নরেন্দ্র মোদীর অশ্বমেধের ঘোড়া দিল্লিতে আটকে গেলে থমকে যাবে সংস্কারের রথ। মূলত এই আশঙ্কায় শুক্রবার ফের ১৩৩.০৬ পয়েন্ট পড়ল সেনসেক্স। এই নিয়ে টানা ছ’দিন। দাঁড়াল ২৮,৭১৭.৯১ অঙ্কে।
রাত পোহালেই ভোট দিল্লি বিধানসভায়। বিশেষজ্ঞদের পূর্বাভাস অনুযায়ী, সেখানে মোদী-কিরণ বেদীর বিজেপিকে পিছনে ফেলে জিততে চলেছে অরবিন্দ কেজরীবালের আম আদমি পার্টি। আর তাতেই প্রমাদ গুনছে বাজার। কারণ শেয়ার বাজারে লগ্নিকারীদের আশঙ্কা, দিল্লিতে ধাক্কা খেলে হ্যাঁচকা টানে থেমে যাবে একের পর এক ভোটে জেতার মোদী-রথ। এবং তার প্রভাব পড়তে শুরু করবে অন্যান্য রাজ্যে। সে ক্ষেত্রে আগামী দিনে রাজ্যসভায় সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জন করা কঠিন হবে মোদী-সরকারের পক্ষে। রাজনৈতিক বাধায় ঢিমে হবে সংস্কারের গতিও। মূলত এই আশঙ্কা থেকেই দিল্লি-ভোটের মুখে টানা পড়ছে বাজার। সেই পতনে ইন্ধন জুগিয়েছে লাভের কড়ি ঘরে তোলার প্রবণতাও।
লোকসভায় সংখ্যা গরিষ্ঠতা থাকলেও, রাজ্যসভায় তা নেই মোদী-সরকারের। ফলে সংস্কারের ঝোড়ো ইনিংস খেলতে গিয়েও সেই হার্ডলে আটকে যাচ্ছে তারা। বিমায় বিদেশি লগ্নির ঊর্ধ্বসীমা বৃদ্ধি থেকে প্রতিরক্ষায় বিদেশি বিনিয়োগ সংস্কারের বিভিন্ন বিলকে আইনে পরিণত করতে গিয়ে বাধ্য হচ্ছে অর্ডিন্যান্স জারির পথ ধরতে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, ঠিক এই কারণেই দিল্লির মসনদে বসার পর থেকে প্রতিটি বিধানসভা ভোটকে পাখির চোখ করছেন নরেন্দ্র মোদী। তিনি জানেন, একের পর এক বিধানসভা ভোটে জিতলে, একমাত্র তবেই সংখ্যার গুনতিতে জেতা যাবে রাজ্যসভায়। পাশ করানো যাবে সংস্কারের বিভিন্ন বিল। সে দিক থেকে হরিয়ানা, জম্মু ও কাশ্মীর, মহারাষ্ট্র বা ঝাড়খণ্ডের ফল তাঁকে সেই রাস্তায় এগিয়েও দিয়েছে। বরং ৭ রেসকোর্স রোডের বাসিন্দা হওয়ার পরে দিল্লির নির্বাচনী ময়দানেই প্রথম কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে তিনি।
বাজার বিশেষজ্ঞদের মতে, খেলার মাঠের মতো ভোট-ময়দানেও জেতার একটা ধারাবাহিকতা থাকে। সেই ছন্দ টোল খেলে, চট করে তা ফেরত পাওয়া শক্ত। তাই তাঁদের আশঙ্কা, দিল্লি-ভোটে মোদী-ম্যাজিক ফিকে হলে, তার প্রভাব পড়বে আগামী বিধানসভা নির্বাচনগুলির ফলে। রাজ্যসভায় সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জন তখন বড় একটা সহজ হবে না।
সংস্কারের প্রতিশ্রুতি অবশ্য এ দিনও দিয়েছেন মোদীর সেনাপতি তথা অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। বাজেট তৈরির এমন দমছুট সময়েও যাঁকে দেখা গিয়েছে দিল্লি ভোটের ছক কষতে। জেটলির দাবি, বাজেটে সাহসী সংস্কারের পথে হাঁটবে কেন্দ্র। অপ্রয়োজনীয় খরচ ছেঁটে ফেলা হবে। রাজকোষ ঘাটতিকে বেঁধে রাখা হবে লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে। সরল করা হবে কর-ব্যবস্থা। তৈরি করা হবে লগ্নিবান্ধব কর-নীতিও। যাতে অর্থনীতির চাকায় গতি ফেরে। বাড়ে কর্মসংস্থান।
বাজার অবশ্য মনে করছে, শুধু সংস্কারের ঘোষণায় লাভ কী? তার বিল পাশ করাতে গেলে তো আগে সংখ্যা প্রয়োজন সংসদের দুই কক্ষে। আর সেই কারণেই এখন দিল্লি-ভোটের দিকে সাগ্রহে তাকিয়ে তারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy