Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

হাজার হাজার মানুষ ঘরছাড়া পদ্মার ভাঙনে

একে বর্ষা, তার ওপর চিন থেকে নেমে আসা জলের তোড়। বাংলাদেশের সব নদীর জলই বেড়েছে। এর মধ্যেই ভয়াবহ আকার নিয়েছে পদ্মার ভাঙন। বাড়িঘর হারিয়ে চার হাজারেরও বেশি পরিবার কোনওক্রমে মাথা গুঁজে রয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে।

ভাঙন: এ ভাবেই নিত্য তলিয়ে যাচ্ছে পদ্মাপাড়ের বাড়িঘর। বাংলাদেশের শরিয়তপুরে। নিজস্ব চিত্র।

ভাঙন: এ ভাবেই নিত্য তলিয়ে যাচ্ছে পদ্মাপাড়ের বাড়িঘর। বাংলাদেশের শরিয়তপুরে। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঢাকা শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৩:২১
Share: Save:

একে বর্ষা, তার ওপর চিন থেকে নেমে আসা জলের তোড়। বাংলাদেশের সব নদীর জলই বেড়েছে। এর মধ্যেই ভয়াবহ আকার নিয়েছে পদ্মার ভাঙন। বাড়িঘর হারিয়ে চার হাজারেরও বেশি পরিবার কোনওক্রমে মাথা গুঁজে রয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে।

ভাঙন শুরু হয়েছে প্রায় মাস দুয়েক আগে। কিন্তু গত সাত দিনে তা ভয়াবহ আকার নিয়েছে। শরিয়তপুর, রাজবাড়ি, গোয়ালন্দে ভাঙনের প্রভাব সব চেয়ে বেশি। হাজার হাজার একর জমি পদ্মার গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। শরিয়তপুরের একটি গোটা ইউনিয়ন এবং একটি পুরসভার গোটা ওয়ার্ড মানচিত্র থেকে সম্পূর্ণ মুছে গিয়েছে। বসত বাড়ি তো বটেই, চাষের জমি ও দোকানপাটও নদীর গর্ভে চলে যাওয়ায় হাজার হাজার মানুষ বাড়িঘরের সঙ্গে সঙ্গে জীবিকাও হারিয়েছেন। নড়িয়া উপজেলার প্রশাসনিক কর্তা সানজিদা খাতুন ইয়াসমিন জানিয়েছেন, অন্তত ২০ হাজার মানুষ ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন।

চিনে প্রবল বর্ষণের ফলে তিব্বতে উদ্ভূত নদীগুলি দিয়ে অস্বাভাবিক বেশি জল নিম্ন অববাহিকায় নামছে। এর ফলে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিস্তীর্ণ জায়গা বন্যায় ভেসেছে। সেই জল নেমে বাংলাদেশেও বন্যা পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে বলে ভারত কয়েক সপ্তাহ আগে ঢাকাকে সতর্ক করে দিয়েছিল। বস্তুত তার আগেই পদ্মায় জল বেড়ে ইতিউতি ভাঙন শুরু হয়েছিল। রাজবাড়ি ও গোয়ালন্দের বহু বাড়ি, রাস্তা ও বাজার নদীগর্ভে বিলীন হয়। মোটা চটের বস্তায় বালি ভরে সেখানে ভাঙন ঠেকানোর কাজ চলছে। এর পরে গত এক সপ্তাহ ধরে শরিয়তপুরে ভয়াবহ ভাঙন আকার নিয়েছে। গোটা কেদারপুর ইউনিয়ন কার্যত তলিয়ে গিয়েছে। হারিয়ে গিয়েছে নড়িয়া পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের প্রায় পুরোটাই। নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের গা দিয়ে এখন বইছে পদ্মা। পাশের মসজিদের একাংশ নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পরে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি যে কোনও দিন তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

রাস্তা-কালভার্ট-সেতু তো গিয়েছেই, ভেঙে ঝুলে যাওয়ায় মুলফৎবাজারের প্রায় ৮০০ দোকান ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। আশপাশের বাড়ি থেকে নিরাপদ জায়গায় সরে গিয়েছেন বহু মানুষ। চরজুজিরা গ্রামের এক বাসিন্দার অভিযোগ, জমিজমা-দোকানপাট হারিয়ে তাঁর মতো হাজার হাজার মানুষ নিঃস্ব হয়ে গিয়েছেন। অনাহারে-অর্ধাকারে কোনও ক্রমে তাঁদের দিন কাটছে। উপজেলা প্রশাসনের কেউ ত্রাণ নিয়ে এগিয়ে আসেননি।

কেদারপুর ইউনিয়নের সদস্য সানাউল্লা মিয়াঁ জানান, ইউনিয়ন পরিষদের কোনও ত্রাণ তহবিল না-থাকায় তাঁদের পক্ষে হাত গুটিয়ে থাকা ছাড়া উপায় থাকছে না। তবে জেলা প্রশাসন ত্রাণের ব্যবস্থা করছে। কিন্তু বিপন্ন মানুষ আরও ত্রাণ চান।

অন্য বিষয়গুলি:

Padma River Soil erosion
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE