রূপসা সেতু। খুলনা।
মধুমতী আজও যায় বয়ে যায়। একই ভাবে, না থেমে। খুলনা-ফরিদপুরের ধমনী। বহমান জলতরঙ্গ। সেখান থেকে যারা পশ্চিমবঙ্গে স্থানান্তরিত তাদের স্মৃতিতেও মধুমতী। নব্বই পেরোন চিত্র পরিচালক মৃণাল সেনের মনেও। সত্যজিৎ রায়ের ‘অপুর সংসার’এ অপুর বিয়ে খুলনাতেই। নদীর রূপ, নাম জায়গায় জায়গায় বদলায়। মধ্য হিমালয়ের গঙ্গোত্রী হিমবাহ থেকে নেমে গঙ্গার দক্ষিণ-পূর্বাংশ বাংলাদেশে। গঙ্গা মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ানে ভাগীরথী-পদ্মায় বিভক্ত। রাজশাহী দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ। দক্ষিণে এগিয়ে গোয়ালন্দের কাছে যমুনায় মিলন। আরও দক্ষিণে চাঁদপুরে পৌঁছে মেঘনায় পতন। অন্তিম যাত্রা বঙ্গোপসাগরে। যেতে যেতে শাখাপ্রশাখার বিস্তার। আড়িয়াল খাঁ, গড়াই, মধুমতীর জন্ম পদ্মার কোলে। এ বার কলকাতা থেকে মধুমতী যাওয়া যাবে ‘আলোর বেগে’। খুলনা-কলকাতার রাস্তাও নাগালে। মাত্র চার ঘণ্টার সফর। দু’প্রান্ত ছোঁয়া যাবে নিশ্চিন্তে। দু’টি ভলভো বাস গড়বে নতুন সেতু। বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রীর নতুন বন্ধন।
খুলনার মধুমতীর জন্য মন কেমন করা লোক কম নেই পশ্চিমবঙ্গে। দ্বিধায় জড়ানো ইচ্ছে। ঘুরে ফিরে একটাই প্রশ্ন, কী করে যাওয়া যায়। মৈত্রীর বাসই প্রার্থনার স্পষ্ট উত্তর। কলকাতায় ওঠা, খুলনায় নামা। মাঝে ঘন্টা খানেকের বিরতি। বেনাপোল-পেট্রাপোলে ইমিগ্রেশন, কাস্টমস চেকিং। তারপরেই সীমানা টপকে এপার ওপার। পথে ব্রেকফাস্ট। রাস্তায় খিদে পেলে লাঞ্চ। তার হয়ত দরকার হবে না। চার ঘন্টার তো পথ। ওইটুকু যাওয়ায় এত খাই খাই করলে বিলম্ব। মুরগি বা রুই মাছের ঝোল মেখে ভাত মুখে তুলতেও তো সময় লাগে। খুলনায় যাদের আত্মীয়স্বজন, তারা সেখানে গিয়েই মধ্যাহ্ন ভোজ সারতে পারে। হোটেলে উঠলেও অসুবিধে নেই। খাওয়া-দাওয়ার এলাহি ব্যবস্থা। পদ্মার ইলিশও অমিল নয়। ভারতের বন্ধুদের স্বাগত জানাতে খুলনার হোটেলে বিশেষ প্রস্তুতি। খুলনা-কলকাতা বাস সার্ভিস শুরুর প্রতীক্ষা। ট্রায়াল রান শুরু হয়েছে ৩০ আগস্ট।
১৯৬৫তে খুলনা-কলকাতার সব সম্পর্ক ছিঁড়ে ফেলেন পাকিস্তানের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আয়ুব খান। তাঁর নির্দেশে কাজটা করেছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মোনেম খান। রেল-সড়ক যোগাযোগের প্রাচীর একাত্তরে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ভাওলেও, যাতায়াত সহজ হয়নি। ট্রেনে বাসে ব্রেক জার্নি। সময়, ধকল দুই-ই বেশি। মসৃণ সফর এ বার।
দূরত্ব মাত্র ১৮৫ কিলোমিটার। বাসের নাম খোঁজ চলছে। ভাড়ার বিষয়টা বিবেচনাধীন। যতটা সম্ভব কম করার চেষ্টা। সপ্তাহে ক’দিন যাবে আসবে ঠিক হবে দু’দেশের প্রোটোকল চুক্তির পর। রোজ চালালেও যাত্রীর অভাব হবে না। ঢাকা-কলকাতার ভাড়া ৭০০ টাকা। ১৯৯৮তে সার্ভিস চালু হওয়ার সময় ছিল ৫০০। খুলনা-কলকাতার ভাড়া তার অর্ধেকের কম হওয়ার কথা। কলকাতা-ঢাকা-আগরতলা বাস চালু ছ’মাস আগেই। ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলা কার্যত কলকাতার থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। ট্রেনে লাগত ৪০ ঘন্টা। এখন বাসে ১৫ ঘন্টা। বাংলাদেশ-ভারত যোগাযোগ আরও বাড়বে। বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান, ভারতের মধ্যে মোটরভেহিকেল চুক্তির পর চার দেশের মধ্যে পণ্য, যাত্রী পরিবহণে অতিরিক্ত নজর। সফর আর মন্থর নয়। উন্নয়নের ডানায় দুরন্ত।
আরও খবর...
বাংলাদেশের বড় ইলিশ যে দামে বিকোচ্ছে, তা ভাবতেও পারবে না কলকাতা
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy