তানিয়া পাইক মজুমদার
যে কোনও মানুষের জীবনে গুরু অর্থাৎ শিক্ষক-শিক্ষিকার অবদান অনস্বীকার্য। তা সে শিক্ষাগত যোগ্যতা হোক অথবা চরিত্র গঠনে। প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান– সব ক্ষেত্রেই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের থেকে আমরা অনেক কিছু শিখি। ক্লাসরুমে বন্ধুদের আলোচনায় ঢুকে পড়ে- ‘আমার প্রিয় স্যার অমুক’, ‘ওই ম্যাম আমার ফেভারিট’-এর মতো কথা। প্রিয় বিষয় আর নম্বরের ভিড়ে সেই মানুষদের নিয়েই স্মৃতি তৈরি হতে থাকে, যা থেকে যায় আজীবন। আসলে ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্কই যে বড় মধুর। কিছুটা সিলেবাস, কিছুটা শাসন, কিছুটা আবদার, কিছুটা মজা- সবটা মিলিয়ে।
শিক্ষার্থীদের সেই স্মৃতির ভিড়ে ঠিক এ ভাবেই থেকে যেতে চান তানিয়া পাইক মজুমদার। সেন্ট ফ্রান্সিস অ্যাকাডেমি -তে বাংলা পড়ান তিনি। যাঁর কাছে শিক্ষকতা নিছক জীবিকা নয়। বরং যেন এক সাধনা। শিক্ষাদান যাঁর কাছে গুরুদায়িত্বের মতো। পরিবার ও কর্মক্ষেত্রে দায়িত্ব – দুই-ই সুনিপুণ ভাবে পালন করে চলেছেন তিনি।
এ বিষয়ে তানিয়া বলেন, “নারীরা স্বয়ংসিদ্ধা। সকল প্রকার দায়িত্বের বোঝা কাঁধে চাপিয়ে দিন-রাত নিজেদের কর্তব্য পালন করে চলেছেন। এক জন শিক্ষিকা তথা কর্মরতা নারী হিসাবে বেশ গর্ববোধ হয়। সব দিক সামলে ছোট ছোট কোমল প্রাণকে সুন্দর ভাবে গড়ে তোলার গুরুভার কাঁধে নিয়েই বেশ এগিয়ে চলেছি।”
প্রথাগত শিক্ষার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের স্বনির্ভরতার উপরে জোর দেওয়ার পরামর্শ দেন তানিয়া। যা ছাত্রছাত্রীদের আগামী দিনে জীবনের প্রকৃত অর্থ শেখাবে। এই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তিনি ফিরে যান নিজের শৈশবে। তানিয়া বলেন, “শৈশবে দেখেছি মা হাসিমুখে কথার জাদুকাঠিতে মন খারাপের কালো মেঘ সরিয়ে মনের আকাশকে ঝলমলে, রঙিন তুলত। আজ এক জন শিক্ষিকা হয়ে প্রতিনিয়ত এই চেষ্টাই করি যাতে ছোট্ট ছোট্ট প্রাণগুলো জীবন পথে চলতে গিয়ে বারবার পড়ে গেলেও যেন উঠে দাঁড়াতে শেখে। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারে।”
বলা হয়, শিক্ষক-শিক্ষিকারা দেশ গড়ার কারিগর। সভ্যতার ধারক ও বাহক তাঁরা। বিশুদ্ধ জ্ঞান, মানবিক এবং নৈতিক শিক্ষাদানের মাধ্যমে চরিত্র তথা সমাজের বিকাশ ঘটান শিক্ষক-শিক্ষিকা। বিখ্যাত দার্শনিক কনফুসিয়াস বলেছেন, “এক জন শিক্ষক সর্বদাই শিক্ষার্থীর অভ্যন্তরীণ প্রকৃতির উৎকর্ষ সাধনে সচেষ্ট থাকবেন।” এই কথাকেই যেন মনে প্রাণে বিশ্বাস করে এই কাজে ব্রতী থেকেছেন তানিয়া।
এই প্রসঙ্গে তানিয়া জানান, “আশা করব সুদূর ভবিষ্যতে এমন একটা শুভ দিনের সম্মুখীন আমরা হব, যে দিন প্রভাতের নবারুনের রক্তিম আলোয় সমাজ থেকে লিঙ্গ ভেদ, বৈষম্যতার ন্যায় সকল প্রকার পঙ্কিলতা ধৌত হয়ে এক সুন্দর সুষ্ঠু সমাজ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে।” তাঁর কাছে এই জীবন যেন সেই কবিতার মতো — ‘ ডানায় আমার বন্হি ছটা,অক্ষি আমার স্বপ্ন মাখা / কন্ঠে আমার মা ভৈঃ বাণী, হৃদয়ে আঁধার ভালবাসার।’
আগামী প্রজন্মের দৃঢ় চরিত্র গঠনের কাজের মাধ্যমে তিনি এক দিকে যেমন আজকের নারীদের কাছে স্বাবলম্বী হওয়ার পথিকৃৎ হিসাবে নিজেকে তুলে ধরেছেন, ঠিক সেরকমই নিজের জীবিকা অর্থাৎ শিক্ষাদানের প্রক্রিয়াকে এক অন্য মাত্রায় নিয়ে যাওয়ার চিন্তা ভাবনা করছেন। শুধু পুঁথিগত শিক্ষাতেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং ছাত্রছাত্রীদের নীতিগত শিক্ষার উপরও জোর দেওয়া বিশেষ জরুরি বলে মনে করেন তিনি। সব কিছু মিলিয়েই তাই আজ তিনি ‘সর্বজয়া’।
এই প্রতিবেদনটি 'উই মেক আস' -এর সঙ্গে আনন্দবাজার ব্র্যান্ড স্টুডিয়ো দ্বারা যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy