চা বাগান অধিগ্রহণ মামলায় কলকাতা হাইকোর্টে হেরে গেল ডানকান গোষ্ঠী।
উত্তরবঙ্গে তাদের ৭টি চা বাগানের পরিচালনভার অধিগ্রহণের জন্য কেন্দ্রের বিজ্ঞপ্তিকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল ডানকান। মঙ্গলবার হাইকোর্টের বিচারপতি স়ঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর রায়ে কেন্দ্রের বিজ্ঞপ্তিকে বৈধতা দিয়ে জানান, জরুরি সব শর্ত মেনেই বাগানগুলি অধিগ্রহণ করতে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল কেন্দ্র। এই মামলার খরচ বাবদ কেন্দ্রকে ৫ লক্ষ টাকা দেওয়ার জন্যও বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছেন ডানকানকে। এ দিনের রায়ের প্রসঙ্গে ডানকান গোষ্ঠীর কর্তা জি পি গোয়েন্কা সরাসরি কিছু বলতে চাননি। তিনি জানান, আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলবেন। তবে আপিল মামলার পথে হাঁটারও ইঙ্গিত দেন তিনি।
এ দিন সতর্কবার্তাও শুনিয়েছে হাইকোর্ট। অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল কৌশিক চন্দ রায় ঘোষণার পরে জানান, বিচারপতি রায়ে বলেছেন, বাগানগুলি চালু রাখতে, শ্রমিকদের বকেয়া বেতন মেটাতে ও তাঁদের ফের কাজে ফেরাতে সর্বাগ্রে যা করণীয় তা কেন্দ্র, টি বোর্ড ও রাজ্যকে করতে হবে। আদালত জানিয়েছে, কেন্দ্রকে মনে রাখতে হবে, আগে একই ভাবে চা বাগান অধিগ্রহণ করে টি ট্রেডিং কর্পোরেশন সাফল্য পায়নি।
প্রসঙ্গত, ডানকান-কর্তা এ দিনের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল মামলার ইঙ্গিত দেওয়ার আগে ইতিমধ্যেই হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুরের ডিভিশন বেঞ্চে আপিল মামলা দায়ের করে গোষ্ঠী। ডিভিশন বেঞ্চ তখন জানায়, সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশ দেখে আপিল মামলার আবেদন শোনা হবে। সূত্রের খবর, আজ, বুধবার ডানকান গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে আপিল মামলাটি শোনার জন্য ডিভিশন বেঞ্চের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেন তাদের আইনজীবী। ফলে আপিল মামলার নিষ্পত্তি না-হওয়া পর্যন্ত ডানকানের বাগানগুলির জট কাটছে না বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
ডানকানের বাগানগুলির অচলাবস্থা নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ চলছে। বিতর্কে জড়িয়েছে কেন্দ্র-রাজ্যও। এরই মাঝে গত জানুয়ারিতে ডানকানের ৭টি বাগান—বীরপাড়া, গরগণ্ডা, লঙ্কাপাড়া, তুলসীপাড়া, হান্টাপাড়া, ধুমচিপাড়া ও ডিমডিমার পরিচালনভার অধিগ্রহণের জন্য কেন্দ্র বিজ্ঞপ্তি জারি করে। সেই বিজ্ঞপ্তিকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতের যায় ডানকান গোষ্ঠী। বাগানগুলিতে গত জুলাই থেকে কাজ না-হওয়ায় ও কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের বকেয়া না-মেটানোয় ওই বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছিল বলে শুনানি পর্বে জানান অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল।
অন্য দিকে, ডানকান গোষ্ঠীর আইনজীবী অনিন্দ্য মিত্র আদালতে দাবি করেন, কেন্দ্রের জারি করা বিজ্ঞপ্তি অবৈধ। কারণ, ৭টি চা বাগানই খোলা রয়েছে। তা ছাড়া ওই বাগানগুলি নিয়ে ইতিমধ্যেই বিআইএফআরের দ্বারস্থ হয়েছে ডানকান। বিআইএফআরের অনুমতি ছাড়া বাগান অধিগ্রহণ করা যায় না।
কৌশিকবাবুর পাল্টা দাবি ছিল, বিজ্ঞপ্তি জারির আগেও রাজ্য এক রিপোর্টে কেন্দ্রকে বাগানগুলির পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে হস্তক্ষেপ করার আর্জি জানায়। ৭টি চা বাগানের অবস্থা জানতে কেন্দ্র টি বোর্ড-কেও নির্দেশ দেয়। টি বোর্ডের অনুসন্ধান কমিটিও তার রিপোর্টে জানায়, বাগানগুলি চালু নেই। তিনি আরও জানান, চা বাগানগুলির পরিস্থিতি নিয়ে তাদের চেয়ারম্যানের সঙ্গে কেন্দ্রীয় বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের বৈঠকও হয়। সেখানে গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে মন্ত্রীকে আশ্বাস দেওয়া হয়, চলতি বছরের ৬ জানুয়ারির মধ্যে বাগানগুলির শ্রমিক ইউনিয়নের সঙ্গে বসে বকেয়া বেতন মেটানো নিয়ে ফয়সালা হবে।
কিন্তু বকেয়া বেতন নিয়ে শ্রমিকেরা শেষ পর্যন্ত আশ্বাস পাননি বলে জানান কৌশিকবাবু। মামলার শুনানি চলাকালীন টি বোর্ডের আইনজীবী তিলক বসুও আদালতে জানান, বাগান পরিদর্শন করে অনুসন্ধান কমিটির রিপোর্টে বলা হয়েছিল, সেখানে স্বাভাবিক কাজকর্ম বন্ধ। চা গাছগুলির উচ্চতা বেড়ে গিয়েছে। বহু দিন ধরেই বাগানগুলিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ নেই। যন্ত্রপাতিও অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy