তৃণমূল জিততেই উচ্ছ্বাস সমর্থকদের। ছবি—পিটিআই।
২৩ ডিসেম্বর দলের জয়ী কাউন্সিলরদের নিয়ে বৈঠকে বসবেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মহারাষ্ট্র নিবাসে হবে সেই বৈঠক। ওই বৈঠকেই ঠিক হবে মেয়রের নাম।
২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের পর থেকেই বাম-কংগ্রেসকে পিছনে ফেলে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল হিসাবে উঠে আসে বিজেপি। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে একটিও আসন দখল করতে পারেনি বাম-কংগ্রেস। কিন্তু কলকাতা পুরসভা ভোটে দ্বিতীয় স্থানে থাকার নিরিখে বিজেপি-কে পিছনে ফেলেছে বামেরা। ১৪৪টি আসনের মধ্যে ৬৫টি ওয়ার্ডে দ্বিতীয় হয়েছে বামেরা। বিজেপি ৫৪টি ওয়ার্ডে দ্বিতীয় হয়েছে। কংগ্রেস দ্বিতীয় হয়েছে ১৫টি ওয়ার্ডে।
কলকাতা পুরভোটের ফল প্রকাশ হতেই নিজের মত জানালেন অনুব্রত মণ্ডল। চিরাচরিত ভঙ্গিতে তিনি খোঁচা দিয়েছেন বিরোধীদের। কেষ্ট বলেছেন, ‘‘কংগ্রেস-সিপিএম জোট করেনি বলে দু’টো করে সিট পেয়েছে। জোট করলে এটাও পেত না।’’
অনুব্রত মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র।
৯২ ওয়ার্ডে জিতেছেন সিপিআই প্রার্থী মধুছন্দা দেব। ১০৩ নম্বর ওয়ার্ডে ৮৬ ভোটে জয়ী সিপিএম প্রার্থী নন্দিতা রায়।
পুরভোটে রাজ্যের নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজার মেয়ে পূজা, নগরোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের ছেলে সৌরভ, বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের মন্ত্রী জাভেদ আহমেদ খানের ছেলে ফৈয়াজ, প্রয়াত বামনেতা ক্ষিতি গোস্বামীর মেয়ে বসুন্ধরাকে প্রথম বার লড়তে দেখা গিয়েছে। তৃণমূলের তালিকায় ছিলেন এন্টালির বিধায়ক স্বর্ণকমল সাহার ছেলে সন্দীপন এবং প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র তথা প্রাক্তন বিধায়ক ইকবাল আহমেদের কন্যা সানার মতো বিদায়ী কাউন্সিলররাও।
কলকাতা পুরযুদ্ধের সবচেয়ে ‘জটিল’ লড়াইটি সম্ভবত চলছিল এক রাজনৈতিক পরিবারে। দু’টি আলাদা ওয়ার্ডে। ৭২ নম্বর এবং ৯৮ নম্বর ওয়ার্ডে। আরও বিস্তারে বললে লড়াইটা চলছিল আর এক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিবারের অন্দরমহলে। যুদ্ধের একপক্ষে শ্বশুর অন্যপক্ষে জামাতা। শ্বশুর একককালে মমতা-ঘনিষ্ঠ এবং অধুনা তৃণমূল থেকে বহিষ্কৃত সচ্চিদানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বিরোধী পক্ষ জামাতা অরূপ চক্রবর্তী-সহ গোটা তৃণমূল। যদিও শ্বশুর এবং জামাতা লড়েছেন দু’টি ভিন্ন ওয়ার্ডে। শ্বশুর সচ্চিদানন্দ ৭২ নম্বর ওয়ার্ডে। জামাতা অরূপ ৯৮ নম্বরে।
২০২১ সালের পুরনির্বাচনে ছয় বিধায়ককে টিকিট দিয়েছিল তৃণমূল। টিকিট পেয়েছিলেন সাংসদ মালা রায়ও। ২১ ডিসেম্বর ফলপ্রকাশ হতেই দেখা গেল এই সাত জনই জিতেছেন। পুরভোটে জয়ী তৃণমূলের বিধায়করা হলেন কলকাতা বন্দরের বিধায়ক ফিরহাদ হাকিম। রাসবিহারীর বিধায়ক দেবাশিস কুমার। যাদবপুরের বিধায়ক দেবব্রত মজুমদার। কাশীপুর-বেলগাছিয়ার বিধায়ক অতীন ঘোষ। বেলেঘাটার বিধায়ক পরেশ পাল। বেহালা পূর্বের বিধায়র রত্না চট্টোপাধ্যায়। দক্ষিণ কলকাতার সাংসদ মালা রায় জিতেছেন ৮৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকেই।
জয়ের পর কাজরাী। নিজস্ব চিত্র।
৭৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জয়ের পর কাজরী বলেছেন, ‘‘সকাল থেকে দিদির কাছেই ছিলাম। দিদি বলেছে খুব ভাল হয়েছে জিতেছ। এ বার ভাল করে কাজ করতে হবে। সবার সঙ্গে কথা বলে কাজ করবে।’’
বিধানসভার পর পুরভোট। কয়েক মাসের ব্যবধানে দু’টি নির্বাচনে জয় পেলেন শোভন-জায়া রত্না চট্টোপাধ্যায়। ১৩১ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জিতেই তিনি খোঁচা দিলেন শোভন চট্টোপাধ্য়ায়কে। তিনি বলেছেন, ‘‘শোভন চট্টোপাধ্যায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় আমার মেয়েকে বলেছিলেন, আমি নিজের ক্ষমতায় কিছুই করতে পারব না। আজ আমি দেখিয়ে দিলাম। আমি নিজের ক্ষমতায় স্ট্যান্ড করেছি।’’ প্রসঙ্গত ১৩১ নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলর ছিলেন শোভনই।
কলকাতা পুরভোটে বিপুল জয়ের পর টুইট করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি লিখেছেন, ‘কলকাতা পুরভোটে জয়ী প্রার্থীদের অভিনন্দন। পরিশ্রম এবং কৃতজ্ঞতার সঙ্গে মানুষের সেবা করার কথা মনে রাখবেন। পুর এলাকার প্রত্যেক বাসিন্দাকে হৃদয় থেকে ধন্যবাদ জানায় আমাদের উপর আরও এক বার বিশ্বাস রাখার জন্য।’
কলকাতা পুরভোটে তৃণমূল বিপুল জয় পেতেই টুইট করলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি টুইটে লিখেছেন, ‘কলকাতার মানুষ আবার প্রমাণ করলেন, ঘৃণা এবং হিংসার রাজনীতির স্থান নেই বাংলায়। বিপুল রায়ের মাধ্যমে আমাদের আশীর্বাদ করার জন্য সকলকে ধন্যবাদ। আপনাদের ভালর জন্য সর্বদা নিয়োজিত থাকব। ধন্যবাদ কলকাতা।’
৮২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জিতেছেন ফিরহাদ হাকিম। তার পর তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন। তখন তিনি জানিয়েছেন, আগামী দিনে দূষণ কমানো কলকাতা পুরসভার অন্যতম লক্ষ্য হবে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র।
পুরভোটে তৃণমূলকে জেতানোর জন্য সাধারণ মানুষকে অভিনন্দন জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কালীঘাটে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেছেন, ‘‘আমাদের সমর্থন করার জন্য মা-মাটি-মানুষকে ধন্যবাদ। মানুষ যত আমাদের সমর্থন করবেন, তত আমাদের মাথা নত হবে।’’