ক্ষীণ হলেও জানুয়ারি মাসেই হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালস খোলার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ৪ হাজার কোটি টাকার উপর সেখানে ঢেলে আর্থিক সংস্থাগুলি এ বার কোমর বেঁধে রাজ্যের ‘শো পিস’ প্রকল্পকে আবার চালু করানোর জন্য নেমে পড়েছে। উদ্দেশ্য একটাই, ৪ হাজার কোটি টাকা যাতে অনুৎপাদক সম্পদ হয়ে না-দাঁড়ায়।
এ বিষয়ে মূল উদ্যোগ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার (এসবিআই)। আইডিবিআই ব্যাঙ্ক যদিও হলদিয়ার ‘লিড ব্যাঙ্কার’, তবুও এসবিআইয়ের চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর অরুন্ধতী ভট্টাচার্য এ ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছেন। মুম্বইয়ে আনন্দবাজারের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, এই অর্থবর্ষের মধ্যেই পেট্রোকেম খোলার ব্যাপারে তিনি আশাবাদী। এ বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনও তারিখ চিহ্নিত করতে অবশ্যতিনি রাজি হননি। তিনি বলেন, “সংস্থাটিতে এ রকম অবস্থা থাকলে সব পক্ষেরই ক্ষতি।”
অরুন্ধতীদেবীর নেতৃত্বে এসবিআই অবশ্য সাধরণ ভাবেই অনুৎপাদক সম্পদ এড়াতে উদ্যোগী হয়েছে। শরিকি ঝামেলায় যে-সমস্ত সংস্থা ধুঁকছে, তাদের সব পক্ষের সঙ্গেকথা বলে সমস্যার সমাধান করতে চাইছেন কর্তৃপক্ষ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, ও পি জিন্দলের মৃত্যুর পরে তাঁদের একটি অ্যালুমিনিয়াম সংস্থা নিয়ে শরিকি সমস্যা হয়েছিল। তা মেটাতে ও পি জিন্দলের স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে সজ্জন জিন্দল এবং তাঁর ভাইদের এক টেবিলে বসান অরুন্ধতীদেবী এবং সমস্যার সমাধান করেন। হলদিয়ার ক্ষেত্রেও তিনি একই ভাবে শিল্পমন্ত্রী অমিত মিত্র এবং চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর কর্ণধার পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলে সরকারি শেয়ার চ্যাটার্জি গোষ্ঠীকে বিক্রি করার রাস্তা সহজ করেন।
বর্তমান অবস্থায় কারখানাটিকে চালু রাখতে গেলে আড়াই থেকে তিন হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন বলে আর্থিক সংস্থাগুলিকে জানিয়েছে হলদিয়া পেট্রোকেম। তার মধ্যে এখনই প্রয়োজন এক হাজার কোটি টাকা।
আর্থিক সংস্থাগুলি চাইছে এই হাজার কোটি টাকার মধ্যে চ্যাটার্জি গোষ্ঠী অন্তত ১০% বা ১০০ কোটি টাকা ঢালুক। চ্যাটার্জি গোষ্ঠীও কারখানা চালাতে সব মিলিয়ে ৭৫০ কোটি টাকা আনতে পারবে বলে জানিয়েছে। তাই ডিসেম্বরের মধ্যে অন্তত ১০০ কোটি টাকা এসে গেলে, জানুয়ারিতেই চালু হতে পারে হলদিয়া পেট্রোকেম।
কথায় আছে, সমস্যা কখনও একা আসে না। পার্থ চট্টোপাধ্যায় শিল্পমন্ত্রী তথা পেট্রোকেমের চেয়ারম্যান থাকাকালীন তার ম্যানেজিং ডিরেক্টর হন উত্তম কুমার বসু। চলতি মাসেই তিনি পদত্যাগ করেছেন। তাই জানুয়ারিতে যদি সংস্থাটি খোলে, তবে তার আগেই চ্যাটার্জি গোষ্ঠীকে জোগাড় করতে হবে এমন কাউকে, যিনি এই সংস্থার হাল ধরতে রাজি হবেন।
এর জন্য চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর পছন্দ এমন কেউ, যাঁর বয়স ৫৫ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে। এবং যিনি প্রযুক্তিবিদ। সংস্থার পরবর্তী কর্ণধার খুঁজে নিতে সম্ভাব্যদের এক প্যানেলও তৈরি হয়ে গিয়েছে। তবে এ ব্যাপারে পূর্ণেন্দুবাবু মুখ খুলতেই রাজি নন।
কিন্তু সমস্যা জর্জরিত এমন এক সংস্থায় কেউ কর্ণধার হতে কেন রাজি হবেন?
পেট্রোকেম শিল্পমহল অবশ্য খুব আশাবাদী। তাদের বক্তব্য, সংস্থার প্রযুক্তি ও পণ্য খুবই উচ্চমানের। তাকে ঘুরিয়ে দাঁড় করানোর চ্যালেঞ্জ সম্পূর্ণ ভাবেই অভ্যন্তরীণ। যে-কারণে সংস্থাটি খুলতে চলেছে শুধু এ কথা বাজারে চাউর হতেই রিলায়্যান্স পেট্রোকেমের দোরগোড়ার বাজার পশ্চিম ভারতেও এইচপিএলের ডিলারশিপ নিয়ে খোঁজখবর শুরু হয়ে গিয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে আর্থিক সমস্যায় জর্জরিত সংস্থাটির গোদের উপর বিষফোড়ার মতো আবিষ্কার হয়েছে এক নতুন দায়। রাজ্য সরকারের হাতে থাকাকালীন সংস্থাটি রফতানির দায় মেটায়নি। কাঁচামাল ন্যাপথা আমদানির পর তা দিয়ে উৎপাদিত পণ্যের একটি অংশ রফতানি করলে, আমদানি-করে ছাড় পাওয়া যায়। প্রায় ১,৮০০ কোটি টাকার মতো এই ছাড় নিয়ে সংস্থাটি তার রফতানির দায় মেটায়নি।
নাম বলতে নারাজ সংস্থার এক আধিকারিকের দাবি, একটা বড় সময় ধরে বিশ্ব বাজারের থেকে দেশে পেট্রোপণ্যের দাম বেশি ছিল। এই বেশি দামের সুবিধা নিতে সংস্থাটি উৎপাদনের সবটাই দেশের বাজারে বিক্রি করেছে। সাধারণ ভাবে ছাড় পাওয়ার তিন বছরের মধ্যে এই দায় মেটাতে হয়। না-পারলে, কেন্দ্রকে অনুরোধ করলে, ওই ছাড়ের সময়সীমা বাড়ানো হয়ে থাকে। সংস্থাটি তার রফতানির দায় ভেঙেছেও ওই আশাতে। কিন্তু অভিযোগ, অনুরোধ জানানোর কথাটি ভুলে গিয়েছিল রাজ্য সরকার। কেন্দ্রের সমন আসার পরে টনক নড়েছে তাদের। কিন্তু ঠিক যতটা যুদ্ধকালীন তৎপরতায় এই সমস্যা মেটানো উচিত, ততটা তৎপর এখনও হয়ে উঠতে পারেনি রাজ্য সরকার। এই অভিযোগের উত্তর অবশ্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে মেলেনি।
জানুয়ারি মাসেই ‘বেঙ্গল লিডস’। রাজ্যের শিল্প দফতর এবং শিল্পমন্ত্রীর সময় নেই অন্য কোনও দিকে মন দেওয়ার। পেট্রোকেম শিল্পের দাবি, রাজ্যের শো পিস এই প্রকল্পকে চাঙ্গা করার রাস্তায় হাঁটতে ওই একই রকম ভাবে মনোনিবেশ করুক রাজ্য। রাজ্যের শিল্পের স্বার্থেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy