জুহি ও প্রিয়াঙ্কার ব্র্যান্ড সাখিয়া
‘বন্ধু বিনে প্রাণ বাঁচে না’ — গানের এই পংক্তিটি শোনা নেই, এমন মানুষের সংখ্যা অত্যন্ত কম। জুহি পোদ্দার আর প্রিয়াঙ্কা পাল একে অপরের অত্যন্ত কাছের বন্ধু। সেই ভালবাসা ও বন্ধুত্ব থেকেই জন্ম ‘সাখিয়া’র।
যার নামেই লুকিয়ে রয়েছে বন্ধুপ্রীতি। ক্লাস এইটে পড়ার সময় প্রিয়াঙ্কার মন মজেছিল ফ্যাশনে। স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে ফ্যাশন ডিজাইনার হবেন। মন আর মস্তিষ্ক জুড়ে শুধুই সৃজনশীলতা। সারাক্ষণ যেন নতুন কিছু তৈরির খিদে! পড়াশোনা শেষ করে চাকরিতে যোগ দেন। তবু কিছুতেই যেন মানসিক শান্তি পাচ্ছিলেন না। ফ্যাশন ডিজাইনার হওয়ার স্বপ্ন তাঁকে তাড়া করে বেড়াচ্ছিল। কিন্তু উপায়? সব ছেড়ে এক জন দর্জি আর একটি সেলাই মেশিন নিয়ে প্রিয়াঙ্কা চালু করে দিলেন নিজের টেলর ইউনিট।
পেশায় শিক্ষিকা জুহি যখন কলকাতায় আসেন, তখন শিক্ষকতা ছেড়ে মাল্টি ডিজাইনার হাউজ ‘৮৫ ল্যান্সডাউন’ -এ কাজ করেন প্রায় সাত বছর। এর পরে সব্যসাচী, দেব আর নীলদের মতো বেশ কিছু নামকরা স্বতন্ত্র ডিজাইনারদের সঙ্গে কাজও করেন। তাঁদের হাতের কাজ খুব কাছে থেকে দেখে অনেক কিছু শিখতে পেরেছেন, এমনটাই মত জুহির।
অন্য দিকে প্রিয়াঙ্কা পড়াশোনা করেন ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ফ্যাশন টেকনোলজি’ -তে। এখানে প্রবেশিকা পরীক্ষায় সর্বভারতীয় স্তরে তৃতীয় স্থান দখল করেন তিনি। কলেজ এবং ফ্যাকাল্টির প্রতি কৃতজ্ঞ তিনি। কারণ তাঁর মতে, তিনি যা কিছু শিখেছেন, আজ যে জায়গায় দাঁড়িয়ে আছেন, তা শুধুমাত্র তাঁদের জন্যই।
এক দিকে প্রিয়াঙ্কার জামাকাপড় তৈরির প্রতি গভীর আগ্রহ আর অন্য দিকে জুহির পোশাকের স্টাইল ও আধুনিক ফ্যাশনের প্রতি অপরিসীম ভালবাসা। এই দু’য়ের মিশেলে জন্ম ‘সাখিয়া’র। আধুনিক প্রজন্মের চাহিদার কথা মাথায় রেখে, তাঁদের স্বতন্ত্র স্বাদের পোশাক উপহার দেওয়াই এই সংস্থার মূল মন্ত্র হয়ে দাঁড়ায়। দু’জনেই বুঝতে পারেন কলকাতায় এর ভাল বাজার রয়েছে। সেই কারণে ব্র্যান্ড তৈরির আগে বেশ কিছু দিন কলকাতায় এসে এখানে নামকরা ফ্যাশন ডিজাইনারদের সঙ্গে কাজও করেন দু’জনে।
টেলারিং ফ্যাব্রিক ও কাটিং — এগুলি সম্পর্কে শিখে নেন প্রিয়াঙ্কা ও জুহি। শুরু হয় ‘সখিয়া’র যাত্রা। বিভিন্ন ধরনের নকশা করা ব্লাউজ ও অন্যান্য পোশাক — নজরকাড়া সম্ভার রয়েছে এই ব্র্যান্ডের ঝুলিতে। ব্লাউজ ছাড়াও অন্যান্য পোশাকও পেয়ে যাবেন এখানে। অনলাইন সেলিংয়ের মাধ্যমে প্রাথমিক পর্যায়ে ডিজাইনার ব্লাউজের অল্টারেশন এবং কাস্টমাইজেশন দিয়ে কাজ শুরু করেন প্রিয়াঙ্কা ও জুহি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ডিজাইনার ব্লাউজও তৈরি করতে থাকেন। এ ছাড়াও শুরু হয় বিভিন্ন ডিজাইনের হরেক রকম পোশাক তৈরি। তাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রম, একনিষ্ঠ মনোযোগ, স্বতন্ত্রতা এবং দক্ষতা খুব স্বল্প সময়েই তরুণ প্রজন্মের কাছে বিপুল প্রশংসা কুড়িয়ে নেয়। কাজের নৈপুণ্যই আজ তাঁদের পরিচয়।
ইতিমধ্যেই সাখিয়ার ঝুলিতে দু’টি পুরস্কার রয়েছে। “বঙ্গপ্রেনিওর” অনুষ্ঠানে ‘এথনিক অ্যান্ড ইন্ডিয়ান’ বিভাগে ‘দ্য বেস্ট অন্ত্রোপ্রনার অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছে ‘সখিয়া’। পুরস্কার তুলে দিয়েছিল কলকাতার একটি বিখ্যাত সংবাদমাধ্যম। এ ছাড়াও ‘অপরাজিতা সম্মান’ অনুষ্ঠানে ‘বাডিং ডিজাইনার অফ দ্য ইয়ার ২০২১’ পুরস্কার পায় ‘সখিয়া’। যা অত্যন্ত গর্বের বিষয়।
মহিলা ও পুরুষ মিলিয়ে প্রায় ২০ থেকে ২৫ জন কাজ করছেন সাখিয়ার সঙ্গে। তাঁদের সুবিধা-অসুবিধার দিকে সব সময়ে খেয়াল রেখেছেন জুহি ও প্রিয়াঙ্কা। ‘সখিয়া’র নিজস্ব কারখানা রয়েছে। এ ছাড়াও আলিপুরে তাদের অফিস ও ফ্ল্যাগশিপ স্টোর রয়েছে। রয়েছে ডিজাইনার স্টুডিয়োও। সব মিলিয়ে ‘সখিয়া’র ব্যবসা চলছে রমরমিয়ে।
জুহি ও প্রিয়াঙ্কা — শুরুর সময় থেকেই দু’জনের প্রথম ও শেষ উদ্দেশ্য ছিল যে ‘সাখিয়া’র প্রতিটি প্রোডাক্ট হতে হবে একেবারে পারফেক্ট। সেই আত্মবিশ্বাসের জোরেই আজ তাঁরা সফল। এই প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে তাঁরা বলেন, “সাখিয়া থেকে কেনাকাটার পরে ক্রেতা খুশি হলেই আমরা সন্তুষ্ট। আমাদের সব ধরনের পোশাকই খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে মহিলাদের কাছে। তাই পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি আমাদের। অনবরত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি আগামী দিনে পোশাকে আর কী কী নতুনত্ব আনা যায়!”
বর্তমানে জুহি এবং প্রিয়াঙ্কা, দু’জনেই সোশ্যাল মিডিয়ার পরিচিত মুখ। তাঁদের ভিডিয়ো জুড়ে শুধুই ফ্যাশন আর স্টাইলের ঝলক। তাঁদের এই কাজ আজ অনেক মহিলাদের কাছে উদাহরণ। নিজেরা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পাশাপাশি অন্যদেরও জুগিয়ে চলেছেন অনুপ্রেরণা। জুহি ও প্রিয়াঙ্কা তাই হয়ে উঠেছেন ‘সর্বজয়া’।
এই প্রতিবেদনটি 'উই মেক আস' -এর সঙ্গে আনন্দবাজার ব্র্যান্ড স্টুডিয়ো দ্বারা যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy