গাড়ির বিক্রি কমেছে উল্লেখযোগ্য ভাবে। —ফাইল চিত্র।
উৎসবের মরসুমেও গাড়ি বিক্রিতে ভাটা। যাত্রিবাহী গাড়ি থেকে ইউটিলিটি ভেহিকল বিকোচ্ছে না কিছুই। গত দু’দশকে এই প্রথম এমন পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে বলে দাবি গাড়ি শিল্পের সংগঠন সিয়াম। তা নিয়ে এ বার ক্ষোভ উগরে দিলেন গাড়ি নির্মাণ সংস্থা মারুতির চেয়ারম্যান রবীন্দ্রচন্দ্র ভার্গব। তাঁর মতে, নিয়মের কড়াকড়িতে গাড়ির দাম যে ভাবে বাড়াতে বাধ্য হচ্ছে নির্মাতা সংস্থাগুলি, সে দামে কেনার সামর্থ্য ক্রেতাদের নেই।
কয়েক বছর আগে পর্যন্ত গাড়ি কেনার স্বপ্নে বুঁদ হয়ে থাকতেন মধ্যবিত্ত মানুষ। কিন্তু নিরাপত্তা সংক্রান্ত হাজার রকমের প্রযুক্তি বসাতে গিয়ে গাড়ির দাম আকাশ ছুঁয়েছে। তাই মধ্যবিত্ত মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন বলে দাবি ভার্গবের। একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, যাত্রী নিরাপত্তার কথা ভেবে ইদানীং গাড়িতে এয়ার ব্যাগ, অ্যান্টি লক ব্রেকিং প্রযুক্তি বসাতে হচ্ছে। তাতে সাধারণ গাড়ির দামও একলাফে অনেকটাই বেড়ে যাচ্ছে। তাই গাড়ি কেনা এবং তার দেখভাল খরচ সাপেক্ষ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই দু’চাকার গাড়ি নিয়েই দিব্যি রয়েছেন মধ্যবিত্তরা, চার চাকার দিকে ঝোঁকার কথা ভাবছেনও না। যে কারণে মারুতি অল্টোর মতো গাড়ির বিক্রিও ৫০ শতাংশ কমে গিয়েছে।
ভার্গবের কথায়, আজকাল পেট্রোল-ডিজেলের উপরও চড়া হারে কর দিতে হয়। রাস্তায় গাড়ি নামালেই কর দিতে হয় রাজ্য সরকারকে। সেই সঙ্গে রেজিস্ট্রেশন বাবদ আলাদা খরচ। এত করের চাপে নাভিশ্বাস উঠছে সাধারণ মানুষের। অস্থায়ী ভাবে সরকার জিএসটিতে ছাড় দিলেও, এই পরিস্থিতি সহজে বদলাবে না।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
আরও পড়ুন: গাড়ি বিক্রিতে ভাটা ন’মাস, দু’দশকে সঙ্কটের বিরল ছবি
গাড়ি শিল্পকে অক্সিজেন জোগাতে সম্প্রতি একগুচ্ছ সুবিধা ঘোষণা করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। তার পরেও গাড়ির উপর থেকে জিএসটি কমানোর দাবি তুলেছে গাড়ি শিল্পের সংগঠন সিয়াম। তাদের দাবি, চাহিদা বাড়াতে ইতিমধ্যেই গাড়ির দামে ছাড় দিয়েছে বিভিন্ন সংস্থা। দেওয়া হচ্ছে অন্যান্য সুযোগ সুবিধাও। ছাড় দেওয়ারও সীমা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে সরকারি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। জিএসটিতে ছাড়-সহ পুরনো গাড়ি বাতিলের নীতি এনে চাহিদা বাড়াতে হবে। সেই মর্মে কেন্দ্রীয় সরকারকে একটি চিঠিও দিয়েছেন সিয়াম এবং অন্যান্য গাড়ি সংস্থার কর্ণধাররা। তাতে গাড়ির উপর কর ২৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৮ শতাংশ করার আর্জি জানানো হয়।
গাড়ির চাহিদা কমে যাওয়ার জন্য ওলা, উব্রের মতো অ্যাপ ক্যাবের জনপ্রিয়তাকেও দুষতে শুরু করেছেন অনেকে। কিন্তু তাতে আমল দিতে রাজি নন রবীন্দ্রচন্দ্র ভার্গব। তাঁর দাবি, ‘‘নিরাপত্তা প্রযুক্তি এবং কর বাবদ সাধারণ গাড়ির দামই এক ধাক্কায় ৫৫ হাজার টাকা বেড়ে গিয়েছে, যার মধ্যে বেশ কিছু রাজ্যে রাস্তার করই দিতে হয় ২০ হাজার টাকা। আর ব্যাঙ্কের অফিসাররাও ঋণ দেওয়ার সময় ঝুঁকি নিতে চান না।’’
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
আরও পড়ুন: গাড়ি শিল্পে ভয়ঙ্কর মন্দার ছবি, বিক্রি ২১ বছরে সবচেয়ে কম, গুদামে অবিক্রিত গাড়ির পাহাড়
বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় ভারতে চাকুরিজীবীদের বেতন অত্যন্ত কম। গাড়ি কেনার পথে তাও অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মেনেছেন ভার্গব। তিনি বলেন, ‘‘ইউরোপীয় এবং জাপানি ক্রেতাদের সঙ্গে ভারতীয়দের মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে। টাকার হিসেবে ভারতে গাড়ি ক্রেতাদের গড় আয় ১ লক্ষ ৫০ হাজারের একটু বেশি। চিনে তা সাত লক্ষের বেশি। ইউরোপে আবার গাড়ি ক্রেতাদের গড় আয় প্রায় ২৯ লক্ষ। তাই ওদের সঙ্গে তুলনা একেবারেই চলে না। অথচ নিয়ম কানুনের ক্ষেত্রে আমরা আবার কড়া। আয়ের সঙ্গে ভারসাম্য রেখেই যে সব কিছু করা উচিত, সে কথাটাই ভুলে যাই আমরা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy