প্রতীকী চিত্র
বিচিত্র এই ভারতবর্ষ। বৈচিত্রে ভরা তার রীতিনীতি, উৎসব। এমনকী একই উৎসবের আচারেও রকমফের এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে। যেমন, ভ্রাতৃদ্বিতীয়া। বাংলায় যা ভাইফোঁটা, হিন্দি বলয়ে তা-ই ভাইদুজ। এ দেশের বহু রাজ্যেই পালিত হয় ভাই-বোনের সম্পর্কের বন্ধনের এই উৎসব। ভাইয়ের মঙ্গল চেয়ে তাঁদের কপালে ফোঁটা এঁকে দেয় দিদি-বোনেরা। ভাই যেন বেঁচে থাকে দীর্ঘদিন, জীবন কাটে সুখ-সমৃদ্ধিতে– এই তার সারকথা। তা বলে ভাইফোঁটার আচারে ভাইয়ের মৃত্যুকামনা! এমনটাও হয়?
হ্যাঁ, এমনই প্রথা আছে এ দেশের কয়েকটি রাজ্যে। যেখানে ভ্রাতৃদ্বিতীয়ায় বোনেরা অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে ভাই বা দাদার মৃত্যুকামনা করে। আবার সেই অভিশাপ দেওয়ার পরে নিজেরা প্রায়শ্চিত্তও করে। পুরোটাই রীতি মেনে! এর নেপথ্যে লুকিয়ে এক লোকবিশ্বাস। ভাইফোঁটার দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে জেনে নেওয়া যাক এই অদ্ভুত রেওয়াজের কথা এবং কোন কোন রাজ্যে এই আচার পালন করা হয়।
এই অনন্য ভাইফোঁটার নিয়ম রয়েছে ভারতের ছত্তীসগঢ়, ঝাড়খণ্ড, বিহার এবং উত্তর প্রদেশের কিছু এলাকার স্থানীয় রীতিতে। বিভিন্ন তথ্য সূত্র থেকে জানা যায়, ছত্তীসগঢ়ের যশপুর জেলার একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের লোকেরা এই ঐতিহ্য অনুসরণ করে। এমনকি বিহার ও ঝাড়খণ্ডের কিছু প্রত্যন্ত অঞ্চলেও এই রীতির প্রচলন আছে। প্রথামাফিক ভাইফোঁটার দিনে বোনেরা সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরেই ভাইদের অভিশাপ দেয়। আবার জিভে কাঁটা দিয়ে এর প্রায়শ্চিত্তও করে তারা। বিশ্বাস করা হয় যে, ভাইফোঁটার দিনে এ নিয়ম মানলে যমরাজের ভয় থাকে না।
এই এলাকাগুলির মানুষের পৌরাণিক বিশ্বাস অনুসারে, এক বার যমরাজ এমন এক ব্যক্তিকে হত্যা করতে পৃথিবীতে এসেছিলেন, যার বোন কখনও তাকে অভিশাপ দেয়নি। তিনি এক জনকে খুঁজেও পান, যার বোন তাকে কখনও অভিশাপ দেয়নি। সেই ব্যক্তিকে তার বোন খুব ভালবাসত, ভাইয়ের মৃত্যু কামনা করা তো অনেক দূরের কথা। যমরাজ যে তার ভাইকে হত্যা করতে চায়, সে কথা জানতে পেরে যায় বোন। তৎক্ষণাৎ সে ভাইকে গালি দেওয়া শুরু করে এবং তাকে অভিশাপ দেয়। এতে যমরাজও আর তার জীবন কেড়ে নিতে পারেনি। সেই থেকেই নাকি এই রীতি অনুসরণ করে আসছেন এই সব অঞ্চলের মানুষরা। তাঁদের বিশ্বাস, এমনটা করলে নাকি যমের দুয়ারে সত্যি সত্যি কাঁটা দেওয়া যাবে!
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy