বর্ষা রায় মুখোপাধ্যায় ও বৃষ্ণি
‘ডিজাইনার’ — আধুনিক প্রজন্ম এই শব্দটির সঙ্গে বেশ ভাল ভাবেই পরিচিত। পরিসংখ্যান বলছে, বিগত কয়েক দশকের এই বিভাগে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় দশ গুণ বেড়েছে। তবে এই গল্প বর্ষা রায় মুখোপাধ্যায়ের। ইচ্ছে ছিল ফ্যাশন ডিজাইনার হবেন। কিন্তু ভাগ্যের ফেরে মন বেঁধে ফেললেন গয়নার বাক্সে।
ফ্যাশন ডিজাইনিং নিয়ে বেঙ্গালুরুতে পড়তে যান বর্ষা। এর পরে কর্মজীবনে প্রবেশ। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সামলাতে থাকেন সংসারের দায়িত্বও। ২০১১ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত কলকাতার ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন বর্ষা। ২০১৩ –তে তাঁর পরিবারে নতুন সদস্যের আগমন ঘটে। বৃষ্ণি — বর্ষার সন্তান। এক দিকে কাজ, অন্য দিকে সংসার সামলে, সন্তানের দেখাশোনা — সব মিলিয়ে নতুন ভূমিকায় দুই দিক সামলতে হিমশিম! সিদ্ধান্ত নিয়েই চাকরি ছেড়ে দেন বর্ষা। চলতে থাকে সন্তানের লালন পালন। কিন্তু কোথাও না কোথাও যেন অপূর্ণতার স্বাদ থেকেই গিয়েছিল। নতুন কিছু করার চেষ্টা প্রতিনিয়ত হাতছানি দিতে থাকে।
মাতৃত্বকে পাশে রেখেই ২০১৬ -তে গয়নার ব্যবসা শুরু করেন বর্ষা। নাম দেন ‘বৃষ্ণি জুয়েলারি’। ছেলের নাম অনুসারেই প্রতিষ্ঠানের এই নাম।
সূক্ষ্ম ২২ ক্যারাট গোল্ড প্লেটেড গয়নার সম্ভার রয়েছে এখানে। সনাতনী বাঙালি গয়না হোক অথবা আধুনিক, বিভিন্ন অভিনব নকশার গয়না রয়েছে এখানে। নকশায় নতুনত্বের ছোঁয়াই বর্ষার এই ব্র্যান্ডকে খুব অল্প সময়েই জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছে দিয়েছে। বলা বাহুল্য, বর্তমান সময়ে সোনার গয়নার আকাশছোঁয়া দামের কারণে বহু মানুষের কাছেই এই গোল্ড প্লেটেড গয়না অন্যতম বিকল্প হয়ে উঠেছে। বাংলার বিখ্যাত কারিগর এবং প্রতিষ্ঠানের পুরস্কার প্রাপ্ত গয়নার সম্ভার এই প্রতিষ্ঠানকে আলাদা পরিচিতি এনে দিয়েছে।
২০১৬-তে যখন বর্ষা ব্যবসা শুরু করেন, তখন ক্রেতা বলতে ছিল বর্ষার বন্ধুমহল এবং পরিবারের সদস্য। ধীরে ধীরে সেই পরিসর বাড়তে থাকে। গয়নার গুণগত মান ও নকশা ক্রমে সকলের নজর কাড়তে থাকে। অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই ব্যবসা এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে তা বর্ষার পক্ষে একা দেখাশোনার করা মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়। এই পরিস্থিতিতে বর্ষার পাশে এসে দাঁড়ান তাঁর স্বামী সুনেত্র। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারের চাকরি ছেড়ে দিয়ে বর্ষার সঙ্গে ব্যবসার কাজে যুক্ত হন সুনেত্র। পাশাপাশি চলতে থাকে ছেলের দেখাশোনা।
বৃষ্ণির ঝুলিতে রয়েছে একাধিক পুরস্কার। ২০১৯-এ বেস্ট কনটেম্পোরারি জুয়েলারি ব্র্যান্ড বিভাগে এই ব্র্যান্ড পেয়েছেন ‘ইন্ডিয়া বিজনেস অ্যাওয়ার্ড’। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মুকুটে যুক্ত হয়েছে একের পর এক পালক।বলা হয়, সমস্যা মানুষকে রাস্তা দেখায়। আরও দৃঢ়তার সঙ্গে পথ চলতে সাহায্য করে। অতিমারির প্রাথমিক পর্যায়ে ব্র্যান্ড নিয়ে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলেন দু’জনেই। কিন্তু অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে সেই পরিস্থিতি সামলেছেন দু’জন। এই প্রসঙ্গে বর্ষা বললেন, “অতিমারির সময় অন্যান্য ব্যবসার মতোই আমরাও দিশেহারা হয়ে পড়েছিলাম। এবং উপলব্ধি করি যে এই বার আমাদেরও অনলাইন ব্যবসা শুরু করতে হবে।”
২০২১ -এর জুলাইতে প্রথম অনলাইন স্টোর 'বৃষ্ণি ডট কম' খোলা হয় যা রীতিমতো সাড়া ফেলে দেয়। ঠিক এর পর ‘বৃষ্ণি’র মোবাইল অ্যাপ লঞ্চ করা হয়। তখন থেকে এখনও পর্যন্ত ৫৫,০০০ হাজারেরও বেশি অর্ডার ডেলিভারি করেছে এই প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় ৩০,০০০ হাজারেরও বেশি। আর তা শুধুমাত্র ভারতেই সীমাবদ্ধ নেই। আমেরিকা, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া এবং সিঙ্গাপুরের মতো দেশও রয়েছে এই তালিকায়। ‘বৃষ্ণি’র ক্যাটালগে রয়েছে উচ্চ মানের গোল্ড প্লেটেড গয়না। এগুলির নিখুঁত ফিনিশিংয়ের জন্য গয়নাগুলিকে একেবারে আসল সোনার গয়নার মতো দেখায়। যে কারণে গ্রাহকরা সহজেই সোনার গয়নার সঙ্গে মিলিয়ে এই গয়না পরতে পারেন।
কিন্তু হঠাৎ গোল্ড প্লেটেড জুয়েলারির ব্যবসাই কেন? এই বিষয়ে বর্ষা জানালেন, “আমি মনে করি, ব্রাইডাল লুকের সময় বা বড় পার্টিতে যাওয়ার আগে, সাবেকি সাজের সঙ্গে সোনার গয়নাই ভাল মানায়। কিন্তু সব সময় আলাদা আলাদা পোশাকের সঙ্গে মানানসই সোনার গয়না কিনে ফেলা তো সম্ভব নয়। তাই নানা ধরনের বাজার চলতি বিকল্প গয়না যেমন সিটি গোল্ডের গয়না ব্যবহার করতে শুরু করি। কিন্তু গয়নার নকশা বা গুণমান কোনওটিই মনের মতো পেতাম না। এর পরেই আমি গোল্ড প্লেটেড গয়নার ব্যবহার শুরু করি। দাম এবং গুণমানের একেবারে নিখুঁত ভারসাম্য রয়েছে এই গয়নায়। সেই থেকেই এই ভাবনা।”
বর্ষার কাছে বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন ক্রেতারা। তিনি মনে করেন গ্রাহকদের থেকে তাঁর প্রতিষ্ঠান যে পরিমাণ প্রশংসা ও ভালবাসা পেয়ে চলেছে , তার যোগ্য সম্মান দেওয়া উচিত। এটাই তাঁর কাছে অনুপ্রেরণা। বর্ষার লক্ষ্য একটাই, গোল্ড প্লেটেড জুয়ালারিকে সোনার গয়নার বিকল্প হিসাবে আরও একটু পরিচিতি এনে দেওয়া। এবং এই গোল্ড প্লেটেড গয়নার দুনিয়ায় ‘বৃষ্ণি’কে শীর্ষস্থানে পৌঁছে দেওয়া। নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি তাঁর সঙ্গে জুড়ে থাকা মহিলাদের আর্থিক সংস্থানের কারণ হয়ে উঠেছেন তিনি। আর তাই তিনি আজ ‘সর্বজয়া’।
এই প্রতিবেদনটি 'উই মেক আস' -এর সঙ্গে আনন্দবাজার ব্র্যান্ড স্টুডিয়ো দ্বারা যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy