সাতে-সাত পেয়ে ববি বুঝিয়ে দিলেন, বন্দর নামক ‘দুর্গ’টি অক্ষত রয়েছে তৃণমূলের। গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
৮২ নম্বর ওয়ার্ড তৃণমূলের। ৮২ নম্বর ওয়ার্ড কলকাতার বিদায়ী মেয়র ফিরহাদ হাকিমের। ফের ওয়ার্ডের মানুষেরা ডাকনামে খ্যাত ‘ববি’র উপর ভরসা রেখেছেন।
জয়ের পর ফিরহাদ (ববি) বলেছেন, ‘‘এই জয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জয়। মানুষ মমতা’দির উন্নয়নের উপর ভরসা রেখেছেন। এই জয় মানুষের বিশ্বাসের জয়।’’
কিন্তু এই পুরভোটে ববি আদৌ প্রার্থী হতে পারবেন কি না, তা নিয়েই একটা সময় পর্যন্ত অনিশ্চয়তা ছিল। মনে করা হয়েছিল, পুরভোটের প্রার্থিতালিকায় ‘এক ব্যক্তি, এক পদ’ নীতি মানতে পারে তৃণমূল। কিন্তু একেবারে শেষ মুহূর্তে দেখা যায়, কলকাতার ছয় বিধায়ক এবং এক সাংসদকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। জানা যায়, দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সক্রিয় হস্তক্ষেপেই ওই বিধায়ক-সাংসদদের ফের প্রার্থী করা হয়। পুরভোটে লড়ার টিকিট পান ববিরা।
কলকাতার ১৪৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে যেগুলিতে জয় নিয়ে তৃণমূলের কোনও দ্বিধা ছিল না, তার মধ্যে অবশ্যই ছিল ৮২ নম্বর। শুধু এই ওয়ার্ড কেন, বন্দর বিধানসভা এলাকার সাতটি ওয়ার্ডে জয়ের জন্যই তৃণমূল তাকিয়ে ছিল বিধায়ক ফিরহাদের দিকে। সাতে-সাত পেয়ে ববি বুঝিয়ে দিলেন, বন্দর নামক ‘দুর্গ’টি অক্ষত রয়েছে তৃণমূলের।
গত বিধানসভা নির্বাচনে ৬৮,৫৫৪ ভোটে জিতেছিলেন ববি। কিন্তু ২০১৫ সালের একটি কাঁটা রয়ে গিয়েছিল। সে বার ৭৬, ৭৮, ৭৯, ৮০, ১৩৩, ১৩৪ এবং ১৩৫ নম্বর ওয়ার্ডে জয় পেলেও ৭৫ নম্বর ওয়ার্ডটি দখল করেছিল সিপিএম। এ বার সেই কন্টকমুক্ত হল তৃণমূল।
৭৫-এর লড়াই অবশ্য একেবারে সহজ ছিল না। সিপিএম প্রার্থী ছিলেন দলের কলকাতা জেলা কমিটির নেতা ফৈয়াজ আহমেদ খান। যিনি ২০০০ এবং ২০০৫ সালে ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন। শেষ দফায় মেয়র পারিষদও ছিলেন। তখন কলকাতার মেয়র বিকাশ ভট্টাচার্য। ২০১০ এবং ২০১৫ সালে ওই ওয়ার্ডটি মহিলা সংরক্ষিত হয়ে যাওয়ায় সিপিএম প্রার্থী করেছিল বিলকিস বেগমকে। ২০১৫ সালে ৭৬ নম্বর ওয়ার্ডে লড়ে হেরেছিলেন ফৈয়াজ। তবে এ বার সিপিএম খুব সুখে ছিল না। শেষ দশ বছরের কাউন্সিলর বিলকিস প্রার্থী হতে না পারায় তৃণমূলে যোগ দেন। তাতেও ছিল ববির ‘হাতযশ’।
কলকাতার মেয়র হলেও গত পুরভোট প্রার্থী ছিলেন না ফিরহাদ। তখন তিনি বিধায়ক এবং মন্ত্রী। ২০১৮ সালের নভেম্বরে শোভন চট্টোপাধ্যায় মেয়র পদ ছেড়ে দিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা দায়িত্ব দেন ফিরহাদকে। তার জন্য কলকাতা পুরসভা আইনেও বদল আনে শাসক তৃণমূল। এর আগে কোনও কাউন্সিলর ছাড়া কেউ মেয়র হতে পারতেন না। কিন্তু ফিরহাদকে ওই মেয়রের পদ দিতেই আইন বদলায়। এখন মেয়র হওয়ার পরে ছ’মাসের মধ্যে কেউ কলকাতার যে কোনও ওয়ার্ড থেকে জিতে আসতে পারেন। ঠিক যে ভাবে ৮২ থেকে জিতেছিলেন ফিরহাদ। আবার জিতলেন। দায়িত্বে থাকা ওয়ার্ডগুলিতে দলকে জেতালেনও। কিন্তু মেয়র পদের জন্য কতটা এগিয়ে রইলেন? সে প্রশ্নের উত্তর পেতে আরও কয়েকটা দিন অপেক্ষা করতে হবে। কারণ, এই নির্বাচনে ফিরহাদকে ‘মেয়র পদপ্রার্থী’ বলে অগ্রিম ঘোষণা করেনি তৃণমূল।