২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Rimpa Bera

শিক্ষকতার স্বপ্ন থেকে বাস্তবের আঙিনা, কেমন ছিল রিম্পার পথচলা?

সব মিলিয়ে রিম্পা আজ প্রতিষ্ঠিত। প্রথম যেদিন চাকরির চিঠিটা হাতে পান, সেদিন অজান্তেই চোখে জল চলে এসেছিল রিম্পার। যার জন্য এত পরিশ্রম, তা আজ সার্থক হয়েছে।

Rimpa Bera

রিম্পা বেরা

এবিপি ডিজিটাল ব্র্যান্ড স্টুডিয়ো
শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০২৩ ২১:৪৭
Share: Save:

এভারেস্টের উচ্চতা হোক বা গোমুখ থেকে গঙ্গার গতিপথ নির্ধারণ। আঙুলের ছোঁয়ায় দেশ পেরিয়ে বিদেশে চলে যাওয়া, কখনও বা কোনও প্রত্যন্ত গ্রামের মাটির নকশা — ছোট থেকেই ভূগোলের প্রেমে পড়েছিলেন রিম্পা বেরা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই প্রেম আরও গাঢ় হতে থাকে। নিজের লক্ষ্যের দিকে ক্রমশ এগিয়েছেন তিনি। রিম্পা এখন ভূগোলের শিক্ষিকা।

রিম্পার পড়াশোনা শুরু ব্রাহ্ম সমাজের ব্রাহ্ম বালিকা শিক্ষালয়ের প্রাথমিক বিভাগে। মোটামুটি তখন থেকেই তাঁর পছন্দের বিষয় বাংলা ও ভূগোল। ছোটবেলায় ক্লাসরুমে ভূগোলের শিক্ষিকা যখন গ্লোব এবং ম্যাপ নিয়ে পড়াতেন, তখন থেকেই তার প্রতি এক অমোঘ টান তৈরি হয় রিম্পার। কোথায় কোন দেশ, ক’টা মহাদেশ, বিশ্বজুড়ে নদীর গতিপথ — বইয়ের পাতায় এই সমস্ত নিয়েই দিন কেটে যেত। খানিক বড় হয়ে রিম্পা বুঝতে পারেন বিষয়টা তাকে টানছে। ‘ভূগোলের দিদিমণির মতো হতে হবে’ —এই লক্ষ্য নিয়েই চলতে থাকে পড়াশুনা।

স্কুল শেষ করে স্নাতক পর্বে ভূগোল নিয়ে বিদ্যাসাগর কলেজে ভর্তি হন রিম্পা। তার পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএড। মাঝের সময়টায় সেন্ট ফ্রান্সিস অ্যাকাডেমি অ্যাকাডেমি থেকে প্রশিক্ষণ নেন তিনি। এর পরে আর ফিরে তাকাতে হয়নি। অতিমারির শেষ পর্যায়ে অর্থাৎ ২০২০-এর শেষ দিকে একটি স্কুলে ভূগোলের শিক্ষিকা হিসাবে যোগ দেন।

ছোটবেলা থেকে যে স্বপ্নকে লালন করছিলেন রিম্পা, সেই স্বপ্ন আজ বাস্তব। সব মিলিয়ে তিনি আজ প্রতিষ্ঠিত। প্রথম যে দিন চাকরির চিঠি হাতে পান, অজান্তেই চোখে জল এসেছিল রিম্পার। যার জন্য এত পরিশ্রম, তা আজ সার্থক। কেমন ছিল সেই অনুভূতি? রিম্পা বলেন, “ভূগোলের দিদিমণি হিসাবে পড়ানোর সুযোগ পাওয়া আমার কাছে এক অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা। স্কুলের প্রিন্সিপাল থেকে সহকর্মী শিক্ষক-শিক্ষিকা— প্রত্যেকের সহযোগিতা ও ভালবাসা আমার শিক্ষা দানের পথকে আরও সুন্দর ও স্মরণীয় করে তুলেছে।”

রিম্পা বেরা

রিম্পা বেরা

ছোটবেলায় একটি কবিতার লাইনকে অত্যন্ত ভালবেসে ফেলেছিলেন রিম্পা — ‘ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুরই অন্তরে’। কোনও শিক্ষার্থীর জীবনে শিক্ষক-শিক্ষিকার গুরুত্ব কতটা হতে পারে, তা ছোট থেকেই বিশ্লেষণ করতে পেরেছিলেন। এই দায়িত্ব, তাঁর কাছে গুরুদায়িত্ব। তাকে রিম্পা কী ভাবে বিশ্লেষণ করেন? উত্তরে বললেন, “আমাদের প্রাথমিক দায়িত্বই হল লিঙ্গ বৈষম্যকে দূরে সরিয়ে রেখে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর সঠিক এবং পরিপূর্ণ মানসিক বিকাশ ঘটানো। যাতে তারা ভবিষ্যত প্রজন্মের উত্তরসূরি হিসাবে সকল ভেদাভেদ দূর করে একত্রিত হয়ে দেশ ও সমাজের কাজে অংশ নিতে পারে।”

বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে তিনি অনেক মহিলার কাছেই অনুপ্রেরণা। স্বপ্নকে বাস্তব করতে যে ধরনের আত্মবিশ্বাসের প্রয়োজন, তা খুব কম মানুষের মধ্যেই থাকে। রিম্পা দেখিয়েছেন, যে স্বপ্ন মানুষকে কোথায় নিয়ে যেতে পারে। এই প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, “রাজনীতি থেকে খেলাধুলো, গবেষণা এবং আরও বিভিন্ন ক্ষেত্রে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নারীরা নিজেদের দৃষ্টান্ত করে গড়ে তুলেছেন। যার প্রতিচ্ছবি আমাদের মনোবলকে আরও শক্তিশালী করে তোলে। এবং আমাদের অন্তরাত্মা জানান দেয় যে, আমরাই নারী, আমরাই পারি। তাই সব শেষে এটাই বলব, যে সমাজের সব ক্ষেত্রে, সব জায়গায় নারীদের জন্য সকল দ্বার উন্মুক্ত করা হোক। এমন মানসিকতা তৈরি হলে তবেই নারী দিবস সার্থক হবে।”

সুন্দর সমাজ ও দেশ গড়ে তুলতে শিক্ষা এবং শিক্ষকতার ভূমিকা কতখানি, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। শিক্ষাই একমাত্র মাধ্যম যা দিয়ে সমাজের বিকাশ ও উন্নয়ন সম্ভব। আর এই মহৎ কাজে দক্ষতার সঙ্গে সাবলীল ভাবে নিজের দায়িত্ব পালন করে চলেছেন রিম্পা বেরা। এই পরিচিতিই তাঁকে করে তুলেছে ‘সর্বজয়া’।

এই প্রতিবেদনটি 'উই মেক আস' -এর সঙ্গে আনন্দবাজার ব্র্যান্ড স্টুডিয়ো দ্বারা যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত।

অন্য বিষয়গুলি:

Women's Day Sarbojoya Entrepreneur Women Business
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy