পৃথা কৌর
সেই ছোট থেকে একটাই লক্ষ্য তাঁর, স্বাধীনভাবে নিজের পায়ে দাঁড়ানো। কথা হচ্ছে দক্ষিণ কলকাতার পৃথা কাউরকে নিয়ে। এত অল্প বয়সে তাঁর এরকম চিন্তাভাবনার নেপথ্যে রয়েছে তাঁর বাড়ির পরিবেশ। পৃথার অভিভাবকেরা খুব ছোট থেকেই পৃথাকে ন্যায় নীতি এবং ভাল বিচার বোধের পাঠ দিয়েছেন। আর এই শিক্ষাই যেন পৃথাকে সুষ্ঠু জীবনের পথে চালিত করেছে। এই প্রসঙ্গে তিনি জানালেন, “আমার পরিবার অনেক স্বাধীনভাবে আমাকে বড় করেছে। কোনও দিন আমাকে নিয়মের বেড়াজালে বেঁধে রাখে নি। বরং সব সময় আমার মতামতের পাশে থেকেছে।”
ছোট থেকে ইচ্ছে ছিল বিমান সেবিকা হবেন। ভেবেছিলেন শিক্ষিকা হতে গেলে প্রচুর পড়াশুনা করতে হয়। কিন্তু পরবর্তীকালে বুঝতে পারেন শিক্ষার মধ্যেই আনন্দ লুকিয়ে রয়েছে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে লেডি ব্রেবোর্ন কলেজে দর্শন নিয়ে পড়াশোনা করেন। কারণ প্রথম থেকেই দার্শনিক চিন্তাভাবনা তাঁকে আকর্ষিত করে। পড়াশুনা শেষ করে কর্মজীবন শুরু করেন শিক্ষিকা হিসাবে। প্রাথমিক পর্যায়ে তিনি খানিকটা সন্দিহান হয়ে পড়েন যে, নিজের এই পরিচয় কী ভাবে পরিচালিত করবেন আগামী দিনে। কিন্তু ক্রমে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদানের মধ্যেই ভাল লাগা খুঁজে পান তিনি। এরই মধ্যে জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু হয়। বর্তমানে তিনি সংসার এবং কর্মব্যস্ততার মধ্যেই চুটিয়ে জীবন উপভোগ করছেন। শ্বশুর বাড়িতেও তিনি পূর্ণ সহযোগিতা পেয়েছেন। তাঁর কাজ নিয়ে পরিবারের সকলেই খুব গর্বিত।
পৃথা ভাবেন শুধু শিক্ষিকা নয়, একজন মানুষ হওয়ার মধ্যেই তাঁর জীবনের সার্থকতা। বর্তমানে তিনি সেন্ট ফ্রান্সিস অ্যাকাডেমিতে বাংলা বিষয় পড়াচ্ছেন। পাঠ্যবইয়ের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীদের জীবনের নীতিগত পাঠও পড়ান তিনি। শিক্ষার্থীদের শেখানোর মধ্যেই তিনি আনন্দের স্বাদ খুঁজে পান। জীবনে ওঠাপড়ার মধ্যেই তাঁর আনন্দের উৎস হয়ে উঠেছে এই শিক্ষাদান, যা তাঁকে আগামী দিনে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা দেয়। তিনি বললেন, “আমার এই আনন্দের ভাণ্ডার এই ছাত্রছাত্রীদের ভালবাসায় ভরে থাকুক। গত কয়েক বছরে আমি এতটাই এগিয়ে যেতে পেরেছি যে আমাকে আমার কাজের জায়গাটা আমার ভালবাসার জায়গা করে দিয়েছে।”
তিনি শিক্ষার্থীদের সব সময় বোঝানোর চেষ্টা করেন যে, আনন্দে থাকাটা জরুরি। কোনও অবস্থাতেই ভেঙে পড়লে চলবে না। তাঁর বিশ্বাস, নিজের আলোয় সবাইকে আলোকিত করতে হবে। ভিড়কে অনুসরণ নয় বরং জীবনে এমন কিছু কাজ করা উচিত যা সমাজে অবদান রাখে এবং ভিড় আমাদের অনুসরণ করে। এভাবেই তিনি সমাজে নারী স্বাধীনতার দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছেন। নারী স্বাধীনতা প্রসঙ্গে তিনি জানালেন, “একজন নারী হিসাবে আমি মনে করি নারী হল সমাজের স্তম্ভ। আমরাই যারা প্রাণের সৃষ্টি করে থাকি এবং সমাজকে এগিয়ে যেতেও সাহায্য করি।”
বাংলার পাশাপাশি অঙ্ক ও বিজ্ঞানের প্রতিও আগ্রহ রয়েছে পৃথার। নতুন আবিষ্কার ও অঙ্কের সূত্র নিয়েও নিয়মিত খোঁজ খবর রাখেন তিনি। ভবিষ্যতে অধ্যাপিকা হওয়ার ইচ্ছে রয়েছে পৃথার। তাই পড়াশোনার চর্চা রেখেছেন আজও। দর্শন নিয়ে উচ্চশিক্ষার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর। নিজে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পাশাপাশি সমাজের বহু মহিলাদের কাছে অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছেন তিনি। তিনি মনে করেন, কোনও কিছুই অসম্ভব নয়। শুধু প্রয়োজন একাগ্রতা এবং নিষ্ঠা। এভাবেই তিনি হয়ে উঠেছেন ‘সর্বজয়া’।
এই প্রতিবেদনটি 'উই মেক আস' -এর সঙ্গে আনন্দবাজার ব্র্যান্ড স্টুডিয়ো দ্বারা যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy