৩০ অক্টোবর ২০২৪
Tarunima Bandopadhayay

ডানপিটে ছেলেবেলা থেকে অধ্যাপনা ও ব্যবসা, কেমন ছিল তরুণিমার স্বপ্নপূরণের যাত্রা?

হাতে মাত্র ১০০ টাকা পুঁজি নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন তরুণিমা। অত্যন্ত কম সময়েই ‘রাপুঞ্জেল বিউটি’কে সাদরে গ্রহণ করেছে সাধারণ মানুষ।

Tarunima Bandopadhayay

তরুণিমা বন্দ্যোপাধ্যায়

এবিপি ডিজিটাল ব্র্যান্ড স্টুডিয়ো
শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০২৩ ২১:৪৪
Share: Save:

এই গল্প এমন এক মেয়েকে ঘিরে, যিনি ছোট থেকেই নিয়ম ভাঙার লড়াইয়ে ওস্তাদ। খেলনাবাটি নয়, তাঁর বেড়ে ওঠা রীতিমতো ডাকাবুকো মেয়েদের মতো। কখনও দেওয়াল টপকে খেলতে যাওয়া, কখনও বা চোখে চোখ রেখে প্রশ্ন করা, কখনও বা মারপিট — ছেলেবেলা থেকেই খানিক আলাদা ভাবে বড় হয়েছেন এ গল্পের নায়িকা তরুণিমা বন্দ্যোপাধ্যায়। বর্তমানে তিনি অধ্যাপিকা। পাশাপাশি সফল ব্যবসায়ীও বটে! শিক্ষকতার সঙ্গে জুড়ে রয়েছেন দীর্ঘ দিন ধরেই। অল্প সময়ে লাভের মুখ দেখেছে তাঁর সংস্থা। তরুণিমার পথচলার গল্প সত্যিই অনুপ্রেরণা দেয়।

ডানপিটে হলেও আর পাঁচটা সাধারণ মেয়ের মতোই মধ্যবিত্ত পরিবারে বড় হয়ে উঠেছেন তরুণিমা। বাবা ছিলেন পেশায় সরকারি চাকরিজীবী এবং মা শিক্ষিকা। দুষ্টুমির জন্য স্কুলে পড়ার সময়ে বাবা-মা’র কাছে প্রায়ই অভিযোগ আসত। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে আমূল বদলে ফেলেছেন তরুণিমা। গতানুগতিক নিয়মের বেড়াজাল তাঁকে বরাবরই বিচলিত করে এসেছে। সমাজের নানা বাঁকা প্রশ্নকে রীতিমতো ফুৎকারে উড়িয়ে পথ চলেছেন তিনি।

তরুণিমার বিউটি প্রোডাক্ট

তরুণিমার বিউটি প্রোডাক্ট

পড়াশোনা শেষ করার পরে বর্তমানে তরুণিমা একটি কলেজের শিক্ষাবিজ্ঞানের অধ্যাপিকা। পাশাপাশি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করছেন তিনি। তিনি মনে করেন, জীবনে কারও উপরে নির্ভরশীল হওয়া উচিত নয়। সুন্দর জীবনযাপনের লক্ষ্যে প্রতিটি নারীর প্রতিষ্ঠিত হওয়া প্রয়োজন। আর্থিক সচ্ছলতা বজায় থাকলেই জীবন অনেকটাই দুশ্চিন্তামুক্ত হয়। আর তরুণিমা -এর এই চিন্তাধারার নেপথ্যে রয়েছেন তাঁর মা। এই প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “আমি আমার মায়ের মতোই। মা শিখিয়ে ছিলেন, জীবনে কারওর উপর নির্ভর করবি না টাকার জন্য। একটা সেফটিপিন কেনার জন্যও যেন হাত পাততে না হয়। আমি মায়ের সেই প্রতিটি কথা মেনেই এগিয়ে চলেছি।” লক্ষ্যে পৌঁছতে গিয়ে অসংখ্য কালো মাথার ভিড়ে হারিয়ে না গিয়ে বরং ছোট ছোট ভাগে লক্ষ্য স্থির করে এগিয়ে গিয়েছেন তিনি। চড়াই উৎরাইয়ের মধ্যেও নিজের মতো করেই গুছিয়ে নিয়েছেন লক্ষ্য পূরণের পথ।

তরুণিমার গল্প কিন্তু এখানেই শেষ নয়। অধ্যাপনা এবং পিএইচডির পাশাপাশি তিনি শুরু করেছেন নিজের ব্যবসাও। নাম দিয়েছেন ‘রাপুঞ্জেল বিউটি’। ত্বক ও চুলের যত্নের জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রসাধনী তৈরি করেন তিনি। মূলত প্রাকৃতিক উপাদান দিয়েই তৈরি হয় এগুলি। ব্যবসা শুরুর আগে এই বিষয়ে দুই বছর পড়াশোনাও করেছেন তিনি।

তরুণিমা বন্দ্যোপাধ্যায়

তরুণিমা বন্দ্যোপাধ্যায়

অধ্যাপনা থেকে ব্যবসা — এই নিয়েই সময় কেটে যায় তরুণিমার। সকালে কলেজে পড়িয়ে বাড়ি ফিরে খানিক বিশ্রাম নিয়েই আবার ব্যবসার কাজে লেগে পড়েন। যদিও তরুণিমার ভাবনাটা একটু অন্য রকম। বেশি সময় নিয়ে ভাবনাচিন্তায় বিশ্বাসী নন তিনি। বরং দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজের মতো করে এগিয়ে যেতেই পছন্দ করেন। এই বিষয়ে তাঁর সাফ বক্তব্য, “আমি ভেবে চিন্তে খুব একটা কিছু করি না। আগে ঝাঁপিয়ে পড়ি। ব্যস! দেখলাম মানুষ পছন্দ করছেন। আর কী!” এখন এটাই জীবন তরুণিমার। সেই ছোটবেলার দু’চোখ ভরা স্বপ্ন সত্যি হওয়ায় উচ্ছ্বসিত তিনি।

হাতে মাত্র ১০০ টাকা পুঁজি নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছিলেন তরুণিমা। অত্যন্ত কম সময়েই ‘রাপুঞ্জেল বিউটি’কে সাদরে গ্রহণ করেছে সাধারণ মানুষ। তরুণিমার অবিশ্রান্ত পরিশ্রম আর অদম্য জেদের উপর ভর করে এই সংস্থা আজ বেশ জনপ্রিয়। তবে তাঁর সব কৃতিত্বের নেপথ্যে রয়েছে দু’টি মানুষের ক্রমাগত সমর্থন ও অনুপ্রেরণা। তাঁর মা ও বাবা। স্বপ্নকে সঙ্গী করে আগামীর পথে এগিয়ে চলেছেন তরুণিমা। তাঁর এই পথ আজ বহু নারীর কাছে অনুপ্রেরণা। আর সেই কারণেই তিনি হয়ে উঠেছেন ‘সর্বজয়া’।

এই প্রতিবেদনটি 'উই মেক আস' -এর সঙ্গে আনন্দবাজার ব্র্যান্ড স্টুডিয়ো দ্বারা যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Share this article

CLOSE