বাঁ দিক থেকে, নরেন্দ্র মোদী এবং জি কিসান রেড্ডি। — ফাইল চিত্র।
লোকসভা ভোটের আগে জম্মু ও কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বাতিল প্রসঙ্গে কংগ্রেসকে খোলা চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সপ্তাহ দুয়েক আগে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘‘কংগ্রেস-সহ বিরোধীদের ক্ষমতা থাকলে ৩৭০ ধারা ফিরিয়ে আনার কথা বলুক।’’ কিন্তু তাঁরই মন্ত্রিসভার সদস্য জি কিসান রেড্ডি সরাসরি জানিয়ে দিলেন, কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জোট কেন্দ্রে ক্ষমতা দখল করলেই ৩৭০ ধারা ফিরিয়ে আনবে।
সংবাদমাধ্যম ‘দ্য প্রিন্ট’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তেলঙ্গানার বিজেপি নেতা তথা কেন্দ্রীয় পর্যটনমন্ত্রী কিসান বলেন, ‘‘কংগ্রেস যদি কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসে, তবে তারা ৩৭০ ধারা এবং তিন তালাক ফিরিয়ে আনবে। মুসলিমদের জন্য সংরক্ষণও চালু করবে। ইতিমধ্যেই কর্নাটকের কংগ্রেস সরকার মুসলিমদের সংরক্ষণ বাড়িয়েছে। কংগ্রেসের লক্ষ্য মুসলিম তোষণ। আমাদের নেতৃত্ব অবশ্য সেই কৌশলের মোকাবিলায় সক্ষম।’’ প্রসঙ্গত, সেকেন্দ্রাবাদের বিদায়ী সাংসদ কিসান এ বারও ওই আসনে বিজেপি প্রার্থী। সোমবারই সেখানে ভোটগ্রহণ হয়েছে।
ভারতীয় সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৭০ অনুসারে জম্মু ও কাশ্মীর যে বিশেষ মর্যাদা পেত, ২০১৯ সালের ৫ অগস্ট তার বিলোপ ঘটায় কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। পাশাপাশি, জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যকে ভেঙে দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল— জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখে পরিণত করা হয়। যা নিয়ে কাশ্মীর উপত্যকার দুই প্রধান দল, ন্যাশনাল কনফারেন্স এবং পিডিপির পাশাপাশি কংগ্রেস, তৃণমূল, বামেরাও আপত্তি তুলেছিল।
অনুচ্ছেদ ৩৭০ রদের পর চলতি বছর মার্চ মাসে প্রথম শ্রীনগরে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদী কাশ্মীর উপত্যকার জনগণকে ভুল বোঝানোর অভিযোগ তুলেছিলেন কংগ্রেস-সহ বিরোধীদের বিরুদ্ধে। এর পরে সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে বিরোধীদের উদ্দেশে চ্যালেঞ্চ ছুড়ে মোদী বলেন, ‘‘কংগ্রেসের ক্ষমতা থাকলে তারা সাংবাদিক বৈঠক করে বলুক, কেন্দ্রে ক্ষমতা দখল করলে জম্মু ও কাশ্মীরে ৩৭০ ফিরিয়ে আনবে।’’
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে অন্ধ্রপ্রদেশে বিজেপির জোটসঙ্গী তেলুগু দেশম পার্টি (টিডিপি)-র প্রধান এন চন্দ্রবাবু নায়ডু ঘোষণা করেছেন, সে রাজ্যে ক্ষমতায় এলে (লোকসভা ভোটের সঙ্গেই অন্ধ্রে বিধানসভা ভোটও হচ্ছে) মুসলিমদের জন্য চার শতাংশ সংরক্ষণ করবেন তিনি। কিন্তু সহযোগী দলের নেতার ওই প্রতিশ্রুতি প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করেননি মোদী বা বিজেপির অন্য কোনও নেতা।
বিরোধীদের অভিযোগ, গত ১৯ এপ্রিল প্রথম দফার ভোটের পরে পরিস্থিতি প্রতিকূল বুঝেই মোদী-সহ বিজেপি নেতারা ক্রমশ মেরুকরণের তাস খেলছেন। গত ২১ এপ্রিল মোদী রাজস্থানের বাঁশওয়াড়ায় বিজেপির সভায় বলেন, ‘‘প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ অতীতে বলেছিলেন, দেশের সম্পদে সর্বাগ্রে অধিকার মুসলিমদের। সেই কারণেই সমীক্ষা করার পরিকল্পনা নিয়েছে কংগ্রেস। যাতে দেশবাসীর কষ্টার্জিত অর্থ মুসলিম ও অনুপ্রবেশকারীদের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়া যায়।’’ বিজেপি সভাপতি জেপি নড্ডা অভিযোগ করেন, কংগ্রস ক্ষমতায় ফিরলে তফসিলি জাতি-জনজাতির কোটা ছেঁটে মুসলিমদের জন্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা করবে।
এর পরে ২২ এপ্রিল উত্তরপ্রদেশের আলিগড়ে তিনি বলেন, ‘‘কংগ্রেসের নজর আপনার সম্পত্তির উপরে রয়েছে। ক্ষমতায় এলে এরা মা-বোনেদের মঙ্গলসূত্র ছিনিয়ে নেবে। কাদের বিলিয়ে দেবে, তা আপনারা জানেন।’’ গত ৩০ এপ্রিল তেলঙ্গানা এবং মহারাষ্ট্রের প্রচারে মোদী অভিযোগ করেন, কেন্দ্রে ক্ষমতা দখল করলে কংগ্রেস তফসিলি জাতি ও জনজাতি এবং ওবিসিদের সংরক্ষণ কেড়ে নিয়ে মুসলিমদের দিয়ে দেবে। তেলঙ্গানার জাহিরাবাদে তিনি বলেন, “যত দিন আমি বেঁচে আছি, দলিত জনজাতিদের সংরক্ষণকে ধর্মের ভিত্তিতে মুসলিমদের হাতে তুলে দেব না, দেব না, দেব না! কংগ্রেস এবং তাদের যত সহযোগী রয়েছ, তারা কান খুলে এটা শুনে নাও।”
যদিও মনমোহন প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন বলেছিলেন, ‘‘দেশের সম্পদে অগ্রাধিকার পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীগুলির।’’ লোকসভা ভোটের প্রচারে রামমন্দির নিয়েও ইতিমধ্যেই বিরোধীদের উদ্দেশে তোপ দেগেছেন মোদী। গত সপ্তাহে মধ্যপ্রদেশের ধার লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপির সভায় মোদী, ‘‘কংগ্রেসের লক্ষ্য হল, বাবরি মসজিদের খোলা তালা এনে রামমন্দিরে ঝুলিয়ে দেওয়া। কংগ্রেস যাতে বাবরি মসজিদের তালা এনে রামমন্দিরে ঝোলাতে না পারে, তা নিশ্চিত করতেই বিজেপিকে ৪০০ আসনে জেতাতে হবে।’’