Kolkata Municipal Election 2021

KMC poll 2021: জিতলেন তৃণমূল প্রার্থী জামাতা, হারলেন নির্দল শ্বশুর, জটিল পুরযুদ্ধে ফয়সালা কলকাতার

পুরভোটের সবচেয়ে জটিল লড়াইটা চলছিল আর এক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিবারের অন্দরমহলে। সেই যুদ্ধের একপক্ষে শ্বশুর অন্যপক্ষে জামাতা।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০২১ ১৩:১১
Share:

জামাই এবং শ্বশুর: অরূপ চক্রবর্তী এবং সচ্চিদানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

কলকাতা পুরযুদ্ধের সবচেয়ে ‘জটিল’ লড়াইটি সম্ভবত চলছিল এক রাজনৈতিক পরিবারে। দু’টি আলাদা ওয়ার্ড— ৭২ নম্বর এবং ৯৮ নম্বর ওয়ার্ডে। আরও বিস্তারে বললে লড়াইটা চলছিল আর এক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিবারের অন্দরমহলে। যুদ্ধের একপক্ষে শ্বশুর অন্যপক্ষে জামাতা। শ্বশুর একককালে মমতা-ঘনিষ্ঠ এবং অধুনা তৃণমূল থেকে বহিষ্কৃত সচ্চিদানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বিরোধী পক্ষ জামাতা অরূপ চক্রবর্তী-সহ গোটা তৃণমূল। যদিও শ্বশুর এবং জামাতা লড়েছেন দু’টি ভিন্ন ওয়ার্ডে। শ্বশুর সচ্চিদানন্দ ৭২ নম্বর ওয়ার্ডে। জামাতা অরূপ ৯৮ নম্বরে।

ফলাফল ঘোষণার পর দেখা গেল, ১,৬০০ ভোটে হেরে গিয়েছেন শ্বশুরমশাই। তাঁর এই হার যে একেবারে অপ্রত্যাশিত ছিল, তা নয়। প্রবীণ রাজনীতিক সচ্চিদানন্দ নিজেও সম্ভবত ভাবেননি তিনি জিতে যাবেন। পক্ষান্তরে, তাঁর জামাতা অরূপ জিতেছেন। গণনার প্রথম পর্যায়ে অরূপ খানিকটা পিছিয়ে গিয়েছিলেন ওই ওয়ার্ডের বাম প্রার্থীর বিরুদ্ধে। কিন্তু রাউন্ড বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গেই তিনি এগিয়ে যেতে থাকেন। গণনার শেষে দেখা যায়, জিতে গিয়েছেন তৃণমূলের প্রার্থী অরূপ। তাঁর জয়ের ব্যবধান মাত্রই ২৭৯ ভোট। তবে ওই ওয়ার্ডটি গত সাড়ে তিন দশক ধরে বামফ্রন্টের দখলে ছিল। সেদিক দিয়ে দেখতে গেলে কম ব্অযাবধানে হলেও রূপের জয় ‘তাৎপর্যপূর্ণ’। অন্যদিকে সচ্চিদানন্দ হারলেও দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন।

Advertisement

৭২ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর সচ্চিদানন্দ ওরফে তৃণমূলের ‘মনুয়াদা’ এক সময়ে কলকাতা পুরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন। ছিলেন দক্ষিণ কলকাতার জেলা তৃণমূল সভাপতিও। কিন্তু দলের ‘দুঃসময়ে’ বিরোধীদের উত্থানের দায় নিজের কাঁধে নিয়ে জেলা তৃণমূল সভাপতির পদ ছাড়েন তিনি। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে সে বার মমতার কেন্দ্রে বিজেপি-র ভোট বেড়েছিল।

কিন্তু ২০২১ সালে দলের পরিস্থিতি বদলায়। বিধানসভা ভোটে ২১৩টি আসনে জিতে ক্ষমতায় আসে তৃণমূল। সচ্চিদানন্দ আশা করেছিলেন, ‘সুদিনে’ দল তাঁকে ফেরাবে। কাউন্সিলরের টিকিটও দেবে। কিন্তু তা হয়নি। তৃণমূলের প্রার্থী তালিকায় ৭২ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয় তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর ভাই সন্দীপ রঞ্জন বক্সীর নাম। অন্যদিকে, সচ্চিদানন্দের জামাতা অরূপ আগের বারের মতো এ বারও তৃণমূলের কাউন্সিলর হিসেবে টিকিট পান। ১০১ নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলর অরূপকে ৯৮ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী ঘোষণা করে তৃণমূল। ‘ক্ষুব্ধ’ সচ্চিদানন্দ এর পরেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, নিজের ওয়ার্ডে নির্দল হয়ে লড়বেন।

Advertisement

তৃণমূল অবশ্য সচ্চিদানন্দের সঙ্গে কথা বলে সমঝোতায় আসতে চেয়েছিল। দলের পক্ষ থেকে প্রাক্তন মেয়র ফিরহাদ হাকিম, মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, বিধায়ক মদন মিত্র এবং জেলা তৃণমূলের সভাপতি দেবাশিস কুমার কথা বলেছিলেন সচ্চিদানন্দের সঙ্গে। এমনকি, ছোট জামাই অরূপকেও পাঠানো হয়েছিল শ্বশুরমশায় সচ্চিদানন্দের সঙ্গে কথা বলে প্রার্থিপদ প্রত্যাহারের অনুরোধ জানাতে। কিন্তু প্রবীণ রাজনীতিক রাজি হননি। বলেছিলেন, তাঁর লড়াইটা নীতির। ফলে তিনি তাঁর অবস্থান থেকে নড়বেন না। বস্তুত, সচ্চিদানন্দের ক্ষোভের কথা জেনে তাঁর দিকে হাত বাড়িয়েছিল বিজেপি-ও। তারা প্রস্তাব দিয়েছিলে, ‘মেয়রের মুখ’ হিসেবে তাঁকে তুলে ধরে কলকাতার পুরভোটে লড়বে পদ্মশিবির। কিন্তু তাতেও রাজি হননি সচ্চিদানন্দ। বলেছিলেন সেই একই কথা— তাঁর লড়াইটা নীতির।

দলের নির্দেশ না মানায় অবশেষে তৃণমূল থেকে বহিষ্কার করা হয় সচ্চিদানন্দকে। পরিবারের মধ্যেও বাড়ে উদ্বেগ। যদিও সচ্চিদানন্দ বরাবর বলে এসেছেন, তাঁর রাজনৈতিক জীবন ব্যক্তিগত জীবনকে কোনও ভাবেই প্রভাবিত করবে না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement