মিঠু বিশ্বাস
‘পৃথিবীতে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর,
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর’
— এ কথা সত্য যে, পুরুষের একক অংশগ্রহণের মাধ্যমে সামাজিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। সেই কথাই আরও এক বার মনে করিয়ে দিচ্ছেন মিঠু বিশ্বাস। পেশায় শিক্ষিকা মিঠু এক জন সফল ও স্বাবলম্বী নারী। শিক্ষকতা তাঁর কাছে শুধুই পেশা নয়, বরং এক কর্মযজ্ঞ। জীবনের অন্যান্য দিকগুলি সামলে ওঠার পরে কখনওই এই বিষয়টিতে আপস করেননি তিনি। দীর্ঘদিন ধরেই নিষ্ঠার সঙ্গে প্রজন্মের পর প্রজন্ম গড়ে তোলার কাজ করে চলেছেন।
ছোটবেলা থেকেই স্কুলের চার দেওয়ালে মন মজেছিল মিঠুর। স্কুলের বেঞ্চ, ব্ল্যাকবোর্ড, শিক্ষকের পড়ানো, পরীক্ষা- সব কিছুই ভালবাসতেন তিনি। পড়াশোনায় ভীষণ মনোযোগ ছিল তাঁর। তবে খেলাধুলো আর দুষ্টুমিও চলত সমান তালে। ক্লাসরুমে পড়াশোনার পাশাপাশি শিক্ষিকারা কী ভাবে পড়াচ্ছেন, তার ধরনও লক্ষ্য করতেন ভাল ভাবে। রপ্ত করতেন শিক্ষিকা সুলভ আচরণ। মাঝে মধ্যে স্কুল থেকে চক পেন্সিল নিয়ে এসে বাড়ি ফিরে তা দিয়ে দরজার পিছনে লেখালিখি করতেন। স্কুলের শিক্ষিকা সেজে খেলার মতো করে যেন বড়বেলার স্বপ্ন দেখতেন মিঠু। পরবর্তীকালে এই খেলাই যেন তাঁর কাছে একমাত্র ধ্যান ও জ্ঞান হয়ে ওঠে। শুরু হয় সফর।
মিঠুর চোখে শিক্ষিকা হওয়ার স্বপ্ন ছিল ছোট থেকেই। আর বড় হতে হতে সেটাই লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়। স্কুল, কলেজ শেষ করে ২০২২-এ তিনি বি.এড. শেষ করেন। তার পরে সেন্ট ফ্রান্সিস অ্যাকাডেমি স্কুলে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষিকা হিসাবে নিযুক্ত হন। বলা চলে, সেখান থেকেই স্বপ্ন বাস্তব হওয়া শুরু।
এখন আর দরজার পিছনে চক পেন্সিল দিয়ে লেখা নয়, পরিবর্তে আসল ব্ল্যাকবোর্ডে লিখে ছাত্রছাত্রীদের পড়ানো তাঁর রোজের রুটিন। নিজের কাজ নিয়ে যথেষ্ট গর্বিত মিঠু। স্কুলে শিক্ষাদানের মাধ্যমে নিজের স্বপ্নকে যেন প্রতিনিয়ত বাঁচিয়ে রাখছেন। এই বিষয়ে মিঠু বলেন, “জীবন গতিময় এবং এই গতি স্বভাবতই এক অনন্য গন্তব্য প্রত্যাশী। গতিকে প্রবাহমান রেখে সেই গন্তব্যে পৌঁছানোর স্বপ্ন আমার ছোটবেলা থেকেই স্থির ছিল হয়তো।”
বর্তমানে মিঠু এক জন স্বাধীনচেতা, প্রতিষ্ঠিত নারী। নারী সচেতনতার প্রসার নিয়েও বিভিন্ন উদ্যোগে সামিল হয়েছেন তিনি। ভবিষ্যত প্রজন্ম যাতে কোনও ক্ষেত্রেই লিঙ্গবৈষম্যকে জায়গা না দেয়, সেই মানসিকতা তৈরির কাজও এখন থেকেই শুরু করেছেন। শিক্ষার্থীদের পঠনপাঠনের সঙ্গে মানবিক মূল্যবোধের পাঠও দিচ্ছেন মিঠু। তিনি মনে করেন, “একবিংশ শতাব্দীতে এসেও নারীদের উপর অত্যাচার, অশালীনতার নানা ঘটনা শোনা যায়। এই সকল ঘটনার অবসানের জন্য, অন্যায়ের প্রতিবাদের জন্য নারীরা পুরুষের সঙ্গে পায়ে পা মিলিয়ে এগিয়ে চলেছে সাফল্যের পথে।”
মিঠু দেখিয়ে দিয়েছেন, ছোটবেলার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপায়িত করতে কতটা কঠিন পরিশ্রমের প্রয়োজন হয়। অনেককে অনুপ্রেরণা জুগিয়ে তিনি আজ তাই ‘সর্বজয়া’।
এই প্রতিবেদনটি 'উই মেক আস' -এর সঙ্গে আনন্দবাজার ব্র্যান্ড স্টুডিয়ো দ্বারা যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy