ডোনাল্ড ট্রাম্প।
আমেরিকার ‘এক সময়ের’ গর্ব গাড়ি শিল্পের সুদিন ফেরাতে চান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। লক্ষ্য, আরও অনেক বেশি সংখ্যক গাড়ি তৈরি হোক তাঁর নিজের দেশে। আমেরিকার বাজার দখলের পাশাপাশি সে দেশে তৈরি গাড়ির রমরমা বাড়ুক বিশ্বের সর্বত্র। হোক কর্মসংস্থানও। মার্কিন গাড়ি সংস্থাগুলির শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পরে এ কথা স্পষ্ট জানিয়েছেন তিনি। কথা দিয়েছেন, ‘‘আগামী দিনে আরও লক্ষ লক্ষ গাড়ি বেশি তৈরি হবে আমেরিকায়।’’
বারাক ওবামা যখন হোয়াইট হাউসে প্রথম পা রাখছেন, ডেট্রয়েট তখন প্রায় ‘শ্মশান’। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে ওবামার হোয়াইট হাউসে প্রবেশ ২০০৯ সালের ২০ জানুয়ারি। তার আগে ২০০৮ সালেই দেউলিয়া ঘোষণা করেছে ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্ক লেম্যান ব্রাদার্স। মার্কিন মুলুক-সহ সারা পৃথিবীতেই তখন ভয়াল মন্দার থাবা। প্রেসিডেন্ট পদে শপথ নেওয়ার পরে কয়েক মাস কাটতেই ২০০৯ সালের ৩০ এপ্রিল দেউলিয়া ঘোষণা করল মার্কিন গাড়ি বহুজাতিক ক্রাইসলার। এক মাসের মাথায় ওই একই রাস্তায় হাঁটতে বাধ্য হল জিএম-ও। মার্কিন গাড়ি শিল্পের তৃতীয় স্তম্ভ ফোর্ডও তখন বেহাল।
১৯২৫ সালে ওয়াল্টার পি ক্রাইসলারের হাতে গাড়ি সংস্থা ক্রাইসলারের প্রতিষ্ঠা। আট দশকেরও বেশি সময় ধরে পৃথিবীর অন্যতম পরিচিত ব্র্যান্ড হয়ে ওঠে তারা। বিশেষত বড় গাড়ির বাজারে। একই ভাবে, ১৯০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত জিএম আবার টানা তিন দশকের বেশি সময় ছিল পৃথিবীর বৃহত্তম গাড়ি নির্মাতা। ১৯৫০-এর দশকে আমেরিকার রাস্তায় প্রায় অর্ধেক গাড়ি ছিল এই সংস্থারই। গাড়ির দুনিয়ায় বরাবরের সুখ্যাতি কিংবদন্তি হেনরি ফোর্ডের হাতে তৈরি সংস্থা ফোর্ডেরও। তিন সংস্থারই সদর ডেট্রয়েট-মিশিগানে।
ফলে এক সঙ্গে তিন সংস্থার এমন বেহাল দশায় তখন আক্ষরিক অর্থেই শ্মশানের চেহারা নিয়েছিল ওই শিল্পাঞ্চল। নিত্যনতুন গাড়ি তৈরি নিয়ে যে জায়গা এক সময় গমগমে ছিল, সেখানে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল নতুন কাজের সুযোগ। মাইলের পরে মাইল পড়ে থাকত কর্মীদের ছেড়ে যাওয়া ফাঁকা বাড়ি। জেগে থাকত অনুসারী শিল্পের ‘ভূতুড়ে’ সব কারখানা। সেই ডেট্রয়েটে, যা এক সময় ছিল মার্কিন গাড়ি শিল্পের গর্ব।
এই অবস্থা থেকে গাড়ি শিল্পকে ঘুরিয়ে দাঁড় করাতে তখন জিএম এবং ক্রাইসলারকে ত্রাণ জুগিয়েছিল ওবামা প্রশাসন। নিয়েছিল সরকারি অংশীদারি। ক্রাইসলার আবার গাঁটছড়া বেঁধেছিল ইতালীয় গাড়ি নির্মাতা ফিয়াটের সঙ্গে। সব মিলিয়ে কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েওছিল ওই শিল্প।
কিন্তু তবু প্রশ্ন রয়ে গিয়েছে, পরিবেশ বান্ধব গাড়ি তৈরিতে মার্কিন সংস্থাগুলি এখনও প্রথম সারিতে না আসায়। অনেকের আবার জিজ্ঞাসা, সংস্থাগুলি তো বিদেশের মাটিতেও গাড়ি তৈরি করে। তবে কি মার্কিন করদাতাদের অর্থে ত্রাণ জোগানো সংস্থায় কাজ পাবেন চিনা কর্মীরা? সম্ভবত এই সমস্ত কথা মাথায় রেখেই ট্রাম্পের এ দিনের হুঙ্কার।
হোয়াইট হাউসে জিএম, নিসান, টয়োটা, ফোর্ড, ক্রাইসলার, হোন্ডা সমেত বিভিন্ন গাড়ি সংস্থার কর্ণধারদের সঙ্গে কথা বলেছন তিনি। সওয়াল করেছেন, ‘‘এ বার বরং উল্টোটা হোক। সব সংস্থা আমেরিকায় গাড়ি তৈরি করুক। এবং তা রফতানি করুক বিশ্বের বাকি দেশে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy