Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

চিনা মোবাইল জমি কাড়ছে দেশি সংস্থার

পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে, চলতি বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে ভারতের মোবাইল বাজারের অর্ধেকেরও বেশি (অন্তত ৫১%) রয়েছে চিনের কব্জায়। প্রথম পাঁচে যে চার চিনা সংস্থা আছে, শুধু তাদের দখলেই ৪৩.৫%। সেখানে ভারতের সংস্থাগুলির সম্মিলিত বাজার দখল মাত্র ১৩.৫%। প্রথম পাঁচে এ দেশের কোনও সংস্থা নেই।

জয়ী। ভারতীয় ক্রিকেট দলের জার্সিতে জ্বলজ্বলে উপস্থিতি চিনা মোবাইল সংস্থার। ছবি: এএফপি

জয়ী। ভারতীয় ক্রিকেট দলের জার্সিতে জ্বলজ্বলে উপস্থিতি চিনা মোবাইল সংস্থার। ছবি: এএফপি

গার্গী গুহঠাকুরতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৭ ০২:৪১
Share: Save:

‘জমির দখল’ নিয়ে ভুটান সীমান্তে কড়া টক্কর চলছে চিন-ভারতের। জারি কূটনীতির টানটান লড়াইও। কিন্তু প্রায় নিঃশব্দে ভারতে দেশি মোবাইল সংস্থাগুলির পায়ের তলার মাটি কেড়ে নিয়েছে চিনা মোবাইল নির্মাতারা। প্রায় ‘যুদ্ধের মতো জাতীয়তাবাদ উস্‌কে দেওয়া’ ক্রিকেট দলের জার্সির বুকে জ্বলজ্বল করছে চিনা মোবাইল সংস্থার নাম। আইপিএলের মূল স্পনসরও এখন এক চিনা মোবাইল প্রস্তুতকারীই।

পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে, চলতি বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে ভারতের মোবাইল বাজারের অর্ধেকেরও বেশি (অন্তত ৫১%) রয়েছে চিনের কব্জায়। প্রথম পাঁচে যে চার চিনা সংস্থা আছে, শুধু তাদের দখলেই ৪৩.৫%। সেখানে ভারতের সংস্থাগুলির সম্মিলিত বাজার দখল মাত্র ১৩.৫%। প্রথম পাঁচে এ দেশের কোনও সংস্থা নেই। এক কথায়, প্রতিযোগিতা থেকে যেন ছিটকেই গিয়েছে তারা।

অথচ দু’বছর আগেও এ দেশে স্মার্টফোন বাজারের ছবিটা অনেকটা অন্য রকম ছিল। মাইক্রোম্যাক্স, ইনটেক্স ও লাভা মিলিয়ে দখল করেছিল ৩০% বাজার। সেখানে এখন প্রথম পাঁচের ধারেকাছেও তারা নেই। আগের মতোই এক নম্বরে দক্ষিণ কোরীয় বহুজাতিক স্যামসাং। আর বাকি চারটি সংস্থাই চিনের।
উপদেষ্টা সংস্থা আইডিসি-র তথ্য অনুযায়ী, দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম স্থানে রয়েছে যথাক্রমে শাওমি, ভিভো, লেনোভো ও অপ্পো।

কিন্তু এমনটা হওয়ার কারণ কী?

ব্র্যান্ড উপদেষ্টা হরীশ বিজুরের মতে, দামের লড়াইয়ের দিকে একবগ্গা নজর দিতে গিয়ে গুণমানের দিকে কম তাকানোর ভুল করেছে দেশি সংস্থাগুলি। চিনা সংস্থাগুলি যে ভাবে মোবাইলে নিত্যনতুন বৈশিষ্ট্য যোগ করেছে, চেষ্টা করেছে দামি ফোনের ধাঁচে ‘ফিচার’ আনার, এ দেশের সংস্থাগুলি তা করেনি।

তা ছাড়া, ব্র্যান্ড পরিচিতি বাড়াতে বিজ্ঞাপন ও বিপণনে বিপুল অঙ্ক বিনিয়োগ করে চলেছে চিনা সংস্থাগুলি। বিজ্ঞাপন-গুরু রাম রায়ের কথায়, সম্ভাব্য ক্রেতাদের নজর কী ভাবে টানতে হয়, আগে তা জানা জরুরি। এই দু’য়েরই জ্বলন্ত উদাহরণ ভারতীয় ক্রিকেট দলের জার্সিতে অপ্পোর উপস্থিতি। স্পনসরের ওই তকমা পেতে তারা ঢেলেছে ১,০৭৯ কোটি টাকা। ২,১৯৯ কোটি টাকা দিয়ে ২০২২ সাল পর্যন্ত আইপিএল-এর স্পনসর-স্বত্ব কিনেছে ভিভো। বিপণন বিশেষজ্ঞদের দাবি, ১৮২৫ দিনের জন্য দৈনিক ১.২ কোটি টাকা খরচের পিছনে দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা আছে।

বাজার দখলের লড়াইয়ে হেরে যাওয়ার আর একটি কারণ অনলাইনে মোবাইল বিক্রির কৌশল ঠিক করায় পিছিয়ে পড়াও। আইডিসি-র দাবি, মোবাইল কেনায় নেট বাজারের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। ক্রেতারা সেখানে ছাড়ের জন্য ওত পেতে বসে। কিছু মডেল বিক্রি হচ্ছে শুধু সেখানেই। সব মিলিয়ে, মোট মোবাইল বিক্রির প্রায় এক-তৃতীয়াংশই হচ্ছে নেটে। এই বাজারে শাওমি, লেনোভো-র মতো চিনা সংস্থা যে গতিতে দৌড়তে পেরেছে, দেশি মোবাইল প্রস্তুতকারীরা তার সঙ্গে টক্কর দিতে পারেনি বলেই বিশেষজ্ঞদের দাবি।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE