কলকাতা পুরভোটে সিপিএম এবং সিপিআই একটি করে আসনে জিতেছে।
২০০০ সালে কলকাতা পুরসভা তৃণমূল দখল করে নিলেও পাঁচ বছর পরে ২০০৫-এ ফের তা ছিনিয়ে নিয়েছিল বামেরা। মেয়র হয়েছিলেন সিপিএমের বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। কিন্তু সেই বামফ্রন্ট আর নেই। সেই সিপিএমও নেই। তবে আছে। লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যে খাতা খুলতে না পারা সিপিএম তথা বামেরা দেখিয়ে দিল তারা রয়েছে কলকাতায়। বিরোধী হিসেবে আসন সংখ্যায় না হলেও বিজেপি বা কংগ্রেসের থেকে প্রাপ্ত ভোটে এগিয়ে বামেরা। গত পুরভোটেও কলকাতায় ১৫ ওয়ার্ডে জেতা বামেদের এ বার ফল ঘোষণার আগে কোনও আসনই দেয়নি কোনও সমীক্ষা। রাজনৈতিক মহলের কাছেও ব্রাত্যই ছিলেন কমরেডরা। কিন্তু দিনের শেষে অন্য কথা বলল কলকাতা।
কলকাতা পুরভোটে সিপিএম এবং সিপিআই একটি করে আসনে জিতেছে। তবে সব ক’টিতে অর্থাৎ ১৪৪টিতেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেনি বামেরা। ১২৮ আসনে প্রার্থী দিয়ে দুই ওয়ার্ডে জয়ী আর ৬৫ ওয়ার্ডে দ্বিতীয় স্থানে। সেখানে বিজেপি ১৪২ আসনে লড়াই করে জিতেছে তিনটিতে আর দ্বিতীয় হয়েছে ৫৪টি ওয়ার্ডে। প্রসঙ্গত, বিজেপি ১৪৪টি আসনে প্রার্থী দিলেও পরে দু’জন মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন।
সাম্প্রতিক কালের নিরিখে বামেদের ফল এই কারণেও অনেকটাই ভাল যে, প্রাপ্ত ভোটে বিজেপি-কে টপকে যেতে পেরেছে। শেষ পাওয়া হিসাবে বিজেপি-র প্রাপ্ত ভোট যেখানে ৯ শতাংশের নীচে সেখানে সিপিএম একাই ৯ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছে। বামেদের মোট প্রাপ্ত ভোটের হিসেব পাওয়া গেলে তা মোট ভোটের ১১ শতাংশের উপরে যাবে বলেই প্রাথমিক পরিসংখ্যানে ইঙ্গিত মিলেছে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, রাজ্যে সিপিএমের ভোটপ্রাপ্তির পারদ নিম্নগামী হতে শুরু করে ২০০৬ সাল থেকেই। সে বার প্রাপ্তি ছিল ৩৭.৯৩ শতাংশ ভোট। আর সেটা ২০১১ সালে কমে হয় ৩০.০৮ শতাংশ। এর পরে ২০১৪ ও ২০১৬ সালে কমে হয় যথাক্রমে ২২.৯৬ ও ১৯.৭৫ শতাংশ। এর পরে এক অঙ্কের সংখ্যায় নেমে যায়। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে ভোট প্রাপ্তি ছিল ৬.৩৪ শতাংশ। গত বিধানসভা নির্বাচনে সেই হার আরও কমে হয় ৪.৭০ শতাংশ।
তবে কলকাতায় এতটা খারাপ অবস্থা হয়নি বামেদের। গত বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যে কোনও আসন না পেলেও মহানগরে ১০.১৬ ভোট পেয়েছিল বামেরা। এ বার সেই ভোট ১১ শতাংশের উপরে যাওয়ার অর্থ আট মাসের ব্যবধানে কলকাতায় বামেদের ভোট বেড়েছে কম-বেশি ১১ শতাংশ। সব মিলিয়ে মঙ্গলবারের ফল প্রকাশের পরে স্বস্তির শ্বাস ফেলতে না পারলেও কলকাতায় ঘুরে দাঁড়া আশা জাগতেই পারে আলিমুদ্দিনের।