Advertisement

Associate Partner

Style Partner

Associate Partner

Weddings Partner

Food Partner

Kali Puja in Billopotton Village

ছাইভস্ম মুখে দিয়ে জেগে উঠল মেয়ে- বড় বেলুনের বড় মায়ের এক আশ্চর্য গাথা

সাধক মৃত্যুঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুত্র ভৃগুরাম কেতুগ্রামের শক্তিপীঠ অট্টহাস মন্দিরের সাধক ছিলেন। এক দিন তাঁর ডাকে সন্তুষ্ট হয়ে মা তাঁকে স্বপ্নাদেশ দিলেন।

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

তমোঘ্ন নস্কর
শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০২৪ ২৩:৪৫
Share: Save:

মায়ের নাম সেরে সবে একটু তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়েছেন, অমনি দেখেন মা এসে তার পাশটিতে বসেছেন। চিন্তিত, উদ্বিগ্ন! মায়ের মুখে মেঘ দেখে ডরায় ভৃগু। মাকে প্রশ্ন করে, " মা গো, অমন কালো মেঘ কেন? তুমি জগত্তারিনী, তোমার কিসের চিন্তা? "

মা বলেন, “ওরে এই বিল্লপত্তন গ্রামে অভয়া হয়ে থাকার জন্য আমি তোকে নির্দেশ দিলাম। সবই হলো। কিন্তু তোর পরে কে আমার পুজো করবে? আমি তো অভয়া, অচলা হয়েই থাকতে চাই।“

ভৃগুরাম বলেন, "কে দেবে মা আমায় তার নিজ সন্তান! একে আমার বয়স হয়েছে। তার উপর আমি সাধক মাত্র। কী-ই বা আমার সঙ্গতি..."

মা নির্দেশ দেন,

"অমাবস্যায় ব্রাহ্মণ ঘরের কুমারী এক মেয়ে,

সর্পাঘাত করিবে, আসিবে তারে হেথায় নিয়ে।

শক্তিপীঠে আনবে যখন, অবাক হবি না দেখে,

এক মুষ্টি চিতাভস্ম দিবি তার মুখে।"

এমন অদ্ভুত স্বপ্ন দেখে ধড়মড়িয়ে উঠে বসেন ভৃগুরাম। মা এ কী নির্দেশ দিলেন! কিন্তু মায়ের কথা যে অমান্য করা যায় না! কেউই মায়ের কথা কিন্তু অমান্য করে না। দেখবেন রাগ, অভিমান করে ঠিকই, কিন্তু মেনেও নেয় ঠিক। তিনিও অন্যথা করলেন না।

অমাবস্যায় শ্মশানে একটি মেয়ের মৃতদেহ এল। আত্মীয়-পরিজনের কান্না শুনে ভৃগুরাম পর্ণকুটির থেকে বাইরে এলেন। সর্বনাশ! এ তো স্বয়ং বিল্লপত্তনের জমিদারের গুরুদেবের কন্যা। "মা রে, তুই তবে সকল ব্যবস্থা ভেবেই করিস!" মনে মনে কপালে হাতটা ঠেকালেন ভৃগুরাম...

অসহায় শোকসন্তপ্ত পিতা সাধককে দেখেই তাঁর কাছে এসে কেঁদে পড়লেন- “তুমি এখানে মায়ের মূর্তি গড়ে পূজা করো। শুনেছি তুমি মহাসাধক, আমার সন্তানকে বাঁচিয়ে দাও ঠাকুর!“ ভৃগুরাম কোনও কথা বললেন না। একটি ঠান্ডা, নিভে যাওয়া চিতা থেকে ছাইভস্ম তুলে নিয়ে মেয়েটির মুখে দিলেন। ভীষণ ‘জয় মা’ ধ্বনিতে মুখরিত করলেন চতুর্দিক। আর অমনি মেয়েটি চোখ মেলে তাকাল। ভৃগুরাম স্বপ্নে দেখা সকল কথা ব্যক্ত করলেন। ধুমধাম করে বিয়ে হয়ে গেল দু’জনের। সেই ঘটনা, সেই ইতিহাস চিরস্থায়ী হয়ে রইল লোকমুখে এবং স্বর্ণাক্ষরে।

সাধকের মা ছাড়া অন্য চিন্তা নেই। ঐহিক কিছু ক্ষুধা মিটে গেলে, বাকি সবটুকুই সে মাতৃ নামে সঁপে দেয়। সাধক ভৃগুরাম বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাহিনি খানিকটা তেমনই।

এ কথা সত্যি, সেনযুগে শক্তিসাধনা ভীষণ ভাবে আলো পায়। সাধক মৃত্যুঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুত্র ভৃগুরাম কেতুগ্রামের শক্তিপীঠ অট্টহাস মন্দিরের সাধক ছিলেন। এক দিন তাঁর ডাকে সন্তুষ্ট হয়ে মা তাঁকে স্বপ্নাদেশ দিলেন।

"কেতুগ্রামে বহুলাপীঠে শক্তি সাধনায়।

ভৃগুরাম যোগাসনে ডাকতেন মহামায়ায়।।

স্বপ্নাদেশ দিলেন মাতা পুত্র ভৃগুরামে।

‌ গমন করো বিল্লপত্তন মহাশ্মশান ধামে।।"

বিল্লপত্তনের যে গ্রামটিতে ভৃগুরাম এসেছিলেন, সে গ্রাম তন্ত্রসাধনার আদর্শ। খড়ি নদীর খাতের পাশে কাছিমের পিঠের মতো উঁচু শ্মশান। চতুর্দিকে বেলগাছ। এখানেই মায়ের মূর্তি গড়ে, পঞ্চমুণ্ডির আসনে সাধনা করেন ভৃগুরাম। কথিত, তিনি রোজ স্নানের আগে মায়ের মূর্তি গড়তেন আর স্নান সেরে এসে সেই মূর্তিরই পুজো করতেন।

এক দিন স্নান সেরে আসছেন ভৃগুরাম। দূর থেকে দেখলেন, তাঁর পর্ণকুটির ভেদ করে দাঁড়িয়ে ভীষণ এক কালীমূর্তি দন্ডায়মানা। তার কালো চুল আকাশ ছুঁয়েছে। থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে মায়ের সম্মুখে বসে পড়লেন ভৃগুরাম। মা আশ্বাস দিলেন, “আজ থেকে এই মূর্তিতেই আমার পূজা হবে। পঞ্চমুণ্ডির আসনে আমাকে স্থাপন করো।“

সেই শুরু। তার পর থেকে আজ পর্যন্ত মা পুজো পেয়ে আসছেন। মনে করা হয়, বিল্লপত্তন থেকেই অপভ্রংশ বেলপত্তন বা বেলুন। আনুমানিক এগারো শতকে পুজো শুরু। ১২৮ বছরের আয়ুষ্কাল শেষ করে দেহ রাখেন শ্রীভৃগুরাম। তারপর থেকেই পূজার দায়িত্ব নেন তাঁর বড় পুত্র শিবচন্দ্র তোর ন্যায়লঙ্কার। ভৃগুরামের বংশ মায়ের আশীর্বাদপ্রাপ্ত। বিদ্যা ও শিক্ষার সর্বোচ্চ স্তরে তাঁরা পৌঁছেছিলেন। বর্ধমান রাজার সভাপণ্ডিত থেকে শুরু করে নবদ্বীপের সর্বোচ্চ তর্কালঙ্কার- সবই তাঁদের বংশে রয়েছে। বর্তমানে সেই বংশের উত্তরসূরীরা ভট্টাচার্য। হয়তো পিতা বা মাতা বংশের ভেদে এমনটা।

১৯৮৪ সালে গড়ে উঠেছে নতুন মন্দির। কিন্তু ভৃগুরামের নিয়ম মেনে সেখানে আজও পুজোর সকালে খড়ি রং হয়। তার পরে মসিবর্ণ এবং মায়ের চক্ষুদান সমাধা করে পুজোর সূচনা হয়। ভট্টাচার্যরাই প্রথমে মায়ের আরাধনা করেন। তার পরে শুরু হয় পূজা।

মা নিজেই নাকি বলে গিয়েছিলেন, “বিল্বপত্তনে আমি বুড়িমা, পক্ষান্তরে বড়মা নামের সেবিতা হব।“ আজও তাই মা এখানে বড় বেলুনের বড়মা। মায়ের পুজো ভাতার, কাটোয়া অঞ্চলের বার্ষিক উৎসব। মায়ের আঁচল ধরার উৎসব।

এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

অন্য বিষয়গুলি:

Ananda Utsav 2024 Kali Puja 2024 Mythology
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE