গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
লোকসভা ভোটের প্রচারে এ বার ২৬/১১ সন্ত্রাসের প্রসঙ্গ তুলে কংগ্রেসকে নিশানা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আর যুক্তি হিসাবে তুলে ধরলেন রবিবার মহারাষ্ট্রের বিরোধী দলনেতা, কংগ্রেসের বিজয় নামদেবরাও ওয়াদেত্তিয়ারের সাম্প্রতিক মন্তব্যকে।
মঙ্গলবার মহারাষ্ট্রে আহমদনগরে বিজেপির সভায় মোদী বলেন, ‘‘কংগ্রেস এখন আজমল কসাভের সঙ্গী,’’ ২০০৮ সালের নভেম্বরে মুম্বইয়ে পাক জঙ্গিগোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈবার সদস্য কসাভ এবং তার সঙ্গীদের হামলায় নিহত হয়েছিলেন মুম্বই পুলিশের সন্ত্রাসদমন শাখার (অ্যান্টি টেররিস্ট স্কোয়াড বা এটিএস) তৎকালীন প্রধান হেমন্ত করকরে। কিন্তু কংগ্রেস নেতা বিজয় সম্প্রতি মুম্বইয়ে একটি সভায় বলেছিলেন, ‘‘২৬/১১ হামলায় যুক্ত পাক সন্ত্রাসবাদী কসাভ নয়, করকরেকে হত্যা করেছেন রাষ্ট্রায় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (আরএসএস)-এর সঙ্গে যুক্ত এক পুলিশকর্মী।’’
ভোটের আগে বিজয়ের মন্তব্যকে হাতিয়ার করে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছে বিজেপি। মঙ্গলবার সেই ‘স্রোতে’ শামিল হয়েছেন মোদীও। সরাসরি পাক জঙ্গিদের সঙ্গে কংগ্রেসের সংস্রবের ইঙ্গিত করে আহমদনগরের ওই সভায় তিনি বলেন, ‘‘সাবধান, কংগ্রেসের ‘বি-টিম’ কিন্তু এখনও সীমান্তে সক্রিয়।’’ মোদীর বক্তব্যের জবাবে প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ প্রজ্ঞা সিংহ ঠাকুরের একটি মন্তব্য নিয়ে মঙ্গলবার প্রশ্ন তুলেছে কংগ্রেস। প্রশ্ন তুলেছে, ওই মন্তব্যের পরেও কেন প্রজ্ঞার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি পদ্মশিবির।
২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের আগে ভোপাল কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী সাধ্বী প্রজ্ঞা সিংহ ঠাকুর দলীয় কর্মীদের একটি সভায় বলেছিলেন, ‘‘আমার অভিশাপেই মরতে হয়েছে করকরেকে। আমি ওই পুলিশ অফিসারকে শাপ দেওয়ার এক মাসের মধ্যে তার শ্রাদ্ধে বসতে হয়েছিল পরিবারকে!’’ প্রসঙ্গত, ২০০৬ সালের মালেগাঁও বিস্ফোরণ মামলায় অভিযুক্ত প্রজ্ঞাকে গ্রেফতার করেছিলেন করকরে। সন্ত্রাসের মামলায় জামিনে মুক্তি পাওয়ার পরে ভোপালে বিজেপি তাঁকে প্রার্থী করেছিল।
সেখানে বিজেপি কর্মিসভায় প্রজ্ঞা বলেছিলেন, ‘‘করকরে আমাকে জেরা করত। বার বার জিজ্ঞেস করত, কে এই সব হামলা চালিয়েছে? আমি বলতাম— আমি কী জানি, ভগবান জানেন। সব কিছু তিনিই করান। করকরে জবাবে বলেছিল, ‘তা হলে প্রশ্নের জবাব জানতে আমাকে ভগবানের কাছে যেতে হবে নাকি’? আমি বলেছিলাম, ‘তাই যাবে। তুমি ভগবানের কাছেই যাবে। তুমি মরবে, ধ্বংস হয়ে যাবে’। আমাকে কম হেনস্থা করেছে ও!’’
এর পরেই করকরেকে ‘দেশদ্রোহী এবং ধর্মবিরোধী’ বলে চিহ্নিত করে বিজেপির সাধ্বী দাবি করেন, তিনি এই ‘অভিসম্পাত’ দেওয়ার এক মাসের মধ্যেই গুলিবিদ্ধ হন করকরে। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে ভোপাল থেকে জিতে সাংসদ হলেও এ বার প্রজ্ঞাকে টিকিট দেয়নি বিজেপি। প্রসঙ্গত, মোদী ক্ষমতায় আসার পরে মালেগাঁও বিস্ফোরণের এক নম্বর অভিযুক্ত প্রজ্ঞাকে ২০১৫ সালে ক্লিন চিট দিয়েছিল জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)। তদন্তকারীদের যুক্তি ছিল, সাধ্বীর বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
কিন্তু আদালত সেই যুক্তিতে সায় দেয়নি। আদালত বলেছিল, এটা মেনে নেওয়া কঠিন। কারণ বিস্ফোরণে সাধ্বীর মোটরসাইকেল ব্যবহার হয়েছিল। তবে তুলনায় কঠোর মহারাষ্ট্র কন্ট্রোল অব অর্গানাইজ়ড ক্রাইম অ্যাক্ট (মোকা) আইনে দোষী সাব্যস্ত না করে আনলফুল অ্যাকটিভিটিজ প্রিভেনশন অ্যাকটিভিটজ় (ইউএপিএ) ধারায় শাস্তি ঘোষণা করে আদালত। প্রায় ন’বছর জেলবন্দি থাকার পরে ২০১৭ সালে জামিনে মুক্তি পেয়েছিলেন প্রজ্ঞা। তার পরেই বিজেপিতে যোগ দেন তিনি।
২৬/১১ সন্ত্রাসে ধৃত একমাত্র জীবিত পাক জঙ্গি কসাভের বিরুদ্ধে মামলায় সরকারি আইনজীবী হিসাবে আদালতে সওয়াল করেছিলেন উজ্জ্বল নিকম। এ বার তাঁকে মুম্বই উত্তর-মধ্য কেন্দ্র থেকে প্রার্থী করেছে বিজেপি। গত রবিবার নিকমকে আক্রমণ করতে গিয়েই ওই করকরেকে হত্যার প্রসঙ্গ টেনে আনেন মহারাষ্ট্র বিধানসভার বিরোধী দলনেতা বিজয়। বলেন, “নিকম কংগ্রেসকে অপদস্থ করতে বিরিয়ানি প্রসঙ্গ তুলেছিলেন। কেউ কি কসাভকে বিরিয়ানি দেবে? পরে নিজের মুখেই প্রকাশ্যে সত্যটা স্বীকার করে নিয়েছিলেন নিকম। উনি কেমন আইনজীবী? উনি এক জন বিশ্বাসঘাতক।” প্রসঙ্গত, জেলের মধ্যে কসাভ বিরিয়ানি খেতে চাইছেন বলে আদালতে দাবি করেছিলেন উজ্জ্বল। তা নিয়ে সেই সময় দেশ জুড়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল। বিচার পর্বের শেষে কসাভের ফাঁসির সাজা হয়েছিল। ২০১২ সালে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের আমলেই কার্যকর হয়েছিল সেই সাজা।