Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Nirmala Sitaraman

বাজেটের রবীন্দ্রনাথ বনাম রবিবাবুর বাজেট

স্কুল ইনস্পেক্টরের সঙ্গে কথা বলে নিজের বই স্কুলে পড়ানোর চেষ্টা করছেন তিনি।

—ফাইল চিত্র

—ফাইল চিত্র

ঋজু বসু
শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৭:২১
Share: Save:

তিনি হতে পারেন, জমিদারনন্দন। তবু টাকার মূল্য কী, তা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকেও হাড়ে হাড়ে শিখতে হয়েছিল। সদ্য জমিদারির কাজ শিখে সাহাজাদপুর থেকে তরুণ রবীন্দ্রনাথ স্ত্রী মৃণালিনীকে লিখছেনও, তাঁর টাকা রোজগারের পরিকল্পনার কথা।

স্কুল ইনস্পেক্টরের সঙ্গে কথা বলে নিজের বই স্কুলে পড়ানোর চেষ্টা করছেন তিনি। ‘ভাই ছোটবউ’কে লিখছেনও ‘দেখচ, বসে বসে কত উপার্জনের উপায় করচি। সকলে উঠেই বই লিখতে বসেছি তাতে কত টাকা হবে একবার ভেবে দেখ।’ তবু অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের ‘অভূতপূর্ব পরিস্থিতির’ বাজেটের পটভূমি নির্মাণে এই রবীন্দ্রনাথকে ব্যবহার নিয়ে খানিক আপত্তিও রয়েছে রবীন্দ্রচর্চার শিক্ষক-অধ্যাপক মহলে।

অধুনা সেন্ট পিটার্সবার্গ স্টেট ইউনিভার্সিটির ভাষাতত্ত্বের অধ্যাপক দেবপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করাচ্ছেন, ‘‘নোবেল পুরস্কারের টাকার ৮০ হাজারই তো রবীন্দ্রনাথ বিলিয়ে দিয়েছিলেন বীরভূমের বন্যায়। ওঁর বিশ্বসাথে যোগের মধ্যে ‘কমার্শিয়াল ম্যান’ নেই। রবীন্দ্রনাথের আর্থিক আদর্শ বুঝতে গেলে বরং মনে পড়ে, ‘অল্প লইয়া থাকি, মোর যাহা যায়, তাহা যায়’ কিংবা ‘যা হারিয়ে যায় তা আগলে বসে , রইব কত আর...!’’

অর্থমন্ত্রী সোমবার তাঁর বক্তৃতার গোড়ার দিকেই রবীন্দ্র-শরণ নিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথের ইংরেজি রচনা ১৯২৮-এ প্রকাশিত ক্ষুদ্র কবিতার সঙ্কলন ‘ফায়ারফ্লাইজ়’ থেকে নির্মলার
উদ্ধৃতি, ‘ফেথ ইজ দ্য বার্ড দ্যাট ফিলস দ্য লাইট অ্যান্ড সিঙ্গস হোয়েন দ্য ডন ইজ় স্টিল ডার্ক (বিশ্বাস হল সেই পাখি যে ভোরের আগে ঘন অন্ধকারেও আলো অনুভব করে এবং গান গায়।)’! কোভিড-পরবর্তী দুনিয়ায়, প্রায় বিশ্বযুদ্ধোত্তর পরিস্থিতিতে রবীন্দ্রনাথের এই উদ্ধৃতিতেই তিনি অনুপ্রেরণা খুঁজেছেন।

রবীন্দ্রনাথ অবশ্য এখন নিয়মিত আছেন, প্রধানমন্ত্রীর ‘মনের কথায়’। বা ভোট-বাজারে দেশের কথায়। ক্বচিৎ কদাচিৎ রাজনৈতিক সভায় তাঁর জন্মস্থানটি গুলিয়ে জোড়াসাঁকোর বদলে শান্তিনিকেতন হয়ে যায়! তবু দিল্লির শাসক-গোষ্ঠীর রবীন্দ্রচর্চায় ক্লান্তি নেই। প্রণব মুখোপাধ্যায় দেশের অর্থমন্ত্রী থাকাকালীনও অবশ্য অতীতে রবীন্দ্রনাথ-বিবেকানন্দদের স্মরণ করেছেন। এ যাত্রা, দেশের অর্থমন্ত্রীর বাজেট-বক্তৃতাতেও সরকারি স্তরে রাবীন্দ্রিকতার পরম্পরা অটুট থাকল।

বিশ্বভারতীর বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপক বিশ্বজিৎ রায়ও বলছেন, ‘‘রবীন্দ্রনাথকে তাঁর লেখালেখির চর্চার মধ্যেও খুব মন দিয়ে জমিদারির সেরেস্তার খাতা দেখতে শিখতে হয়েছিল। তাঁকেও আয়ব্যয়ের হিসেব করে চলতে হতো। কিন্তু জমিদার হিসেবে বরাবরই প্রজাদের কিসে ভাল হয়, সেটাই তাঁর কাছে অগ্রাধিকার পেয়েছে।’’ জমিদার হিসেবে প্রজাদের জন্য সমবায় ব্যাঙ্ক স্থাপন বা ১৯০৫-এ পতিসরে মহাজনদের অত্যাচার থেকে চাষিদের বাঁচাতে কৃষিব্যাঙ্ক স্থাপনেও রবীন্দ্রনাথের আর্থিক ভাবনার প্রতিফলন। পরে নোবেল পুরস্কারের টাকার সদ্ব্যবহারেও ব্যক্তিগত স্বার্থ প্রাধান্য পায়নি। বোলপুরের শ্রীনিকেতন প্রকল্প চালানোর জন্য
টাকার সংস্থান নিয়েও তাঁকে ভাবতে হয়েছে। দেবপ্রসাদবাবু বলছিলেন, ‘‘বাজেট বক্তৃতায় এই রবীন্দ্রনাথের উদ্ধৃতি ব্যবহার হয়তো রাজনীতির অঙ্গ, তবে তা রবীন্দ্র আদর্শের মূল্যায়ন হিসেবে ধরার মানে হয় না!’’

অন্য বিষয়গুলি:

Nirmala Sitaraman Rabindranath Tagore union budget 2021
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy