কেন্দ্রীয় অর্থসচিব টি ভি সোমনাথন। —ফাইল চিত্র।
প্রশ্ন: তৃতীয় মোদী সরকারের প্রথম বাজেটের মূল মন্ত্র কর্মসংস্থান, চাকরি। শিল্পমহলকে কর্মী নিয়োগে উৎসাহিত করার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু বাজারে কেনাকাটার অভাব। গ্রামীণ অর্থনীতিতে দুরবস্থা কাটেনি বলে অভিযোগ। সমাধান কোথায়?
উত্তর: পরিকাঠামোয় বিপুল খরচ করা হচ্ছে। গত অর্থবর্ষে ৯.৪৯ লক্ষ কোটি টাকা খরচ হয়েছিল। এ বার তার থেকে ১৭% বেশি, ১১.১১ লক্ষ কোটি বরাদ্দ হয়েছে। গ্রামীণ অর্থনীতির জন্য প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় বিপুল বরাদ্দ হয়েছে। অনগ্রসর এলাকার ২৫,০০০ গ্রাম পাকা রাস্তা দিয়ে সংযুক্ত করা হবে। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় গ্রামে ২ কোটি, শহরে ১ কোটি নতুন বাড়ি তৈরি হবে। এতে গ্রামে খরচ বাড়বে। মোটের উপরে অর্থনীতির হাল ভাল। কোভিডের সময় যে সব পরিযায়ী শ্রমিকরা শহর থেকে গ্রামে ফিরেছিলেন, তাঁরা কাজের জায়গায় ফিরেছেন, গ্রামের বাড়িতে টাকা পাঠাতে শুরু করবেন।
প্রশ্ন: দেশের সেরা ৫০০ সংস্থাকে পাঁচ বছরে এক কোটি, অর্থাৎ বছরে ২০ লক্ষ ইন্টার্ন বা শিক্ষানবিশকে প্রশিক্ষণ দিতে বলছে সরকার। কী ভাবে শিল্পমহলকে বাধ্য করবেন?
উত্তর: ভাল প্রশ্ন। কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। সরকার প্রশিক্ষণের বেশিরভাগ খরচ দেবে। মাসে ৫০০০ টাকা ভাতা, এককালীন ৬০০০ টাকা। যাতে শুধু কাগজে-কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, দেখানো না হয়। প্রশিক্ষণের খরচের মাত্র ১০% বেসরকারি সংস্থাকে বহন করতে হবে। সেটাও কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিল বা সিএসআর ফান্ড থেকে। মুনাফায় হাত দিতে বলছি না। ওই তহবিলের ৪০% বা ১৮,০০০ কোটি টাকা খরচ করলেই কাজ হয়ে যাবে। সংস্থাগুলি এমনিতে টাকা খরচ করছে, কেউ নলকূপ বসাচ্ছে, কেউ স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরি করছে। সেই কাজটা রাজ্য বা পুরসভা করতে পারে। কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ, বেকারদের চাকরির যোগ্য করে তোলার কাজ শুধু শিল্পমহলই পারবে।
প্রশ্ন: কিন্তু এত জনকে শিক্ষানবিশ হিসেবে নিয়োগের জায়গা আছে কি?
উত্তর: নিয়োগ করতে বলছি না। শুধু প্রশিক্ষণ দিতে বলছি। কিছুটা ক্লাসরুমে, কিছুটা কারখানায়, অফিসে। আমি আশাবাদী, অধিকাংশ সংস্থাই সাড়া দেবে। শিল্পমহলের সঙ্গে আলোচনায় বসব।
প্রশ্ন: কর্মী নিয়োগে উৎসাহ দিতে বাজেটে বেতন, প্রভিডেন্ট ফান্ডের জমায় ভর্তুকি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এমন হতেই পারে, সংস্থাগুলি এই উৎসাহ ভাতা পেতে নিজেদের ঠিকা কর্মীদের স্থায়ী করে নিল। নতুন কাউকে নিয়োগ করল না!
উত্তর: সেটা হলেও খারাপ হয় না। ওই কর্মীরা সামাজিক নিরাপত্তা, ইপিএস-এ পেনশন, পিএফ-এর সুবিধা পাবেন। তবে কারখানার ক্ষেত্রে নতুন ৫০ জন কর্মীকে নেওয়ার শর্ত রাখছি। আউটসোর্সিং সংস্থার মাধ্যমে নিয়োগ করলে হবে না। সরাসরি নিয়োগ করতে হবে।
প্রশ্ন: এর মাধ্যমে কি শ্রমনিবিড় ক্ষেত্র, যেখানে বেশি শ্রমিক দরকার, সেখানে জোর দেওয়া হচ্ছে?
উত্তর: অবশ্যই। কেউ যদি ৫০ জন কর্মী নিয়োগের সঙ্গে কৃত্রিম মেধায় লগ্নি করতে চান, তা হলে ১০০ জন কর্মীকে নিয়োগে উৎসাহ দিতে চাইছি।
প্রশ্ন: কৃত্রিম মেধাকে কি কাজের ক্ষেত্রে বিপদ হিসেবে দেখছেন?
উত্তর: মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা আর্থিক সমীক্ষায় বলেছেন, কিছু ক্ষেত্রে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। কিছু ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব হতে পারে। যতই এআই আসুক, কর্মীদের প্রয়োজন হবেই।
প্রশ্ন: আর্থিক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ২০৩০ পর্যন্ত প্রতি বছর ৭৮.৫ লক্ষ কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে। বাজেটের ঘোষণা এই লক্ষ্য পূরণে কতখানি সফল হবে?
উত্তর: অর্থনীতির বৃদ্ধির সঙ্গে স্বাভাবিক নিয়মেও কর্মসংস্থান তৈরি হবে। আর্থিক বৃদ্ধির হার ৬.৫%-৭%। তা বজায় থাকবে। তার সঙ্গে বাজেটের ঘোষণা বাড়তি কাজ তৈরি করবে।
প্রশ্ন: রিজার্ভ ব্যাঙ্ক গত অর্থবর্ষে সরকারকে ২.১১ লক্ষ কোটি টাকা ডিভিডেন্ড দিয়েছে। এতে রাজকোষ ঘাটতিতে লাগাম পরানো গিয়েছে। এর নেতিবাচক অর্থনৈতিক প্রভাব নেই তো?
উত্তর: মনে হয় না। তাত্ত্বিক ভাবে অর্থনীতিতে টাকার জোগান বাড়লে মুদ্রাস্ফীতি হতে পারে। কিন্তু এই ডিভিডেন্ডের অঙ্ক জিডিপি-র মাত্র ০.৩ শতাংশ। কোনও প্রভাব পড়বে না।
প্রশ্ন: অর্থ মন্ত্রক কেন রাজকোষ ঘাটতির হার কমানোর বদলে জিডিপি-র তুলনায ঋণের হার কমানোর লক্ষ্য নিচ্ছে?
উত্তর: আগে রাজকোষ ঘাটতি ৩ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নেওয়া হত। আমাদের আর্থিক বৃদ্ধির হার সবথেকে বেশি। মূল্যবৃদ্ধি-সহ বৃদ্ধির হার ১০ শতাংশের উপরে। ফলে আমরা রাজকোষ ঘাটতির পরিমাণ বেশি রেখেও জিডিপি-র তুলনায় ঘাটতির হার কমিয়ে রাখতে পারি। কিন্তু তাতে সুদের বোঝার পরিমাণ কমে না। তাই ঋণের হার কমানোর লক্ষ্য নেওয়া হবে। তবে ঘাটতি ৪.৫ শতাংশের কমেই থাকবে। আরও ঘাটতি কমানো সম্ভব। কিন্তু তাতে আর্থিক বৃদ্ধি ধাক্কা খাবে।
(শেষ)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy